ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কুমিরের বাচ্চার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কুমিরের বাচ্চার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ

আলী আকবর টুটুল, করমজল থেকে ফিরে : পূর্ব সুন্দরবনের করমজলে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র থেকে ৬২টি কুমিরের বাচ্চা নিখোঁজ ও মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বসানো হয়েছে ১০ টি সিসি ক্যামেরা এবং টহলের জন্য বনপ্রহরিদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

রোববার রাতে প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরের বাচ্চা শিকার করতে আসা একটি চিতা বিড়ালকে গুলি করে হত্যা করেছেন বনকর্মীরা।

এদিকে বারবার প্রজনন কেন্দ্রে কুমির নিখোঁজ ও মৃতদেহ উদ্ধার এবং চিতা বিড়ালকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদিরা।

বন বিভাগের দাবি, শনিবার রাতে প্রজনন কেন্দ্রের প্যানে (কৃত্রিম পুকুর) হানা দিয়ে  কুমিরের ১৯টি বাচ্চা মেরে ফেলে  সুন্দরবনের মাংসভোজী কোনো হিংস্র প্রাণী চিতাবিড়াল। কুমিরের এই ১৯টি বাচ্চার খণ্ডিত দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তবে রোববার রাতে আরারো প্যানে কুমিরের বাচ্চা খেতে এসে এবার ক্যামেরা ট্রাপিংয়ে ধরা পড়ে গুলিতে মারা গেলো মাংসভোজী এক হিংস্র প্রাণী চিতাবিড়াল (লেপার্ট ক্যাট)।

এ নিয়ে গত ৫ দিনের ব্যবধানে ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা চুরি ও মাংসভোজী কোনো হিংস্র প্রাণীর আক্রমণে মারা গেলো আরো ১৯টি কুমিরের বাচ্চা।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রজনন কেন্দ্রের দুটি প্যান থেকে ৪৩ কুমিরের বাচ্চা চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় পাচারকারীরা ৪৩টি কুমিরের বাচ্চার মধ্যে ৯টি কুমিরের বাচ্চা মেরে পরিকল্পিতভাবে ফেলে রেখে যায়।

ওই চুরির ঘটনায় জড়িত থাকায় করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বনকর্মী (লস্কর) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত ও জাকির হোসেন নামের এক অস্থায়ী কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। প্রজনন কেন্দ্রে এই দুইজনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত পাচারকারীদের নামে দাকোপ থানায় মামলা করা হয়।

কুমিরের বাচ্চা পাচারের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রর কুমিরের বাচ্চাগুলোর প্যানে শনিবার রাতে হানা দেয় মাংসভোজী হিংস্র প্রাণী চিতাবিড়াল। মেরে ফেলে ১৯টি কুমিরের বাচ্চা।

এই ১৯টি কুমিরের বাচ্চা মারা যাবার বিষয়টি নাশকতা বা অন্য কিছু তা জানতে প্যানগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি ক্যামেরা ট্রাপিং করা হয়। রোববার রাতে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ে ধরা পড়ে মাংসভোজী এক হিংস্র প্রাণী চিতাবিড়াল (লেপার্ট ক্যাট)। পরে গুলি করে মেরে ফেলা হয় চিতাবিড়ালটিকে।

তদন্ত কমিটির প্রধান সুন্দরবন চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামান বলেন, চিতাবিড়াল ধরা পড়ায় আমাদের ধারণা কুমিরের বাচ্চাগুলো বিড়ালের আক্রমণে মারা গেছে। বাচ্চা নিখোঁজ ও মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায়  প্রজনন কেন্দ্রের যে প্যান থেকে বাচ্চাগুলো নিখোঁজ হয়েছিল সেখান থেকে বাকি বাচ্চাগুলো পাশের একটি প্যানে স্থানান্তর করা হয়। পাশাপাশি প্যানটির বিশেষ নিরাপত্তার জন্য নেট দিয়ে চারদিক ঘিরে রাখা হয় এবং ১০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়।



তবে চিতাবিড়ালের আক্রমণে কুমিরের বাচ্চাগুলোর মৃত্যু হয়েছে কিনা তা জানতে কুমিরের মৃত বাচ্চাগুলোর মধ্যে দুটি মৃতদেহ ঢাকায় ও আরো দুটি মৃতদেহ খুলনা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

কুমিরের বাচ্চা চুরি হওয়ার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ১ কর্মচারীকে বরখাস্ত ও অপর এক অস্থায়ী বন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

পরিবেশবাদী মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল জলিল বলেন, বিলুপ্তপ্রায় নোনাপানির কুমির চুরির ঘটনায় আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত থাকতে পারে। এ ঘটনায় জড়িত দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে।

সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম বলেন, বন বিভাগের কোনো কর্মী গুলি করে বন্যপ্রাণী হত্যা করতে পারে না। তাদের বন্যপ্রাণী চিতাবিড়াল হত্যা করা ঠিক হয়নি। প্রথম বার যখন ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা চুরি হয় তখন নিরাপত্তা জোরদার করা উচিত ছিল।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, মৃত উদ্ধারকৃত কুমিরের বাচ্চা ও মেরে ফেলা চিতাবিড়ালকে ময়নাতদন্তের জন্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে ও প্রাণিসম্পদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টের ভিত্তিতে যদি কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকে তাহলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, সুন্দরবনের কুমিরের বিলুপ্তপ্র্রায় লবণপানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র এই বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি। চুরি বা পাচার হবার পর বর্তমানে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে রোমিও নামে ১টি পুরুষ, জুলিয়েট ও পিলপিল নামের ২টি মা কুমির ও ২১৫টি বাচ্চা কুমির রয়েছে।





রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আলী আকবর টুটুল/রিশিত/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়