ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কোরবানির ঈদে মৌসুমী পেশা ‘শান ম্যান’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ২৮ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কোরবানির ঈদে মৌসুমী পেশা ‘শান ম্যান’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম: শ্রমজীবী মানুষের হাজার পেশার ভিড়ে আরেকটি পেশা ‘শান ম্যান’। পুরোনো দা, বটি, শীলপাটা, ছুরিতে শান দেয়া তাদের কাজ। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের আগে তাদের বেশি চোখে পড়ে।

বাসার আশপাশের অলি-গলিতে আপনার সাথে শান ম্যানদের দেখা হতে পারে কিংবা পরিচিত হতে পারে তাদের কণ্ঠস্বর- ‘এই দাও ধার, বটি ধার, শীলপাটা ধার, লাগবো…’। এই কমন বাক্যটি চেঁচিয়ে বলতে থাকে তারা। অনেকে এজন্য হ্যান্ড মাইকও ব্যবহার করে। রাজধানীতে প্রায় শতাধিক শান ম্যান রয়েছে। বছরজুড়ে তারা অবহেলিত থাকলেও, কোরবানির ঈদের আগে গৃহিণীদের কাছে তাদের কদর বেড়ে যায়। কারণ এই ঈদে গরু জবাইয়ের জন্য দা, ছুরি, চাপাতিতে ধার থাকা জরুরি। তারা বটি শান দিতে নেয় ৫০ টাকা, দা ৭০ টাকা, ছুরি ২০ টাকা, চাপাতি ৬০ টাকা, শীলপাটা ১০০ টাকা। স্থানভেদে টাকার অঙ্কের পার্থক্য হতে পারে।

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার রয়মান আলী (৫০)। দশ বছর ধরে তিনি এ পেশায় রয়েছেন। থাকেন রাজধানীর মুগদা এলাকায়। তিনি রাজধানীর সেগুন বাগিচা, মালিবাগ, গুলশান, বনানীতে মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে দা-বটিতে শান দেন। রয়মান আলী রাইজিংবিডিকে জানান, মাত্র তিন হাজার টাকায় শান দেয়ার মেশিনটি কিনেছিলেন তিনি। বর্তমানে শান দিয়ে তিনি মাসে আয় করেন প্রায় দশ হাজার টাকা। এই টাকায় তার সাত সদস্যের পরিবার নির্ভরশীল।

হবিগঞ্জের একই এলাকার আরেক শান ম্যান আহমেদ ফকির (৪২)। তিনি আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করলেও, গত চার বছর ধরে ঢাকায় দা, বটি, শীলপাটা ধার দিচ্ছেন। তিনি রাইজিংবিডিকে জানান, তার বন্ধুর কাছ থেকে মাত্র দুই দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি মেশিন চালানো শিখেছেন। পরে তিনি সাইকেলের অব্যবহৃত জিনিস দিয়ে নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন শান মেশিন। শান মেশিন তৈরিতে তিনি ব্যবহার করেছেন সাইকেলের হ্যান্ডেল, চেইন, সিট এবং পাথার ও কাঠ। শান মেশিন তৈরিতে তার খরচ পড়েছে প্রায় দুই হাজার টাকা।

 


আহমেদ ফকির মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে কাজ করেন। নিজের উপস্থিতি জানান দেন হ্যান্ড মাইকে। তিনি সাধারণত ধানমন্ডি, কলাবাগান, আজিমপুর, পুরোনো ঢাকায় কাজ করেন। তিনি রাইজিংবিডিকে জানান, তিন সময়ে আমাদের চাহিদা বেশি- রমজানের ঈদ, কোরবানির ঈদ ও গ্রামে ধান কাটার মৌসুমে। কোরবানির ঈদের দুইদিন আগে শান ম্যানদের কদর বেড়ে যায়। তখন অনেকে লাইন দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। এ সময় তার আয় দৈনিক দুই-তিন হাজার টাকা পরযন্ত হয়।

রাজধানীর নবাবপুর এলাকার বাসিন্দা জুয়েল রানা (৪০)। পারিবারিক বড় অনুষ্ঠানের আগে তিনি ঘরের দা, বটি শান ম্যানদের হাতে দিয়ে নেন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, আগে গ্রামে পুরাতন দা, বটি শান দিতে সাপ্তাহিক হাটে কামারের কাছে যেতে হতো। এখন এরা বাসায় বাসায় এসে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দেশে হাজার হাজার বেকারের ভিড়ে এটি কম পুজিঁতে দারুণ কর্মসংস্থান।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ আগস্ট ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়