ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ক্যাম্পাসে কাঁচাকলা ভর্তা

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ২৪ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্যাম্পাসে কাঁচাকলা ভর্তা

ছবি: ওয়াহিদুজ্জামান রাসেল

ছাইফুল ইসলাম মাছুম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনেকেই বেড়াতে আসেন। অনেকে বাইরে থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে আসেন। আবার অনেকে আসেন চমকপ্রদ খাবারের খোঁজে। কারো কাছে প্রিয় মধুর ক্যান্টিনের চা কিংবা রস মালাই। কারো প্রিয় টিএসসির কোল্ড কফি, মুহসীন হলের বিরিয়ানি। শুনে অবাক হবেন, অনেকেই এই ক্যাম্পাসে আসেন কাঁচাকলা ভর্তা খেতে। ইদানিং ক্যাম্পাসে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কাঁচাকলা ভর্তা।

শেখ কান্তা রেজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসে তার প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে কাঁচাকলা ভর্তা। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রথম কাঁচাকলা ভর্তা খাই ফার্স্ট ইয়ারের মাঝামাঝি। এই ভর্তা যে এভাবে খাওয়া যেতে পারে জানতামই না! বানানোর দৃশ্য দেখলেও মুখে পানি চলে আসে। কাঁচাকলার কুঁচি, ধনেপাতা, তেঁতুল, কাসুন্দি আরও অনেক কিছু দিয়ে যখন ভর্তা বানানো হয় আশেপাশের সবার লোভাতুর দৃষ্টি চোখে পড়ে। এতো বেশি পরিমাণে একদিন কাঁচাকলা ভর্তা খেয়েছিলাম যে, কাছের বন্ধুরা আমাকে কয়েকদিন ‘কাঁচকলা’ বলে ডাকতে শুরু করেছিল।’

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতায় ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী অপু মোস্তফা। অপু মোস্তফা বলেন, ‘আমাদের গ্রামীণ জনপদে জনপ্রিয় খাবারের নাম কাঁচাকলা ভর্তা। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি, কিন্তু কাঁচাকলা ভর্তা খাইনি এমন খুব কমই হয়েছে।’

মিমিয়া সাব্বির স্কয়ার নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ‘গ্রামে কাচাঁকলা ভর্তা খেতাম। শহরের মানুষ তো কাঁচাকলার ভর্তা চেনেই না। বছরখানেক আগে জানলাম, ঢাবিতে কাচাঁকলা ভর্তা পাওয়া যায়। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। একদিন এসে দেখি ঘটনা সত্য। সেই থেকে সময় পেলেই এখানে এসে কাঁচাকলা ভর্তা খাই। ভালোই লাগে।’


বছরজুড়েই রয়েছে কাঁচাকলা ভর্তার জনপ্রিয়তা। বিক্রেতাদের লাভও হচ্ছে বেশ। তাই কাঁচাকলা ভর্তার বিক্রেতা সংখ্যাও ক্যাম্পাসে দিন দিন বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি থেকে কলা ভবনের স্বল্প দূরত্বে কাঁচাকলা বিক্রেতার সংখ্যা আট জন। ডাকসু ক্যান্টিনের সামনে পাঁচ বছর ধরে কাঁচাকলা ভর্তা বিক্রি করছেন বিল্লাল হোসেন (২৭)। তিনি সকালে ভ্যানে কাঁচাকলা ভর্তা বিক্রি করেন। তিনি জানান, দৈনিক প্রায় পনেরো শ টাকার কাঁচাকলা ভর্তা বিক্রি করেন। যদিও ভর্তার পাশাপাশি তিনি মৌসুমী বিভিন্ন ফলও ভ্যানে রাখেন। ভর্তার দাম ২০টাকা।

ক্যাম্পাসে আব্দুল্লাহ (১৮) কাঁচাকলা ভর্তা বিক্রি করছেন আজ প্রায় দুই বছর। তার বাবা মোহাম্মদ আলী (৪৫) দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে কাঁচাকলা ভর্তা বিক্রি করেছেন। ভালো লাভ হওয়ায় বাবার দেখাদেখি তিনি নিজেই একটি ভ্যান সংগ্রহ করে এই ব্যবসায় নেমে পড়েন। আব্দুল্লাহ প্রতিদিন ভোরে কারওয়ান বাজার থেকে কাঁচাকলা ও অন্যান্য কাঁচামাল সংগ্রহ করেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তাকে ক্যাম্পাসে পাওয়া যায়। আব্দুল্লাহ রাইজিংবিডিকে জানান, তার অধিকাংশ গ্রাহক বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণী।

কাঁচাকলা ভর্তার গুণ: কাঁচাকলা ভর্তা কেবল স্বাদে অসাধারণ নয়, বেশ স্বাস্থ্যকর। ভিটামিন, মিনারেলসহ রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, কাঁচাকলা শরীর ঠাণ্ডা রাখে। বল বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এটি কফনাশক, অম্লপিত্ত দাহ, ক্ষয় ও বায়ুনাশক। কাঁচাকলায় আয়রন বেশি থাকায় শরীরে রক্ত বাড়ায়। শক্তি বৃদ্ধি করে। যাদের পেটের অসুখ তারা কাঁচাকলা ভর্তা বা ঝোল খেতে পারেন। যাদের পাকস্থলী বা অগ্ন্যাশয়ে আলসার আছে, তারা কাঁচাকলা সেদ্ধ বা ভর্তা খেতে পারেন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুলাই ২০১৭/তারা

 

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়