ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

খুলনায় দুটি স্কুল ভবন পরিত্যক্ত, মাঠে পাঠদান

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৩, ৮ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুলনায় দুটি স্কুল ভবন পরিত্যক্ত, মাঠে পাঠদান

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘোনা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চুকনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দুটি একাডেমিক ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ায় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি প্রতিষ্ঠান দুটির উল্লিখিত দুটি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।

এদিকে, একাডেমিক ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ক্লাস করতে হচ্ছে তাদের। দ্রুত ভবন নির্মাণের দাবি করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

জানা গেছে, একসময়ের প্রত্যন্ত এলাকা মাগুরাঘোনা গ্রাম। এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় এলাকার মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় পূর্ব-পশ্চিম লম্বা একটি টিনশেড ভবন নির্মাণ করে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম চলতে থাকে। এরপর দিন দিন এই প্রতিষ্ঠানটি লেখাপড়ার দিক দিয়ে সুনাম অর্জন করতে থাকে। একপর্যায়ে ১৯৯৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উত্তর-দক্ষিণ লম্বা করে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা ভবন নির্মিত হয়। কিন্তু তাতেও শ্রেণিকক্ষের সংকট পূরন না হলে বিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে একতলা ভবনের উপরে আরো তিনটি কক্ষ নির্মাণ করে একাডেমিক কার্যক্রম চালানো হয়। এরই মধ্যে ভবনের নিচের তলার ছাদ ও দেয়ালের অংশ বিশেষ ধসে পড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতে গত ৩০ এপ্রিল ক্লাস চলাকালীন অবস্থায় হঠাৎ করেই ভবনের বিম ও ছাদের বেশ কিছু অংশ ধসে পড়ে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয় ও কয়েকটি বেঞ্চ ভেঙে যায়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে পুরো ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। এরপর থেকে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছে।

এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার কুন্ডু বলেন, কয়েক দিন ধরে পুরাতন টিনশেড ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। ঐচ্ছিক বিষয়গুলোর ক্লাস হচ্ছে খোলা মাঠে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে পারছে না। হঠাৎ ভবনটি ব্যবহার অনুপোযোগী হওয়ায় আমরা পড়েছি চরম বিপাকে। কীভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হবে, আর খোলা আকাশের নিচে কতদিন ক্লাস করানো যাবে, সামনে বৃষ্টির মৌসুম- এসব নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।

বিষয়টি সম্পর্কে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. শাহনাজ বেগম বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দ্রুত নতুন ভবনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপরদিকে, উপজেলার চুকনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ একটি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে চলছে ছাত্রীদের অধিকাংশ শ্রেণির পাঠদান। শিক্ষার্থীরা প্রচন্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে বাধ্য হয়ে অংশ নিচ্ছে ক্লাসে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নারীশিক্ষা নিশ্চিত করতে এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর সদরে ১৯৭০ সালে বালিকা বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। সে থেকে চলতে থাকে আনুষ্ঠানিক একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৫ শতাধিক ছাত্রী অধ্যায়নরত। শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছে ২০ জন। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ বিদ্যালয়ের পুরাতন ওই ভবনটির জরাজীর্ণ হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

বিদ্যালয়ে বর্তমানে ব্যবহার উপযোগী ৮টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। যা শিক্ষার্থী অনুপাতে খুবই কম। তাছাড়া বিদ্যালয়ে ছাত্রী মিলনায়তন, নামাজ এবং প্রার্থনার কক্ষের সংকট রয়েছে। সর্বোপরি শ্রেণিকক্ষের অভাবে চরম সংকটাপন্নভাবে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। নিয়মিত পাঠদানে অধিকাংশ শ্রেণির পাঠদান হচ্ছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে খোলা আকাশের নিচে। আর শিক্ষার্থীরা প্রচন্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে বাধ্য হয়ে পাঠ গ্রহণ করছে। এতে করে ছাত্রী-অভিভাবকসহ এলাকাবাসী নানা শংঙ্কার মধ্যে রয়েছে। তাদের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে একটি নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হোক।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি প্রহ্লাদ ব্রহ্ম, অভিভাবক সদস্য রবীন্দ্রনাথ রায়সহ এলাকাবাসী ছাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত একটি নতুন ভবন নির্মানের দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের সহকারী প্রকৌশলী গৌতম রায় এ প্রতিবেদককে জানান, ওই বিদ্যালয় নতুন ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। জরাজীর্ণ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/খুলনা/৮ মে ২০১৯/ মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়