ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গাছেরও প্রাণ আছে, জানালেন যিনি

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ২৩ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গাছেরও প্রাণ আছে, জানালেন যিনি

জগদীশ চন্দ্র বসু

শাহ মতিন টিপু : বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর ৮০তম মহাপ্রয়াণ দিবস। ১৯৩৭ সালের এইদিনে তিনি ভারতের স্বাস্থ্যকর স্থানখ্যাত  গিরিডিতে মৃত্যুবরণ করেন। তার জন্ম ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে।

উদ্ভিদেরও যে প্রাণ আছে, তা এই বিজ্ঞানীরই আবিস্কার। আগে উদ্ভিদের প্রাণ সম্পর্কে জানতো না মানুষ। সর্বপ্রথম উদ্ভিদের প্রাণ থাকার ঘোষণায় বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন এই বাঙালি বিজ্ঞানীই।

গাছের প্রাণ আছে, এ নিয়ে আজ কাউকে বোঝাবার দরকার হয় না। অথচ এ সত্যটি প্রমাণে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুকে অনেক সাধনা করতে হয়েছিল। তিনি তারই আবিষ্কৃত ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করেছিলেন উদ্ভিদের প্রাণের অস্তিত্ব।

রেডিওর আবিষ্কারক হিসেবে  আগে  বিশ্ববাসী ইতালির বিজ্ঞানী মার্কোনিকেই জানত। কিন্তু ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত  IEEE (Institute of Electrical and Electronics Engineers) এর প্রসিডিংয়ে জগদীশ বসুকে রেডিওর প্রকৃত আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রাম ছিল তার পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান । তার বাবা ভগবান চন্দ্র বসু ছিলেন ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক। এর পরে তিনি  ফরিদপুর, বর্ধমান ও অন্যান্য কিছু অঞ্চলে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন। জগদীশ চন্দ্রের প্রথম স্কুল ছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। এখানেই শৈশব কাটে তার। তার মায়ের নাম বামা সুন্দরী দেবী।

জগদীশ কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর বাবার ইচ্ছা ও আগ্রহে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান পাঠের উদ্দেশ্যে লন্ডনে যান। অধ্যয়ন শেষে দেশে ফিরে এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। তার গবেষণার সূত্রপাতও এখান থেকেই। এই কলেজই তার  বৈজ্ঞানিক গবেষণাসমূহের সূতিকাগার ।

প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার প্রথম আঠারো মাসে জগদীশ যে সকল গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেছিলেন তা লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা পত্রগুলোর সূত্র ধরেই লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে।

স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর গবেষণার প্রধান দিক ছিল উদ্ভিদ ও তড়িৎ চৌম্বক। তার আবিষ্কারের মধ্যে উদ্ভিদের বৃদ্ধিমাপক যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ ও উদ্ভিদের দেহের উত্তেজনার বেগ নিরুপক সমতল তরুলিপি যন্ত্র রিজোনাষ্ট রেকর্ডার অন্যতম।

জগদীশ চন্দ্র কাজ করেছিলেন অতিক্ষুদ্র তথা মাওক্রো বেতার তরঙ্গ নিয়ে। যার প্রয়োগ ঘটেছে আধুনিক টেলিভিশন এবং রাডার যোগাযোগের ক্ষেত্রে। আর মার্কনি আধুনিক ছোট বা শর্ট তরঙ্গ মাপের বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে দূরে বেতার সংকেত পাঠাতে সফল হয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতি হল রেডিও।

জগদীশ চন্দ্র বসুর আশ্চর্য আবিষ্কার দেখে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেন, ‘জগদীশ চন্দ্র বসুর প্রত্যেকটি আবিষ্কার বিজ্ঞান জগতে একটি বিজয়স্তম্ভ।’

বাঙালিরাও বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে নিউটন-আইনস্টাইনের চেয়ে কম যায়না তিনি তা প্রমাণ করেন। জগদীশ চন্দ্র যে গ্যালিলিও-নিউটনের সমকক্ষ বিজ্ঞানী তার স্বীকৃতি দিয়েছিল লন্ডনের ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকা, ১৯২৭ সালে।

জগদীশ চন্দ্র বসু একজন সাহিত্যিকও ছিলেন। তার লেখা ‘অব্যক্ত’ বাংলা ভাষায় একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ১৮৯৬ সালে তার লেখা প্রথম সায়েন্স ফিকশানটির নাম ছিল ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুও ছিলেন জগদীশ চন্দ্র।

১৯১৬ সালে তিনি অধ্যাপনার কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তারপর দু’বছরের মধ্যে (১৯১৭ সালের ৩০ নভেম্বর) তিনি ‘জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞানমন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেই বিজ্ঞানমন্দিরে গবেষণা পরিচালনা করেন।



রাইজিংবিডি/ ঢাকা/২৩ নভেম্বর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়