ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খেলাপি ঋণ পর্যালোচনায় ৫ সদস্যের কমিটি হচ্ছে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খেলাপি ঋণ পর্যালোচনায় ৫ সদস্যের কমিটি হচ্ছে

কেএমএ হাসনাত : খেলাপি ঋণ আদায়ে করণীয় নির্ধারণে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের চিন্তা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর নামকরণ করা হবে ‘খেলাপি ঋণ পর্যালোচনা কমিটি।’ এর আগে এ বিষয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর এক বৈঠকে খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। সে সময় একটি টাস্কফোর্স গঠনের চিন্তা করা হয়। তবে এখন টাস্কফোর্স গঠন না করে খেলাপি ঋণ পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘পর্যালোচনা কমিটির প্রধান থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর। এ ক্ষেত্রে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামিলকে প্রধান করা হতে পারে। কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং ব্যাংকিং খাত থেকে দু’জন করে ৪ জন প্রতিনিধি থাকবেন। কমিটির কাজ হবে কী করে খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করা যায় তার কৌশল নির্ধারণ করা। একই সঙ্গে তারা খেলাপি ঋণ যাতে আর না বাড়ে তার উপায়ও অনুসন্ধান করবেন। এছাড়া কী কারণে বিগত সময়ে এত বেশি পরিমাণে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে তাও খতিয়ে দেখবে পর্যালোচনা কমিটি।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠন সম্পর্কিত একটি ফাইল অর্থমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই টাস্কফোর্স গঠন না করে কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে এবং সব কিছুই ঠিকঠাক মতো চলছে।’

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র জানায়, ঋণ পর্যালোচনা কমিটির প্রধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে আহমেদ জামিলকে। তার আওতায় অর্থ বিভাগ থেকে দু’জন যুগ্মসচিব এবং দুটি সরকারি ব্যাংক থেকে এমডি পদমর্যাদার দু’জনকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হবে। প্রাথমিকভাবে কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে পাঁচ। তবে প্রয়োজন হলে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন পেশ করবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এখন ৪৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ২২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর আগে সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ৩৪৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১২৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ব্যাংকগুলোর দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে একমাত্র জনতা ব্যাংক ছাড়া বাকি পাঁচটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে। আলোচ্য সময়ে জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩০৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এটি আগের প্রান্তিকের তুলনায় ২ হাজার ৮৬৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বেশি। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বাকি পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে গত ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১ হাজার ৫৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ১৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৬০০ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

একই সময়ে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ৮৫৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে রূপালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৯৭০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

গত ডিসেম্বর শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ৩৩৮ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।

আলোচ্য সময়ে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ২১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৮২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

গত ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) খেলাপি ঋণ কমেছে ১৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৪৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা, ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৮৩২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা; সেখানে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। একই সময়ে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে আরো প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই হিসাব ধরলে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হবে দেড় লাখ কোটি টাকা; যা আমাদের জাতীয় বাজেটের এক-চতুর্থাংশ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়