ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

কুমিল্লার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে ফাইনালে রংপুর

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কুমিল্লার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে ফাইনালে রংপুর

ক্রীড়া প্রতিবেদক : লিগ পর্বে ১২ ম্যাচে ৯ জয়। ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার সবার ওপরে থেকে প্লে-অফ (শেষ চার) নিশ্চিত করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। অথচ তারাই খেলতে পারছে না বিপিএলের ফাইনাল।

ফাইনালে যাওয়ার দুটি সুযোগ ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সামনে। কিন্তু একটিও কাজে লাগাত পারেনি তারা। প্রথম কোয়ালিফায়ারে ঢাকার কাছে ৯৫ রানের পরাজয়ের ধাক্কা সামলাতে পারেনি কুমিল্লা। ভয় ঢুকেছিল ক্রিস গেইল-ব্রেন্ডন ম্যাককালামদের রংপুর রাইডার্সকে নিয়ে। সেই ভয়ে কুমিল্লা হয়েছে কাবু। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রংপুরের কাছে ৩৬ রানের পরাজয়ে বিপিএলের পঞ্চম আসরের ফাইনালে ওঠা হলো না তৃতীয় আসরের চ্যাম্পিয়নদের।

মাঠের পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই! সঙ্গে আছে ভাগ্যের করুণ খেলা! বাইলজ অনুযায়ী, বৃষ্টি কারণে ম্যাচ পণ্ড হলে পয়েন্ট তালিকায় ওপরের দিকে থাকা দল চলে যাবে ফাইনালে। কিন্তু বিপিএলের আয়োজকরা ‘বিপিএলের স্বার্থে’ ম্যাচ রিজার্ভ ডেতে নেওয়ার আবেদন জানায়। ক্রিকেটীয় মনোভাব ও চেতনার কথা ভেবে খেলতে রাজী হয় কুমিল্লা। বৃষ্টিতে শিরোপার স্বপ্ন ধুয়ে যাওয়ার যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, রিভার্ভ ডেতে ম্যাচ নেওয়ায় তা আবারো জেগে ওঠে। আত্মবিশ্বাসী রংপুর এক রাতের ব্যবধানে দুই দলের পার্থক্য স্পষ্ট করল মাঠের খেলায়।

ঘোষণা ছিল, বৃষ্টির কারণে যেখান থেকে ম্যাচ বন্ধ হয়েছিল, সেখান থেকেই আবার শুরু হবে। ৭ ওভারে ১ উইকেটে ৫৫ রান নিয়ে আজ মিরপুরে ম্যাচ শুরু করে রংপুর। শেষ ১৩ ওভারে ১৩৭ রান তোলে দলটি। তাও মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে। সব মিলিয়ে ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে রংপুরের রান ১৯২।

আগের দিন গেইল চোট পেয়ে আউট হওয়ার পর থেকে রংপুরের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন জনসন চার্লস। ২৬ বলে ৪৬ রানের অপরাজিত ইনিংসটিকে আজ সেঞ্চুরিতে রূপ দেন চার্লস। ডানহাতি এই ওপেনার ৬৩ বলে করেন ১০৫ রান। ৩৪ বলে ফিফটি পাওয়া চার্লস পরবর্তী পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ২৯ বলে। আগের দিনের ৪ চার ও ৪ ছক্কার সঙ্গে আজ আরো ৫টি চার ও ৩টি ছক্কা হাঁকান।

আজ ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি রংপুরের। প্রথম বাউন্ডারি পেতে ১৩ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাদেরকে। গ্রায়েম ক্রেমারের বলে এগিয়ে এসে লং অন দিয়ে ছক্কা মেরে বাউন্ডারির খাতা খোলেন ম্যাককালাম। এক বল পর চার্লস দিনের প্রথম ওভার বাউন্ডারির স্বাদ পান।

মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের করা ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে দলের শতরান পূর্ণ করেন চার্লস। পরববর্তী ২৩ বলে ১৫০ ছুঁয়ে ফেলে রংপুর। মূলত ১৩ থেকে ১৭ ওভারে পাল্টে যায় রংপুরের স্কোর। ৫ ওভারে ৭২ রান যোগ করে মাশরাফির দল। এই ৩০ বলের কুমিল্লার বোলাররা ছিল নিরুপায়। ৩০ বলে মাত্র ৭টি ডট বল! দুজন মিলে ৯টি ছক্কা হাঁকান, যার ৭টি ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ব্যাট থেকে। ম্যাককালামের তোপে পুড়েছেন আল-আমিন। তার করা ১৭তম ওভারে মোট ১৯ রান তোলেন ম্যাককালাম।

৪ রানে দিন শুরু করা ম্যাককালাম হাসান আলীর বলে ছক্কা মেরে ৩৩ বলে বিপিএলে নিজের প্রথম ফিফটি তুলে নেন। এরপর ব্যাট হাতে ঝড় তুলে ১৩ বলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ২৬ রান। হাসান আলীর বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৪৬ বলে ৭৮ রান করেন নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক।

টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লপ কুমিল্লার বোলিং। প্রথম কোয়ালিফায়ারে ঢাকা ডায়নামাইটস করেছিল ১৯১। আজ রংপুর করে ১ রান বেশি। বল হাতে হাসান আলী আবারো ধারাবাহিক। ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে নেন এক উইকেট। স্থানীয় বোলাররা ছিলেন খরুচে। সাইফউদ্দিন, আল-আমিন ও মেহেদী হাসান প্রত্যেকেই ৪ ওভারে করে বোলিং করে দেন যথাক্রমে ৩৮, ৪২ ও ৪৪ রান। লেগ স্পিনার ক্রেমার ৩ ওভারে দেন ৩৮ রান।

বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল দারুণ জুটির। ওভার প্রতি ৯.৬ করে রান তুলতে হতো তামিম ইকবালদের। পাওয়ার-প্লের সুবিধা কাজে লাগিয়ে দলের হয়ে শুরুর কাজটা করে দিয়েছিলেন তামিম ও লিটন ফাস। পাওয়ার প্লেতে কুমিল্লার রান ২ উইকেটে ৫৭। মাশরাফির বলে আউট হলে থামে তামিমের ঝড়। ১৯ বলে দেশসেরা ওপেনার করেন ৩৬ রান। ১৮৯.৪৭ স্ট্রাইক রেটে রান করলেও তামিম ফিরে যাওয়ার পর রানরেট এক লাফে নেমে যায়।

তামিমের পর টিকতে পারেননি ইমরুল কায়েস। দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে কুমিল্লা শিবিরে বড় ধাক্কা দেন নাজমুল ইসলাম অপু। বাঁহাতি স্পিনারের বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন ১০ রান করা মালিক। তামিমের সঙ্গে ভালো শুরুর পর রান তুলতে পারেননি লিটন। ১৩তম ওভারে উদানার বলে তুলে মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২৮ বলে ৩৯ রান করা লিটন।

এরপর জস বাটলার ও মারলন স্যামুয়েলস ২৬ বলে ৪১ রানের জুটি গড়ে কুমিল্লাকে কিছুটা আশা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু রবি বোপারার এক ওভারে বাটলার ও বোপারা আউট হলে রংপুরের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। বাটলার ১৬ বলে ২৬ এবং স্যামুয়েলস ৩০ বলে ২৭ রান করেন।

৪ উইকেটে ১৩৭ থেকে ১৫৬ রানে যেতেই বাকি ৬ উইকেট হারায় কুমিল্লা। রুবেল ৩৪ রানে ৩টি এবং উদানা ২৪ রানে ২ উইকেট নেন। ২ ওভারে ১৭ রানে ২টি উইকেট নেন বোপারা। সব মিলিয়ে সম্মিলিত আক্রমণে রংপুরের ৩৬ রানের জয় নিশ্চিত হয়।

ম্যাচ হেরে শিরোপার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। কিন্তু বিগ বাজেটের দল কুমিল্লা মাঠের খেলায় ক্রিকেটীয় যে মনোভাব দেখিয়েছে, তাতে হাততালি তাদের প্রাপ্য!



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ডিসেম্বর ২০১৭/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়