ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘কেউ দায়ভার নিতে চায় না’

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১১, ২২ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘কেউ দায়ভার নিতে চায় না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের উপ-কমিটি নিয়ে চলমান বিতর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলটির দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বলেছেন, উপ-কমিটি নিয়ে এখন কি সব দায়ভার আমার? কেউ দায়ভার নিতে চায় না। আমি কি দলে এতই ক্ষমতাশালী যে আমার ইনিশিয়ালে কমিটি ঘোষণা হবে?

সোমবার বিকেলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তিনি এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মাদারীপুর থেকে কয়েক দিন পর ফিরে আজ বিকেল সাড় ৪টায় তিনি কয়েকশ কর্মী-সমর্থক পরিবেষ্টিত হয়ে সভানেত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতারা। তাদের তোপের মুখে সব উপ-কমিটি বাতিল করার ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটের দিকে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে আসেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি কিছুক্ষণ কার্যালয়ে অবস্থান করে সরস্বতী পূজা পরিদর্শনের জন্য দলের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াকে নিয়ে কার্যালয় ত্যাগ করেন। কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার আগে ওবায়দুল কাদের বাইরে অপেক্ষারতদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা এভাবে স্লোগান দিও না। তোমরা এভাবে আমাকে ঘিরে ধরে স্লোগান দিলে মিডিয়া লিখে দেয়, আমি অবরুদ্ধ। আমি বিক্ষোভের মুখে পড়েছি। ওরা গতকাল এলো। আমি তাদের সব কথা বসে শুনেছি। তারা আনন্দ মিছিল করে চলে গেল, আর মিডিয়া লিখে দিল আমি অবরুদ্ধ। তোমরা এসব করো না, সতর্ক থাকো। আমি কালকেই সব বলে দিয়েছি।

এদিকে আবদুস সোবহান গোলাপ কার্যালয়ে প্রবেশ করে দপ্তর রুমে বসে কাজ শুরু করেন এবং কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন। পরে ওবায়দুল কাদের কার্যালয় ত্যাগ করলে তিনি দপ্তর রুমে বসে একান্ত আলাপচারিতায় বলেন, আমি কি দলে এতই ক্ষমতাধর হয়ে গেলাম। আমার ইনিশিয়ালে কমিটি অনুমোদন হবে। আমি কেবল প্রেসে পাঠাতে পারি। কমিটি অনুমোদন করবেন মাননীয় নেত্রী আর  কাদের ভাই। এগুলো তো খসড়া কমিটি। আর মিডিয়া লিখে দিল আমি ভয়ে কার্যালয়ে আসছি না। আমি তো তিন দিনের ছুটি নিয়ে এলাকায় গেছি। আজ অফিস করব শুনে সবাই এসেছে। আমি তো কাউকে আসতে বলিনি।

আজ বিভিন্ন সময়ে কার্যালয়ে আসেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মুকুল বোস, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম,  বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ের সামনে পদবঞ্চিত বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতাদের তোপের মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তিন নেতা। এরা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।

২০তম জাতীয় সম্মেলনের পর নভেম্বরে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদের জন্য জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহের জন্য ছাত্রলীগের প্রাক্তন দপ্তর সম্পাদক নাসিম আল মোমিন রুপক ও সভাপতির কার্যালয়ের স্টাফ সাঈদ আহমেদকে দায়িত্ব দেন।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রত্যেকটি বিভাগভিত্তিক সম্পাদকীয় পদের সহযোগী হিসেবে পাঁচজন করে সহ-সম্পাদক থাকার নিয়ম আছে। তবে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদগুলো বিভাগভিত্তিক নয়। তাই এ পদগুলোর বিপরীতে কোনো সহ-সম্পাদক থাকবে না। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাদ দিলে পদ দাঁড়ায় ১৯টি।

সহ-সম্পাদকের ব্যাপারে বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করে ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘পার্টি অফিসের সামনে যার সঙ্গে ধাক্কা লাগে তিনিই বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক। কিন্তু তারা যে উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক, এটা বলেন না। এই সহ-সম্পাদকের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে অনেকে নিজ জেলায় অনেক হুমকি-ধামকিও মারে। তাই আগামী সম্মেলনে সহ-সম্পাদকের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে।’

দলের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়ে গত ২৬ অক্টোবর ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০০ করার যে বিধান রয়েছে, আমরা তার বাইরে যাব না। এই কমিটির সদস্য সংখ্যা একশ’র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।’

গত বছরের ৩০ জুন সভাপতির কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা তো পুরোনোদের চিনি। এবার নতুনদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছি। এখানে আমাদের একটা ক্যাটাগরি আছে। যারা অন্যান্য শাখা বা কমিটিতে আছেন তারা কিন্তু উপ-কমিটিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি থাকতে পারবেন না। কিন্তু মেম্বার (কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য) থাকতে পারবেন। যারা অন্য কমিটিতে আছেন, এমন কেউ অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি (সহ-সম্পাদক) হতে পারবেন না। এই অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ১০০ অতিক্রম করবে না, সর্বমোট ৯৫ জনের মতো হবে।’

সহ-সম্পাদকদের দায়িত্ববণ্টনের ব্যাপারে বলেন, ‘আমাদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে তিনজন করে সহ-সম্পাদক সংযুক্ত থাকবেন। এ বিষয়ে আমরা আজকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রচার এবং দপ্তর- এই দুটি বিভাগে পাঁচজন করে থাকবেন। তথ্য-গবেষণায় চারজন থাকবেন। এভাবে আমরা চিন্তা-ভাবনা করেছি। এরই আলোকে আমরা পরবর্তী মিটিংয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করব। হয়তো সেক্ষেত্রে আরো একটি মিটিং করে চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আমরা আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে পরামর্শ করে ধারাবাহিকভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশ করব।

সম্পাদকীয় উপ-কমিটির সদস্যদের সীমা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উপ-কমিটির সদস্য পদে ২০ থেকে ৩০ জন থাকবেন। এখানে পার্লামেন্টের মেম্বাররা থাকবেন পাঁচ থেকে সাতজন। অনেকে আছেন আওয়ামী লীগমনস্ক, আমাদের আদর্শের লোক; তারাও স্থান পাবেন। আর ১৯টি উপ-কমিটির মধ্যে ১৬টি উপ-কমিটিতে তিনজন করে সহ সম্পাদক থাকবে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জানুয়ারি ২০১৮/নৃপেন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়