ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গুলিতে নিহত জালালের বাড়িতে চলছে মাতম

গাজী হানিফ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গুলিতে নিহত জালালের বাড়িতে চলছে মাতম

নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীতে হট্টগোল দেখতে গিয়ে রোববার বিকেলে গুলিতে প্রাণ গেল বিদেশফেরত জালাল উদ্দিনের। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারে চলতে শোকের মাতম।

হতদরিদ্র পরিবারের অভাব গোচাতে একবছর আগে মালয়েশিয়া যান জালাল উদ্দিন। তবে বৈধ কোনো কাগজপত্র না থাকায় গত পাঁচ মাস আগে দেশে ফিরে আসেন রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষার দড়িগাঁও পূর্বপাড়া (শুঁটকিকান্দি) গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে জালাল উদ্দিন (৩০)।

এলাকাবাসী জানায়, দড়িগাঁও গ্রামের খালেক ফকির নামে কথিত এক আধ্যাত্মিক ফকির ৪০ দিন পূর্বে মারা যান। ওই খালেক ফকিরের চল্লিশা উপলক্ষে তার ভক্তরা গ্রামে হাদীর বাড়িতে দুদিনব্যাপী দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও এক বাউল গানের আয়োজন করে। প্রথম দিন গান পরিবেশনের কথা ছিল বাউল শিল্পী সুনিল কর্মকার ও মো. কারী বারেক বৈদেশীর। আর দ্বিতীয় দিন মো. আরিফ দেওয়ান ও মো. রজ্জব দেওয়ান। এই বাউল গানের ব্যাপারে থানা পুলিশের সঙ্গে ফকির ভক্তদের একটি সমঝোতা হয়েছিল বলেও জানা যায়। যার ফলে এই কর্মসূচি উপলক্ষে খালেক ফকির ভক্তরা এলাকায় ব্যাপকভাবে পোস্টারিং করে প্রচার চালায় এবং হাদীর বাড়িতে গানের মঞ্চ তৈরী করে।

মঞ্চের সামনে বসার জন্য ব্যবস্থা করা হয়। ভক্তদেরকে আপ্যায়নের জন্য গরু জবাই করে খিচুরি পাকানোর ব্যবস্থাও করা হয়। এই উপলক্ষে আশপাশের বহুসংখ্যক হকার সকাল থেকেই সেখানে জিনিসপত্র নিয়ে বসেন। রোববার বিকেল ৪টায় একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভক্তদেরকে মারধরসহ এসব মঞ্চ, দোকানপাট ও টেবিল ভাঙচুর করতে থাকে। এ সময় ফকির ভক্তরা পুলিশকে বাধা দিলে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়।

হট্টগোলের খবর পেয়ে বাড়ির বাইরে বের হয়ে আসেন জালাল উদ্দিন। এরই মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালায়। এ সময় জালাল পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত জালালকে উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যায়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য রাত ৯টার দিকে নিহতের লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে রাখা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টা) লাশ মর্গেই রয়েছে।

এদিকে জালালের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে কখন বাড়িতে যাবে সে অপেক্ষায় তার স্বজনরা। নিহত জালালকে একনজর দেখার জন্য আশপাশের বাড়ির লোকজন ভিড় করছেন তারা বাড়িতে।

জালালের একটি সন্তান রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর খবরে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন নিহতের স্ত্রী জেসমিন। ক্ষণে ক্ষণে জ্ঞান হারান, আবার জ্ঞান ফেরে।

নিহত জালালের মা সাফিয়া খাতুন মাতম করতে করতে বলেন,  ‘আমার মানিক বাড়িতে গুমায়া (ঘুমিয়ে) ছিল। হৈ চৈ শুনে ঘর থেকে বের হয়। এমন সময় পুলিশ তারে গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে আমার মানিকের নাড়ি-ভুড়ি বাইর হইয়া যায়। সে ছটফট করতে থাকে। তারপরও পুলিশের রহম হয় নাই।’

উল্লেখ, গত কয়েকমাস ধরে নিলক্ষায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছে। ওই সংঘর্ষে পাঁচ গ্রামবাসী নিহত হন। রায়পুরা থানার ওসি ও পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ আহত হন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে উপজেলা প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য নিলক্ষার সোনাকান্দি ও দড়িগাঁও গ্রামে ১৪৪ ধারা জারি করে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. শফিউর রহমান জানান, সংঘর্ষপ্রবণ এলাকায় চল্লিশা নামে বাউল গান চালানোর চেষ্টা করে এলাকার কিছু লোক। এতে পুলিশ বাধা দিতে গেলে তারা টেঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামালা চালায়। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পুলিশ রবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুঁড়লে এলাকাবাসী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বর্তমানে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।



রাইজিংবিডি/নরসিংদী/১৬ জানুয়ারি ২০১৭/গাজী হানিফ মাহমুদ/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়