ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কির্সতঙ অ্যাডভেঞ্চার

সিয়াম সারোয়ার জামিল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কির্সতঙ অ্যাডভেঞ্চার

সিয়াম সারোয়ার জামিল: বন্ধু সোহানের কাছে শুনেছিলাম, কির্সতঙের কথা। এটাই নাকি চিম্বুক রেঞ্জের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। বান্দরবানের অন্যান্য ট্রেকিং স্পটগুলোর চেয়ে কির্সতঙ অনেকটা দুর্গম। যে কারণে এটি সেভাবে পরিচিত না। অফিস থেকে পেট ব্যথার ছুটি নিয়ে হুট করেই উঠে পড়লাম রাতের বাসে, সঙ্গে শফিক ও রোহান। ঢাকা থেকে সোজা চকোরিয়া। ভোরবেলা চকোরিয়ার আলীকদম থেকে অটো নিয়ে পানবাজার নেমে গেলাম। সেখানে বন্ধু থুই চিঙের ঘরে কোনোরকম খেয়ে ফের দৌড়। থুই চিঙের দুই বন্ধুসহ বাইকবহর নিয়ে ছুটতে থাকলাম ছয়জন।

টানা পনেরো মিনিট বাইক চালাতেই চোখে পড়লো আর্মি ক্যাম্প। অনুমতি নিয়ে ফের এগোতে থাকলাম। পথের সৌন্দর্য চোখ ধাঁধিয়ে দিলো! তিন কি.লো. এগিয়ে ডানে ‘তেরো কিলোমিটার’ নামক এলাকা দিয়ে ঢুকে পড়লাম সাতশ' ফুট উঁচু আদিবাসি গ্রাম মেনিকিউ পাড়াতে। এরপরেই মেনিয়াংপাড়া। সেদিকেই এগিয়ে গেলাম। এটা প্রায় উনিশ ফুট উঁচু। সেখানেই রুংরাং পাহাড়। এর পাশেই খেমচং পাড়া, যেটা কির্সতঙের সবচেয়ে কাছের বসতি। খেমচং পাড়াকেই বেজ ক্যাম্প হিসেবে বানালাম। থুই চিঙের পরিচিত একজনের বাসায় জায়গা মিললো আমাদের। দুর্দান্ত পাহাড়ি খাবার খেয়ে এখানেই কাটিয়ে দিলাম একটা রাত।
 


পরদিন ভোরবেলা নতুন মনোবল নিয়ে শুরু করলাম যাত্রা। দুপুরের আগেই পৌঁছে গেলাম কির্সতঙের চূড়ায়। তারপর যে সৌন্দর্য দেখলাম, তা ক্লান্তি ভুলিয়ে দিলো অল্পতেই। চূড়ার সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। বনের সবুজ, বুনো ঘ্রাণ, চারপাশে মেঘের নাচন, হঠাৎ পাখপাখালির অচেনা সুরে ডেকে ওঠা– সবকিছুর মোহময় আবেশ যেন অন্য জগতে নিয়ে গেলো আমাদের। দুই হাজার নয়শ পঞ্চাশ ফুট উঁচুতে উঠে মনে হলো পৃথিবীকে পদতলে রেখে দাঁড়িয়েছি। স্বর্গ জয়ের অদ্ভুত অনুভূতি তখন। মনে পড়লো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পঙ্‌ক্তি: ‘পাহাড়-চূড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল/আমি এই পৃথিবীকে পদতলে রেখেছি/এই আক্ষরিক সত্যের কছে যুক্তি মূর্ছা যায়।’ সুনীল বাবু বেঁচে থাকলে তাকে জিজ্ঞেস করতাম, এ লাইন তিনটি কি তিনি কির্সতঙের অভিযান শেষ করে লিখেছিলেন? এমন খাপেখাপ মিলে গেল কী করে?

ফিরতি পথ ধরতেই ঢেউ তুলে দমকা হাওয়া দেহমন জুড়িয়ে দিয়ে কানে কানে ফিসফাস করে বলল, ‘এত দ্রুত চলে যাবে?' মনে মনে বললাম, ‘এমন স্বর্গ কে ছেড়ে যেতে চায়? তবু হ্যাঁ, ফিরে তো যেতেই হবে। নিজেকে শান্ত করি আমি।  ফেরার সময় কষ্ট নিয়েই পাহাড় চূড়ার দিকে তাকাচ্ছিলাম। মনে মনেই বলছিলাম, বিদায় কির্সতঙ। অন্য সময়, ফিরবো। রাখবো মাথা তোমার চরণে।
 


যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া যেতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথেই চকোরিয়া। এখান থেকে পরবর্তী গন্তব্য আলীকদম। এখানে চান্দের গাড়িতে যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৮০/৯০ টাকা। মাঝে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প আছে। অনুমতি নিয়ে ভ্রমণের বর্ণনা অনুযায়ী যেতে হবে। 

যেখানে থাকবেন: কির্সতঙ পৌঁছাতে হলে আপনাকে একরাত পথে কোনো আদিবাসি পড়ায় অবস্থান করতে হবে। পানবাজার থেকে অনেক গাইড পাওয়া যাবে। কোনো আদিবাসির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন না। তারা দরিদ্র হলেও খুবই অতিথিপরায়ণ। মনে রাখবেন, সেখানে কেবল তারাই আপনার আপনজন।
 


সতর্কতা
১) অবশ্যই জুতো পরবেন। পোশাকের বিষয়ে সচেতন থাকবেন।  

২) কোনো অপচনশীল বর্জ্য ফেলে আসবে না। 

৩) যথেষ্ট পানি নিয়ে যাবেন সঙ্গে। সবসময় পানি সহজলভ্য না।

৪) গাইডের বিষয়টি আর্মি ক্যাম্পে অবহিত করে যাবেন। এমন গাইড ঠিক করবেন, তিনি যেন অবশ্যই এলাকাটা ভালো চেনেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জানুয়ারি ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়