ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

গরিবদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবে ফাতেমা

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৪, ১৮ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গরিবদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবে ফাতেমা

মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন : ‘পড়ালেখা করে ডাক্তার হতে চাই। ডাক্তার হয়ে গরিবদের জন্য একটি হাসপাতাল করব। যাতে কোনো কিছুতে টাকা-পয়সা না লাগে। সেই হাসপাতালে গরিবরা যাতে ফ্রি চিকিৎসা নিতে পারে। টাকার অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে যাতে গরিবরা মারা না যায়।’

রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে ফুটপাতে বসবাসকারী ছিন্নমূল অসহায় প্রতিবন্ধী রোকেয়া বেগমের শিশুকন্যা ফাতেমা তুজ জোহরা বুধবার সচিবালয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের কাছে এভাবেই নিজের স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন। তার কথা শুনে উপস্থিত সবাই মুগ্ধ হন।

বড় হয়ে কী হতে চাও? এ প্রশ্নের জবাবে যখন শিশু ফাতেমা শুদ্ধ উচ্চারণে সুন্দরভাবে কথাগুলো বলছিল তখন সবাই তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন। খুশি হন ‍সমাজকল্যাণমন্ত্রীও। ছিন্নমূল এই শিশুকে সরকারি তত্ত্বাবধানে পড়াশোনার যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন রাশেদ খান মেনন। এমনকি শিশুটিকে সরকারি শিশু পরিবারে রাখার প্রস্তাবও দেন তিনি। কিন্তু তার প্রতিবন্ধী মা রোকেয়া বেগম একা হয়ে যাবেন, এ কারণে বিনয়ের সঙ্গে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

এখন থেকে ফাতেমা সরকারি অর্থায়নে পড়ালেখা করবে। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সরকার তার পড়ালেখার খরচ যোগাবে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিশেষ ব্যবস্থায় দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তার পড়াশোনার খরচ দেবে সরকার।

শিশু ফাতেমা তুজ জোহরার প্রতিবন্ধী অসহায় মা রোকেয়া বেগমের ভরণ-পোষণের দায়িত্বও নিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এখন থেকে প্রতিমাসে সরকারি তহবিল থেকে ৭০০ টাকা করে ভাতা পাবেন তিনি।

বুধবার সচিবালয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রোকেয়া বেগমের হাতে চলতি মাসের ভাতা ও বই তুলে দেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

ভাতা পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন রোকেয়া বেগম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। কত কষ্ট করে জীবনযাপন করলেও কেউ আমার খোঁজ নেয়নি। তার সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী আমাকে খুঁজে বের করে ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। আমার মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন।

বলতে বলতে এক পর্যায়ে রোকেয়া কেঁদে ফেলেন। মন্ত্রী এ সময় তাকে সান্ত্বনা দেন। যেকোনো বিপদে-আপদে পাশে থাকার আশ্বাস দেন রাশেদ খান মেনন।

রোকেয়া বেগমের প্রসঙ্গ তুলে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, প্রথম আলোর কলামিস্ট আনিসুল হকের লেখা পড়ে তিনি বিধবা প্রতিবন্ধী রোকেয়া ও তার পরিবারের জীবনযুদ্ধ ও অসহায়ত্ব সম্পর্কে জানতে পারেন।

তিনি বলেন, রোকেয়ার স্বামী রাজধানীর কারওয়ানবাজারে দুটি বাসের মাঝখানে পড়ে মারা যান। স্বামীর অবর্তমানে রোকেয়া দুই মেয়েকে নিয়ে টাকার অভাবে কামরাঙ্গিরচরের ভাড়া বাসা ছেড়ে আসেন ফুটপাতে। সেই ফুটপাতে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে এক মেয়েকে বিয়ে দেন। আরেক শিশুকন্যা ফাতেমা পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে অত্যন্ত কষ্টে। এমন হৃদয়বিদারক গল্প জেনে সমবায় অধিদপ্তরের ডিজিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অসহায় রোকেয়ার পরিবারকে খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেই। কথামতো তারা খুঁজে বের করে রোকেয়াকে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, রোকেয়া ও তার শিশুকন্যাকে সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসা শুধু আমাদের নৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং সাংবিধানিক দায়িত্বও বটে। আরো কত ছিন্নমূল অসহায় পরিবার এভাবে পড়ে আছে ফুটপাতে, জানি না। আমরা তাদের সবাইকে এই সমাজে ভালোভাবে থাকার সুযোগ দিতে চাই।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ এপ্রিল ২০১৮/নঈমুদ্দীন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়