ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ক্যারিবীয় ঝাঁজ টের পেল বাংলাদেশ

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১০, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্যারিবীয় ঝাঁজ টের পেল বাংলাদেশ

ইয়াসিন হাসান, সিলেট থেকে : গুমোট আবহাওয়া। নেই রৌদ্রের ঝলকানি। পুবের সূর্য মধ্যগগণ ঘুরে পশ্চিমের পথে অস্তগামী। পুরোদিন মেঘের আড়ালেই থেকে গেল সৌরজগতের সবচেয়ে গোলাকৃতি সূর্য। তাইতো সিলেটের চা-বাগানের কোলে গড়ে ওঠা স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচাকেও মনে হয় ধু ধু বালুচর! কোনো প্রাণ নেই। নেই কোনো শেকড়ের টান! আজ সবই যেন ওলট-পালট। ঠিক যেমনটা বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স। স্বাগতিকদের বাজে দিনে জ্বলে উঠল ক্যারিবীয়রা।

বিবর্ণ ব্যাটিং আর নির্বিষ বোলিং। দুইয়ে মিলিয়ে পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই। শারীরিক ভাষাও আলগা, ফিল্ডিংয়েও নিরামিষ। তাইতো ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে হার দিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশের সিরিজ যাত্রা।

সিলেটে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ হেরেছে ৮ উইকেট। টস জয়ের পর ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের। এক ওভার বাকি থাকতেই ১২৯ রানে শেষ বাংলাদেশের ইনিংস। ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল তিনটা ছাড়িয়েছে কেবল। ইনিংসের ১১তম ওভারের খেলা চলছিল। পঞ্চম বলে এক রান হতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়। ৫৫ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বিশাল জয়। উইকেট ও বলের হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রেকর্ড ব্যবধানে জয়।

 



লক্ষ্য মাত্র ১৩০। দু্ই ওপেনারের উদ্বোধনী জুটিতে ৩.২ ওভারে আসল ৫১ রান। ওয়ানডেতে দুই সেঞ্চুরি পাওয়া শাই হোপ ১৬ বলে তোলেন ফিফটি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দ্রুততম এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তৃতীয় দ্রুততম। পাওয়ার প্লে’তে সফরকারীরা পায় ৯১ রান, যা পাওয়ার প্লে’তে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। ম্যাচ জিততে আর কিছু লাগে?

১১ বলে ১৮ রান করে এভিন লুইস ফিরলেও হোপ ঝড় তোলেন ২২ গজের ক্রিজে। ২৩ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় তোলেন ৫৫ রান। আউট হন মাহমুদউল্লাহর বলে। তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৩.১ ওভারে ৩২ রান তুলে নিকোলাস পুরাণ (১৭ বলে ২৩) ও কিমো পল (১৪ বলে ২৮) জয় নিশ্চিত করেন।

বোলিং ছিল হতশ্রী। চার বোলার ওভারপ্রতি ১৩ রানের বেশি দিয়েছেন। মেহেদী হাসান মিরাজ দ্বিতীয় ওভারে তিন ছক্কা হজম করে দেন ২৩। সাকিব ৩.৫ ওভারে খরচ করেন ৩২। আবু হায়দার রনি ও মুস্তাফিজুর রহমান প্রত্যেকে ১ ওভারে ব্যয় করেন ১৫। ম্যাচ হারতে আর কিছু লাগে?

 



এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ইনিংসের শুরুতেই কার্লোস ব্রাফেটের হাতে জীবন পান তামিম। ওশানে টমাসের ফুলার লেংথ বল আগেই খেলতে গিয়ে শর্ট মিড অফে ক্যাচ দেন। ক্যারিবীয় অধিনায়ক কঠিন ক্যাচটা ধরতে ব্যর্থ। চতুর্থ বলে টমাসকে চার মেরে রানের খাতা খোলেন লিটন দাস।

শুরুতে বাউন্ডারি না আসলেও দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের রানিং বিটুইন দ্য উইকেট ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু তাদের জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। শূন্য  রানে জীবন পাওয়া তামিম বাঁহাতি পেসার শেলডন কটরেলের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে ক্যাচ দেন ব্রাফেটের হাতে। শর্ট বল উড়াতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করেন দেশসেরা ওপেনার (৭ বলে ৫)।

পরের ওভারে টমাসকে উড়াতে গিয়ে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মিড অনে লিটনের (৫ বলে ৬) ক্যাচ। ব্রাফেট সহজ ক্যাচ নিয়ে দলকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন। স্কয়ার কাটে দারুণ চারে সৌম্য সরকার রানের খাতা খুলেছিলেন ঠিকই। কিন্তু বেশিক্ষণ তার ব্যাট হাসেনি। কটরেলের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন সৌম্য (৪ বলে ৫)।

 



৩১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতে ব্যাকফুটে গেলেও অধিনায়ক সাকিবের ব্যাটে রানে ফেরে বাংলাদেশ। উইকেটের চারপাশে দুর্দান্ত সব শট আর ঝুঁকিপূর্ণ বাউন্ডারিতে হাসতে থাকে সাকিবের ব্যাট। টমাসকে পরপর দুই বাউন্ডারি মেরে শুরু। এরপর কটরেলকে সীমার বাইরে পাঠান শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে। টমাসের পর পঞ্চম ওভারে সাকিব ও মুশফিক তিন বাউন্ডারিতে তোলেন ১৩ রান।

কিন্তু পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আরেকটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৩ বলে ৫ রান করে পাওয়েলের থ্রোতে রান আউট মুশফিকুর রহিম। ৬ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোর ৫৪। পঞ্চম উইকেটে সাকিবকে নিয়ে জুটি বাঁধেন মাহমুদউল্লাহ। সাকিব যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করছিলেন, মাহমুদউল্লাহ ছিলেন তার বিপরীত। উইকেটে থিতু হতে সময় নিচ্ছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু তার ইনিংসটি শেষ হয় বাজে শটে।

কটরেলের শর্ট বল থার্ডম্যান অঞ্চলে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১৯ বলে ১২ রান করা মাহমুদউল্লাহ। সামনে ড্রাইভ দিয়ে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ নেন শাই হোপ। ৭৩ রানে দলের অর্ধেক ব্যাটসম্যান সাজঘরে।

 



অধিনায়ক সাকিব লড়ে যাচ্ছিলেন একপ্রান্ত আগলে রেখে। ষষ্ঠ উইকেটে আরিফুল হককে সঙ্গে নিয়ে ৩০ রানের জুটি গড়েন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ১৬তম ওভারে ফ্যাবিয়েন অ্যালেনকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ১৮ বলে ১৭ রান করা আরিফুল। দলে ফিরে বড় স্কোরের দারুণ মঞ্চ পেয়েছিলেন আরিফুল। কিন্তু সুযোগটি কাজে লাগাতে ব্যর্থ ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

ওই অ্যালেনকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মেরে সাকিব ৪০ বলে ক্যারিয়ারের অষ্টম টি-টোয়েন্টি হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। পরের ওভারে সাইফউদ্দিনকে ফেরান ব্রাফেট। সাকিব হাফ সেঞ্চুরির পরও ব্যাট চালিয়ে যান। কটরেলের স্লোয়ার ডেলিভারি মিড অন দিয়ে ছক্কা মেরে সাকিব ইনিংস বড় করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু পরের বলে সাকিবকে ফিরিয়ে বাঁহাতি পেসার কটরেল বাংলাদেশ শিবিরে চতুর্থ আঘাত করেন। ওখানেই শেষ বাংলাদেশের বড় ইনিংসের স্বপ্ন।

৪৩ বলে ৬১ রান করা সাকিব ফেরার সময় বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ১২২। এরপর ৭ রান যোগ করতে শেষ দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১৯ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ১২৯। ৮ চার ও ২ ছক্কায় সাকিব সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি সাজান। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হওয়া কটরেল বল হাতে ২৮ রানে নেন ৪ উইকেট। পলের পকেটে গেছে ২ উইকেট।

 



ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও ক্যারিবীয় দাপট।  টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ড দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তারা। কেন তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, কেন তারা টি-টোয়েন্টি ভালো বোঝে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে কেন তাদের চাহিদা বেশি- সবই আজ সিলেটে স্পষ্ট হলো। ক্যারিবীয় ঝাঁজ যে বেশ ‘কড়া’, তা ভালোভাবেই টের পেল বাংলাদেশ।

সিলেটে এসে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে হার। সিরিজ জিততে হলে ঢাকায় কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে বাংলাদেশকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ১৯ ওভারে ১২৯ (তামিম ৫, লিটন ৬, সৌম্য ৫, সাকিব ৬১, মুশফিক ৫, মাহমুদউল্লাহ ১২, আরিফুল ১৭, সাইফউদ্দিন ১, মিরাজ ৮, আবু হায়দার ১*, মুস্তাফিজ ০; কটরেল ৪/২৮, পল ২/২৩, ব্রাফেট ১/১৩, অ্যালেন ১/১৯, টমাস ১/৩৩)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১০.৫ ওভারে ১৩০/২ (লুইস ১৮, হোপ ৫৫, পুরাণ ২৩*, পল ২৮*; মাহমুদউল্লাহ ১/১৩, সাইফউদ্দিন ১/১৩)।

 


রাইজিংবিডি/সিলেট/১৭ ডিসেম্বর ২০১৮/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়