ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গনি মিয়ার হাট এখন ‘ডিজিটাল গরুর হাট’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৪৬, ২৭ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গনি মিয়ার হাট এখন ‘ডিজিটাল গরুর হাট’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম: পুরান ঢাকার এক সময়ের জনপ্রিয় গনি মিয়ার হাটে এখন আর নিয়মিত গরু আসে না। আসবে কীভাবে? হাটই তো নিয়মিত বসে না। কোরবানির ঈদে মাত্র একবার সেখানে গরুর হাট বসে। পুরান ঢাকার শতবর্ষী গনি মিয়ার গরুর হাট এখন আগের নামে নেই। মুখে মুখে এর নতুন নাম ‘রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ গরুর হাট’।

বর্তমানে হাটের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সোয়ারী ঘাটের পাশের খালি জায়গায় ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান আমলে গনি মিয়ার গরুর হাট বসতো। কিন্তু ঐ জায়গায় ১৯৬৭ সাল থেকে রহমতগঞ্জ ফ্রেন্ডস সোসাইটির পরিচালনায় গরুর হাট বসে। গরুর হাটের আয়ে চলে এই ক্লাব। ক্লাবটি প্রতি বছর প্রিমিয়ার লীগেও অংশ নেয়।’

ইমতিয়াজ হামিদ সবুজের কথার প্রমাণ পাওয়া যায় গরুর হাটটির ব্যানার, ফেস্টুন, লিফলেটেও। কোথাও গনি মিয়ার হাটের নাম-গন্ধ নেই। এমনকি হাটের অনেক গরু বিক্রেতারাও গনি মিয়ার হাট সম্পর্কে অবগত নন। কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার হাফিজুল খাঁ (৫৫)। দশ বছর ধরে এই হাঁটে গরু বিক্রি করতে আসেন। এবার নিজের পাঁচটি গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, এই হাটের নাম গনি মিয়ার হাট কিনা জানা নেই। তবে রহমতগঞ্জের হাট নামেই তিনি জানেন।

গনি মিয়ার হাটের বয়স শতবর্ষ হলেও, নতুন নামে গরুর হাটটির বয়স পঞ্চাশপূর্তি হতে চলেছে এ বছর। নতুন নামে পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে ‘ডিজিটাল গরুর হাট’ করার ঘোষণা দিয়েছেন আয়োজকেরা। গরুর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য রাখছেন ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধাও। হাটের পরিচালক ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ বলেন, শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরাই প্রথম গরুর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ‘ডিজিটাল গরুর হাট’ উপহার দিচ্ছি। আমাদের গরুর হাটে থাকছে, ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক নিজস্ব বিদ্যুত ব্যবস্থা, জাল টাকা শনাক্তকরন মেশিন, নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা। এছাড়া পাইকারদের জন্য থাকা-খাওয়া ব্যবস্থা, ক্রেতাদের জন্য রয়েছে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থাও।
 


কথিত আছে এক সময় ঢাকার গরুর হাটের সেরা গরু উঠত গনি মিয়ার গরুর হাটে। পুরান ঢাকার বাসিন্দারা কোরবানির পছন্দের গরু কিনত এই হাট থেকে। হাটের ৯০ শতাংশ ক্রেতা ঢাকার বাসিন্দা। ইসলামপুর, চকবাজার, মৌলভীবাজারের বনেদি ব্যবসায়ী ছাড়াও রায়সাহেব বাজার, লালবাগ, বংশাল, সুরিটোলা, কসাইটুলি, পোস্তগোলা, উর্দু রোড, রথখোলা এলাকার ঢাকার বাসিন্দারা গনি মিয়ার হাট থেকে গরু কেনেন।

গরুর হাটটির অবস্থান পুরান ঢাকার চক বাজারের পাশেই। হাটের পাশেই রয়েছে হাজি সেলিম কলেজ, রহমতগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি ক্লাব ভবন।

গনি মিয়ার হাটের পেছনের গল্প: ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ গ্রন্থের লেখক নাজির হোসেনের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে ঢাকার নবাব আবদুল গনি এখানে একটি হাট বসিয়েছিলেন। সেজন্য হাটটি ‘গনি মিয়া’র হাট নামে পরিচিত হয়েছে। হাটটি প্রতিষ্ঠার পর জনসাধারণকে ঢোল বাজিয়ে এ খবর জানানো হয়। হাটের ঢুলিরা ঢোল বাজিয়ে বলত : ‘ধার করো, কর্জ করো গনি মিয়ার হাট করো।’ তবে এই মতের বিপক্ষেও মত রয়েছে। অনেকে বলেন, হাট প্রতিষ্ঠা করেন জিঞ্জিরার হাফেজ সাহেব। তিনি ছিলেন ঢাকার অন্যতম বিশিষ্ট জমিদার। তার পুরো নাম মৌলভী আহমদ আলী। তিনি চকবাজারে থাকতেন। যে বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেটিই বিখ্যাত মৌলভীবাজার।

পুরনো ঢাকার প্রবীণ অনেকে বলেন, বড় কাটরার উল্টো দিকে দেবীদাস লেন ঘাটের খাসজমিতে এই হাট বসত। সেই সময় গনি মিয়ার হাটে সুই থেকে শুরু করে হাতি পর্যন্ত পাওয়া যেত। ঢাকা তো বটেই, ঢাকার আশপাশ থেকেও অনেকে আসত। শতবর্ষী সেই হাট এখন আর বসে না। তবে বছরে একবার গরুর হাট ঘটা করেই বসে গনি মিয়ার হাটে। কোরবানি ঈদে দেশসেরা কোরবানি পশুর হাট এটি। তবে এই হাটের পরিচিতি এখন গনি মিয়ার হাট হিসেবে নয়, পরিচিত রহমতগঞ্জ গরুর হাট নামে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ আগস্ট ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়