ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গোপালগঞ্জে প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ৮ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গোপালগঞ্জে প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। গত তিন দিনে দেড়শ জনের বেশি রোগী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে। সিট না থাকায় হাসপাতালের মেঝে, বারান্দা এমনকি বাইরে রেখে রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে।

এসব রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকেরা। রোগের প্রকোপ কমাতে ঠাণ্ডা জায়গায় থাকতে ও বিশুদ্ধ পানি পানের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

গত ১ মে থেকে হঠাৎ করে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতালগুলোতে আসতে থাকে। গত ৬ মে পর্যন্ত জেলার পাঁচটি হাসপাতালে চার শতাধিক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু আবারো নতুন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোগীরা গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালসহ চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে থাকে। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। অধিক রোগী আসার কারণে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগে ব্যবহৃত ওষুধ ও স্যালাইন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। পানিতে লবণাক্ততা হওয়ায় ও প্রচণ্ড গরম পড়ায় ডায়রিয়া ছড়িয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছে ভুক্তভোগীরা। তবে এসব হাসপাতালে বেড সংখ্যা কম থা্কায় মেঝে, বারান্দা এমনকি বাইরে বসে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন ডায়রিয়া আক্রান্তরা। এসব রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকেরা।



সরেজমিন গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল ঘুরে ও ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৫টি বেড থাকলেও রোগী রয়েছে ৩৫ জন আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। বেডের অপ্রতুলতার জন্য সিট সংকুলন না হওয়ায় বাধ্য হয়ে তারা মেঝেতে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া জেলার কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তাছলিমা বেগম (৩৮) জানান, ভ্যাপসা গরমে আমার শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। অনেকবার বমি ও পায়খানা করায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছেন। এখন রোগী মোটামুটি ভাল আছে।

ভর্তি রোগী মাহাবুবুল ইসলাম (৩৫) জানান, আমার বার বার বমি ও পাতলা পায়খানা হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখানে রোগীর অনেক চাপ। ওয়ার্ডের মেঝেতে, বারান্দায় ও বাইরেও রোগীদের বেড দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, হাসপাতাল থেকে স্যালাইন ও সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হলে ইনজেকশনসহ অন্যান্য ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।



গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) প্রবীর কুমার ব্যানার্জী জানান, হঠাৎ করে ভ্যাপসা গরম ও দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে ডায়রিয়া রোগী সংখ্যা বাড়ছে। ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, প্রতি বছর এপ্রিল ও মে মাসে ডায়রিয়াজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ সময় প্রচণ্ড গরম থাকার কারণে আক্রান্ত সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। আমরা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ও পরামর্শ দিচ্ছি।

তিনি আরো জানান, ডায়রিয়া রোগীদের জন্য মুখে খাওয়া স্যালাইন পর্যাপ্ত রয়েছে, তবে কলেরা স্যালাইনের সরবরাহ একটু কম থাকায় পর্যাপ্ত দিতে পারছি না। এছাড়া বেডের স্বল্পতা থাকায় সবাইকে বেড দিতে পারছি না। রোগীদের ঠিকমতো চিকিৎসা দেওয়ায় কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ফলে রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন বলে জানালেন পরিচালক।




রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/৮ মে ২০১৮/বাদল সাহা/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ