ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে রাজনৈতিক শক্তির ঐক্যের আহ্বান ফখরুলের

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ১০ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে রাজনৈতিক শক্তির ঐক্যের আহ্বান ফখরুলের

খুলনা বিভাগীয় জনসভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে রাজনৈতিক শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ করতে দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে নির্দলীয় সরকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

শনিবার বিকেলে স্থানীয় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের তৃতীয় পর্যায়ের কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনা বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটি মিথ্যা মামলায় পরিকল্পিত রায় দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা হয়েছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য তিনি যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন এবং ভোট চুরি করে আওয়ামী লীগ পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে সুগম করা।

বেগম জিয়ার কারাজীবনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ এক মাস একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারাগারের সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তারপরও তার মনোবল হারায়নি। তিনি স্বৈরাচারকে বিদায় দিতে সব রাজনৈতিক শক্তির ঐক্যের জন্য কারাগার থেকে আহ্বান জানিয়েছেন। বেগম জিয়ার মুক্তির দাবির আন্দোলনে সারাদেশে এ পর্যন্ত ৫ হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে প্রস্তুতের প্রতিশ্রুতি এ আন্দোলনের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।

তিনি পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন, গণতন্ত্র ও জনগণের প্রতিপক্ষ হওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের পথে বাধা না হতে পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আইন-শৃংখলার বর্ণনা দিয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, গত ৯ বছরে বিএনপির অনেক কর্মীকে গুম ও খুনের শিকার হতে হয়েছে। গুলি করে অনেককে পঙ্গু বানানো হয়েছে। জনসমর্থনহীন সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের জামানত থাকবে না।

খুলনা-যশোর রোডের দুর্দশার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী মিডিয়ার সামনে উন্নয়নের জোয়ার এবং দিনকে রাত, রাতকে দিন বানান। তিনি দুঃখের সঙ্গে বলেন, যশোর রোডের দুর্ভোগ এড়াতে নড়াইল সড়ক দিয়ে খুলনায় এসে পৌঁছেছি।

চালের দাম প্রসঙ্গে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কেজিপ্রতি ১০ টাকায় বিক্রি চালের প্রতিশ্রুতি থাকলেও এখন তা ৬০-৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্য আটবার বৃদ্ধি, সারের মূল্য তিনগুণ ও গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। শেয়ার বাজার লুট ও ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা বিদেশে পাঠিয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের বিনাভোটে ১৫৪ জনকে নির্বাচিত করে সংসদকে কলুষিত করেরে। এ সংসদ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি, সংসদে জবাবদিহিতা নেই, মন্ত্রীরা টাকা চুরি করলেও জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ নেই, জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত বিরোধী দলে বসিয়ে রেখে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করা হচ্ছে।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। অতিথি ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধূরী, সহ-সভাপতি বরকত উল্লাহ বুলু, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, সাবেক হুইপ মশিউর রহমান, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ মেহেদী রুমি, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুজিবর রহমান সরোয়ার, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক সোহরাব হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা মাসুদ অরুণ, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, অমলেন্দু দাস, কবির মুরাদ ও ড. ফরিদুল ইসলাম।

বিভাগীয় বক্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন খুলনা জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা, খুলনা সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, বাগেরহাট জেলা সভাপতি আব্দুস সালাম, নড়াইল জেলা সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা সভাপতি অহেদুল ইসলাম বিশ্বাস, সাতক্ষীরা জেলা সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান, যশোর জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাবেরুল ইসলাম সাবু, ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নগর বিজেপি সভাপতি অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু ও নগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম ও প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল হাসান বাপ্পি।

এর আগে বিভাগীয় জনসভা ঘিরে কড়া অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। শনিবার ভোর থেকে নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক, পুরাতন যশোর রোড, পিকচার প্যালেস মোড় ও কেডি ঘোষ রোডে বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাঁজোয়া গাড়ি অবস্থান নেয়।

বিএনপি নেতারা জানান, পুলিশ দলীয় কার্যালয়ের সামনের কেডি ঘোষ রোডের পশ্চিম পাশে সমাবেশের অনুমতি দিলেও সকাল থেকে সেখানে মঞ্চ তৈরি ও মাইক টানাতে বাধা দেয়। তবে দুপুর ১টার পর থেকে মঞ্চ তৈরি ও মাইক টানানো শুরু হয়। তারা অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে বিএনপির ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে ।



রাইজিংবিডি/খুলনা/১০ মার্চ ২০১৮/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়