ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে এসব কী হচ্ছে!

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে এসব কী হচ্ছে!

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা: দেশের প্রথম রাজধানীখ্যাত মেহেরপুর মুজিব নগরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি দীর্ঘ বছরকাল ধরেই অচলাবস্থায় পতিত। এই সড়কে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।

এরসঙ্গে যোগ হয়েছে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর দুইজেলার বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্ব। রাস্তা ভাঙ্গার খোঁড়াযুক্তি তুলে তারা প্রায়ই বাস চলাচল বন্ধ করে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে আরো কয়েকগুণ। গত এক বছর ধরেই এই ভোগান্তি চললেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই।

গাংনীর স্কুল শিক্ষক আফজাল হোসেন প্রতিদিন কুষ্টিয়া থেকে যাতায়াত করেন কর্মস্থলে। তিনি জানান, মাত্র ৫৮কিলোমিটার দুরত্বের কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে তাকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দুইজেলার বাস মালিক সমিতি অযৌক্তিক গোয়ার্তুমি ও নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের কারণে নানা খোঁড়া যুক্তিতে হরহামেশাই অনির্দিষ্টকালের বাস বন্ধের ঘোষণা দিয়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলেন। মাঝপথে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে দুর্ভোগে ফেলা এদের কাছে নিত্তনৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দুইজেলার বাস মালিক সমিতির সৃষ্ট নিত্যদিনের ভোগান্তি নিয়েই চলাচল করছেন তারা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নাকের ডগায়ই এসব হচ্ছে, কিন্তু কারোরই কোন প্রতিক্রিয়া নেই। প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের মুখে সাধারণ মানুষ নিরুপায়।

এখানকারই গৃহবধু নূর মুর্শেদা। তিনি বৃদ্ধা নানীর অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে জরুরী একটি সিএনজি ভাড়া করে কুষ্টিয়া থেকে গিয়েছিলেন মেহেরপুরের কাথুলি গাড়াবাড়ি গ্রামে। সেখান থেকে ফেরার সময় অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘মেহেরপুর-কাথুলি সড়কে ৫/৬জনের একদল লাঠিয়াল বাহিনী সিএনজির পথরোধ করে সাইড করায়। সিএনজি ভাড়া করে আসার অপরাধে প্রকাশ্যে তারা লাঠি উঁচিয়ে ৫শ’ টাকা দাবি করেন এবং বলেন, কারও কিছু করার নেই, এটা মেহেরপুর মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত। অবস্থা দেখে সাথে থাকা দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাৎক্ষনিক উদ্ধারের জন্য মেহেরপুর সদর থানায় ফোন করেও কোন সাহায্য পাইনি। শেষে দাবিকৃত টাকা দিয়ে সেখান থেকে মুক্ত হই।’

খলিসাকুন্ডি গ্রামের সিএনজি চালক মতিয়ার আলী জানান, সরাসরি বাস চলাচল না থাকায় স্বল্প আয়ের মানুষ অসুস্থ্ রোগী কিংবা গর্ভবতী মায়েদের বহণ করতে তাৎক্ষনিক সিএনজি বা অটোরিকশার সুবিধা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই মেহেরপুর বাস মালিক সমিতি নিযুক্ত লাঠিয়াল বাহিনীর অত্যাচারে। তারা প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে লাঠিসোটা নিয়ে পাহাড়া বসিয়ে ছোট ছোট এসব যানবাহন চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরেই এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।

‘রাস্তা ভাঙ্গার কারণে দুই জেলার মালিক সমিতি কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে প্রায় বছর খানেক। এতে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি হচ্ছে’ স্বীকার করেন বাস চালক আব্দুল মজিদ। তিনি  এর সমাধান দাবি করেন।

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক ৫৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সওজ’র ২৮ কিলোমিটার। মিরপুর উপজেলার ভাঙ্গা বটতলা থেকে খলিশাকুন্ডি পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার অনেক পুরনো হওয়ায় ছোট খাটো গর্ত ছিল, যা মেরামতের কাজ সিংহভাগই শেষের পথে। তাছাড়া এই রাস্তা  চলাচলে এতটাই অযোগ্য নয় যে পরিবহণ বন্ধ রাখতে হবে। সকল প্রকার যানবাহন চলাচল করছে নির্বিঘ্নে, অথচ কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আন্ত:জেলা সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। দুইজেলার মালিক সমিতি নিজস্ব দ্বন্দ্বের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে এটা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে জনসাধারণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’

কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে কিছু সমস্যা থাকলেও আমরা সরাসরি বাস চলাচলে আন্তরিক। মেহেরপুর মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে বারংবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা কিছুতেই রাজি নয়।’

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো: জহির রায়হান বলেন, ‘মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের সাথে কথা হয়েছে দুই জেলার মালিক সমিতির নেতাদের নিয়ে বসে এর সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

মেহেরপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ গোলাম রসুল বলেন, ‘মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সরাসরি আন্ত:জেলা বাস চলাচল দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ আছে। রাস্তা খারাপ ছিল বলে দুই জেলার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নিয়েই সরাসরি বাস বন্ধ করা হয়েছে। তবে এখন যেহেতু রাস্তা মেরামত হয়েছে, এখন আমরা দুই জেলার মালিক সমিতি বসে আবার সরাসরি বাস চলাচল শীঘ্রই শুরু করব।’

রাস্তায় অটো বা সিএনজি চলাচলে বাধা দেওয়া বা টাকার বিনিময়ে চলতে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা প্রশাসনের নির্দেশেই আমাদের শ্রমিকেরা কিছুদিন করেছিল। এখন আর কোন শ্রমিক সেটা করে না। সব রাস্তায় আনসার নিয়োগ দেওয়া আছে। তারাই এগুলো দেখাশুনা করে।’

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনায় ইতোপূর্বেই মেহেরপুর বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছি। দুই একদিনের মধ্যেই আমরা দুই জেলার নেতাদের নিয়ে একটা সমন্বয় করব যাতে সরাসরি আন্ত:জেলা বাস চলাচল শুরু করা যায়।’

 

 

রাইজিংবিডি/কুষ্টিয়া/২ জুলাই ২০১৮/কাঞ্চন কুমার/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়