ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কুষ্টিয়ার ৬০ ভাগ চালকল উৎপাদনে যায়নি

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৯, ২৭ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কুষ্টিয়ার ৬০ ভাগ চালকল উৎপাদনে যায়নি

কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া : এমনিতেই ধানের সংকট, তার উপর টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে দেশের অন্যতম বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে অস্থিরতা নেমে এসেছে।

কমতে থাকা চালের দাম গত এক সপ্তাহে ফের বাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে চালের দাম আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

কুষ্টিয়ার খাজানগরে চালকল রয়েছে ৩৭৫টি। এর মধ্যে অটোমেটিক চালকলের সংখ্যা ৩২টি। বাকি সব হাসকিং মিল। এর মধ্যে কয়েকজন মিল মালিক পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তাদের প্রতিষ্ঠান নিলাম হয়ে গেছে। বাকি যেসব হাসকিং মিল চালু আছে, এর ৬০ ভাগ চলতি বছর উৎপাদনে আসতে পারেনি।

পুঁজি সংকট, ধানের দাম বৃদ্ধি ও শ্রমিক না পাওয়া- উৎপাদনে আসতে না পারার বড় কারণ বলে জানিয়েছেন ওই সব মিল মালিকরা। এ সব মিল উৎপাদনে না আসায় চালের বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন চাল ব্যবসায়ীরা।

খাজানগর এলাকার রাসেল রানা রাইস মিল, মুন্সীগঞ্জ রাইস মিল ও ভেড়ামারা রাইস মিলসহ দুই শতাধিক মিল চলতি মৌসুমে উৎপাদনে আসতে পারেনি।

রাসেল রানা রাইস মিলের মালিক জিল্লুর রহমান জানান, এ বছর ধানের দাম অনেক বেশি। বেশি দামে ধান কিনে চাল তৈরি করে তেমন লাভ হয় না। এ ছাড়া ব্যবসায় লোকসান খেয়ে পুঁজি সংকটে আছেন তিনি। এর উপর শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ সব কারণে তিনি চলতি মৌসুমে চাল উৎপাদনে যেতে পারেননি।

মিল মালিকদের সহযোগিতা করার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

একই কথা বলেছেন মুন্সীগঞ্জ রাইস মিল ও ভেড়ামারা রাইস মিলের মালিক মাসুদ রানা ও হাজী ফজর আলী। তাদের ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে বলে জানান। ধানের দাম গত বছরের তুলনায় প্রতি মণে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। এ অবস্থায় ধান কিনে চাল তৈরি করতে খরচ বাড়ছে। এতে তাদের পোষাচ্ছে না। এ ছাড়া ধানও ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না। খাজানগর মোকামে এ বছর চাল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে গতবারের তুলনায়।

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নতুন করে বেকায়দায় পড়েছেন মিল মালিকরা। বেশির ভাগ মিলে ধান শুকানো ও চাল উৎপাদনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এর সঙ্গে  জড়িত শ্রমিকরাও পড়েছেন বেকায়দায়। কাজ না থাকলে তাদের আয়ও থাকে না।

জুলাই মাসের শুরুতে চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর ফলে কুষ্টিয়া মোকামে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমে যায়। তবে সেই কমার প্রবণতা আর নেই, বরং এক সপ্তাহে দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

চালকল মালিক হাজী লিয়াকত হোসেন জানান, অর্ডার থাকলেও ধান সিদ্ধ ও শুকাতে পারছেন না। বৃষ্টির কারণে চাতাল বন্ধ রয়েছে। এমন অবস্থা আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকলে চালের বাজার ফের বেড়ে যাবে।

খাজানগর মোকামে মোটা চালের বাজার কিছুটা কম থাকলেও মিনিকেট চাল ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৩০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫৬০ টাকায়। আগের তুলনায় ৫০ টাকা বেশি। একইভাবে কাজললতা, আঠাশ চালের দাম প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান জানান, চলতি মৌসুমে ৬০ ভাগ হাসকিং মিল মালিক চাতাল বন্ধ রেখেছেন ধান সংকটের কারণে। এরও প্রভাব বাজারে পড়ছে। যে পরিমাণ চাল ২০১৬ সালে খাজানগর মোকামে উৎপাদন হয়েছিল, এর থেকে অনেক কম উৎপাদন হচ্ছে। 



রাইজিংবিডি/কুষ্টিয়া/২৭ জুলাই ২০১৭/কাঞ্চন কুমার/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়