ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

গ্রেনেড সরবরাহ করেন মাজেদ ভাট

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ২০ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্রেনেড সরবরাহ করেন মাজেদ ভাট

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড মাওলানা তাজউদ্দিন ও মুফতি আব্দুল হান্নানকে সরবরাহ করেন কাশ্মিরী নাগরিক জঙ্গি মাজেদ ভাট। আর ওই গ্রেনেড হামলার লক্ষ্যই ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। এতে সফল হলে আওয়ামী লীগ টুকরো টুকরো হয়ে যেত এবং এদেশে নির্বিঘ্নে জঙ্গি কার্যক্রম চালানো যেত।

সোমবার রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ যুক্তিতর্ক তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ১২তম দিনের মতো যুক্ততর্ক শুনানিতে মামলার অন্যতম আসামি মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাটের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে যুক্তিতর্কে এ তথ্য উপস্থাপন করেন।

সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্কে আসামি মাজেদ ভাট, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভির (জঙ্গি হান্নানের ভাই) দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তুলে ধরেন। এ তিন আসামিই মুফতি হান্নানের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সমর্থন করে তাদের জবানবন্দি পেশ করেছেন।

তিনি বলেন, জঙ্গি মাজেদ ভাট কাশ্মিরী বিচ্ছিন্নতাবাদী হিযবুল মুজাহিদীনের সংগঠক। তিনি পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশে মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকতেন তিনি। তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন মাওলানা তাজউদ্দিন। তাজউদ্দিনের মাধ্যমে মাজেদ ভাট মুফতি হান্নানসহ অন্য জঙ্গিদের নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেন। মাজেদ ভাট জঙ্গি সংগঠন হিযবুল মুজাহিদের এদেশের সংগঠক হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন। আর এর অর্থ আসত পাকিস্তান থেকে। তাদের শেল্টার, প্রশিক্ষণ দিত আইএসআই। পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে গোলা-বারুদ, গ্রেনেড আসত। যা বাংলাদেশের সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পাঠানোর চেষ্টা করা হতো এবং এদেশে বিভিন্ন জঙ্গি হামলায় ব্যবহার করা হতো। মাজেদ ভাট এদেশে জঙ্গি কার্যক্রমকে জোরদার করতে পরিচয় গোপন করে সিরাজগঞ্জের মেয়ে নাহিদ লায়লা কাকনকে  বিয়ে করে। মাজেদ ভাটের জঙ্গি কার্যক্রমে রাজনৈতিক শেল্টারের নিশ্চয়তা দেন আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন।

তাজউদ্দিন বলেন, তার ভাই মন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। তাজউদ্দিন তার ভাই পিন্টুর সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে মাজেদ ভাটকে আশ্বস্ত করেন।

রেজাউর রহমান বলেন, আসামি আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম তার জবানবন্দিতে মাজেদ ভাটের সঙ্গে তার পরিচয় এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন সম্পৃক্ততার বিষয় জবানবন্দিতে স্বীকার করেন। মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি তার জবানবন্দিতে ২১ আগস্ট হামলার বিষয়ে মুফতি হান্নান, কাজল, সালাম, লিটন, জাহাঙ্গীরসহ অন্য জঙ্গিদের বিভিন্ন বৈঠক বিষয়ে তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন যা রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কে তুলে ধরেন।

এদিন রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়নি। বিচারক আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেছেন।

এর আগে গত ১১ অক্টোবর মামলাটিতে আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষ্য শেষ হয়। মামলাটিতে বিভিন্ন সময়ে ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দেন।

মামলাটিতে গত ১২ জুন জামিনে ও কারাগারে থাকা ৩১ আসামির আত্মপক্ষ শুনানি হয়। আত্মপক্ষ শুনানিতে ৩১ আসামির সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। মামলাটিতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৮ জন আসামি পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ শুনানির সুযোগ পাননি।

মামলাটিতে আসামি খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, প্রাক্তন আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলার তিন তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও প্রাক্তন ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম জামিনে রয়েছেন।

অন্যদিকে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, প্রাক্তন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ১৯ জন পলাতক। এ মামলার আসামি হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ নভেম্বর ২০১৭/মামুন খান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়