ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কৃষি ঋণে বেসরকারি ব্যাংকের নজর কম

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৯, ২৯ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কৃষি ঋণে বেসরকারি ব্যাংকের নজর কম

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি ঋণে বেসরকারি ব্যাংকের তুলনামূলক নজর কম। সরকারি ব্যাংকগুলোর প্রায় ৮ শতাংশ ঋণ কৃষিতে, সেখানে বেসরকারি ব্যাংকের ২ শতাংশের কম। যদিও কৃষিতে খেলাপি ঋণ তুলনামূলক অনেক কম।

সোমবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘অ্যাড্রেসিং এগ্রিকালচার থ্রো ভ্যালু চেইন ফাইন্যান্সিং- হাউ টু অ্যাট্রাক্ট ব্যাংকস’ শীর্ষক কর্মশালায় এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। ২৪টি ব্যাংকের তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিআইবিএম।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ ও গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (ডিএসবিএম) মো: মহিউদ্দিন সিদ্দিকী। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন, বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য শেখ নাজিবুল ইসলাম; বিআইবিএমের সহকারি অধ্যাপক তানভীর মেহদী; বিআইবিএমের সহকারি অধ্যাপক রেক্সোনা ইয়াসমিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক ইসমত কোয়ায়িশ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈচিত্র্য নেই কৃষি খাতের ব্যাংক ঋণে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কৃষি ঋণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শষ্য উৎপাদনে মোট কৃষি ঋণের ৫৯ শতাংশ দেওয়া হচ্ছে। আর প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রিতে ১০ শতাংশ, মৎস্যে ৯ শতাংশ, দারিদ্র্য বিমোচনে  মাত্র ৬ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতি ক্রয়ে দেওয়া হয়েছে ১ শতাংশ ঋণ। আর শষ্য গুদামজাতকরণে এ হার শূন্যের কোটায়। কৃষি খাতের এ বৈচিত্র্যহীন ঋণ বিতরণের কারণে কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে না।

উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষিতে ভ্যালু চেইন ফ্যাইন্যান্সের ওপর জোরারোপ করতে বলা হয়েছে বিআইবিএমের প্রতিবেদনে। এছাড়া কৃষিতে তুলনামূলক খেলাপী ঋণ কম বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিআইবিএম এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস.এম.মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত একটি আলাদা গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছে। যাতে কৃষি খাতে সঠিকভাবে কৃষি ঋণ বিতরণ হয়। কৃষি ঋণে ভ্যালু চেইন ব্যবস্থা এখনও চালু হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। যাতে দ্রুত এ ধরণের ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ‘দেশের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি কৃষি। এ চালিকা শক্তিকে সক্রিয় ও সচল রাখতে হলে ব্যাংকের অর্থায়ন জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ঋণ দিতে হবে।’

পূবালী ব্যাংকের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘উৎপাদন, আমদানি এবং বাজারজাতকরণ ও রপ্তানিসহ যাবতীয় বিষয় এখন কৃষি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব দিক বিবেচনা করে ঋণ দিতে হবে। বড় ঋণ গ্রাহকরা নিয়ে ফেরত দিতে চায় না। আর কৃষি ঋণ ফেরত দেয়। এজন্য খেলাপির পরিমান তুলনামূলক কম।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, ‘বড় ঋণের ১০ শতাংশ খেলাপি হয়ে যায়, এটি নিয়ে ব্যাংকগুলোর ভাবনা কম। কিন্তু মোট ঋণের দুই শতাংশ কৃষি ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন ধরণের আপত্তি। যা থাকা উচিত নয়।’

বেসিক ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ. মজিদ বলেন, ‘কৃষিকে আরও এগিয়ে নিতে হলে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব উপখাতকেই অর্থায়ন করতে হবে। উৎপাদন, বাজারজাতসহ সংশ্লিষ্ট সব উপখাতকে গুরুত্ব দিয়ে অর্থায়ন করতে হবে।’

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, ‘কৃষি খাতের চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। বাকি সামান্য কিছু চাহিদা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি ঋণ বিতরণ হচ্ছে ৯ শতাংশ সুদে কিন্তু ঋণ পরিচালন ব্যয় ১০ শতাংশের বেশি। এজন্য বছর শেষে মূলধন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। যা সরকার পূরণ করছে।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ অক্টোবর ২০১৮/নাসির/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়