কিশোরগঞ্জের দুই রাজাকারের ফাঁসি
নিজস্ব প্রতিবেদক : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের মোহাম্মদ মোসলেম প্রধান ও পলাতক সৈয়দ মো. হুসাইনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী।
দুই আসামির বিরুদ্ধে থাকা ছয়টি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, ৫ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও বাকি অভিযোগগুলোতে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
পলাতক মো. হুসাইনকে গ্রেপ্তার করে সাজা কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিতে বলা হয়েছে।
ছয় অভিযোগের মধ্যে তৃতীয় অভিযোগে নিকলীর গুরুই গ্রামে নির্বিচারে ২৬ জনকে হত্যার দায়ে সর্বসম্মতভাবে দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।
চতুর্থ অভিযোগে নিকলীর নানশ্রী গ্রামে হিন্দু নারীদের ধর্ষণ ও হিন্দুদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর ৩৪ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আসামি হুসাইনকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নারীদের টার্গেট করে ব্যাপক হারে ধর্ষণের ঘটনাকে আদালত গণহত্যার সমতুল্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছেন।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, দুই আসামি একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তাদের মধ্যে হুসাইন নিকলি থানা এলাকায় ‘রাজাকার দারোগা’ হিসেবে এবং মোসলেম প্রধান নিকলি ইউনিয়নে রাজাকার কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
হুসাইনের বড় ভাই সৈয়দ মো. হাসান ওরফে হাছেন আলীকেও যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃতুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। ভাইয়ের মত হাছেন আলীও পলাতক।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘রায়ে আমরা অত্যন্ত খুশি। সফলভাবে কাজ করতে পেরেছি।’
তুরিন আফরোজ বলেন, ‘এই রায়ে প্রথমবারের মত যুদ্ধকালীন ধর্ষণকে গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। একাত্তরের গণধর্ষণকে আদালত ‘জেনোসাইডাল রেপ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, ওই চার্জে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।’
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল ও আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। মক্কেলের সঙ্গে পরামর্শ করে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
এর আগে গত ৭ মার্চ এই দুজনের বিরুদ্ধে মামলায় শুনানি শেষ হয়। গত বছরের ৯ মে এই দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর এই দুজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬টি অভিযোগ আনা হয়। দুজনের মধ্য মোহাম্মদ মোসলেম প্রধান কারাগারে রয়েছেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ এপ্রিল ২০১৭/মেহেদী/শাহনেওয়াজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন