ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঘুমের মধ্যে যেসব চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৭, ৪ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঘুমের মধ্যে যেসব চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : বিশ্রামের জন্য ঘুমের প্রয়োজনীয়তা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে এবং নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন ঘুমের সময় আপনার শরীরে অনেক চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে? এসব ঘটনার কিছুটা সম্পর্কে আপনি অবগত আছেন এবং বাকিটা সম্পর্কে হয়তো এখনো অজানাই রয়ে গেছে। ঘুমের সময় শরীরে ঘটে এমন কিছু ঘটনা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* আপনার হার্ট রেট কমে যায়
হার্ভার্ড ডিভিশন অব স্লিপ মেডিসিনের মতে, ‘ঘুমের অন্যতম একটি সম্ভাব্য কাজ হলো হার্টকে জাগ্রত জীবনের লাগামহীন চাহিদা থেকে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটি সুযোগ দেওয়া।’ যখন আপনি বিশ্রাম নেন, আপনার শরীরকে কঠোরভাবে কাজ করার প্রয়োজন হয় না, তাই আপনার কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ধীর হয়, বিশেষ করে এনআরইএম স্লিপের সময়।

* আপনার মাংসপেশি সাময়িকভাবে প্যারালাইজড হয়ে যায়
টেম্পোরারি প্যারালাইসিস অথবা সাময়িক পক্ষাঘাত ভালো কিছু। হার্ভার্ডের স্লিপ মেডিসিন ডিভিশন অনুসারে, ‘আশ্চর্যের বিষয় হলো, আরইএম স্লিপের সময় বাহু ও পায়ের মাংসপেশি সাময়িকভাবে প্যারালাইজড হয়ে পড়ে। ধারণা করা হয় যে এটি একটি নিউরোলজিক্যাল বেরিয়ার বা স্নায়ুতাত্ত্বিক বাধা যা আমাদেরকে স্বপ্নের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখানো হতে বিরত রাখে, যেমন- লাথি মারা, ঘুষি মারা, কামড় দেয়া ও লাফ দেওয়া।’

* শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস পায়
যখন আপনি জেগে থাকেন, তখন থার্মোরেগুলেশন নামক একটি প্রক্রিয়া কাঁপুনি বা ঝাঁকুনি, ঘাম নিঃসরণ এবং রক্তপ্রবাহ পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং নিশ্চিত করে যে শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক মাত্রায় ওঠানামা করছে না। ঘুমের সময় আপনার শরীরের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি ফারেনহাইট কমে যায়। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, ঘুম শরীরকে শক্তি সংরক্ষণে সাহায্য করে।

* আপনার শরীর অধিক কোলাজেন উৎপাদন করে
ঘুমের সময় কিছু শারীরিক প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায়, যেমন- কোষের মেরামত ও বিকাশসাধন। এসময় আপনার ত্বকে কোলাজেন নামক প্রোটিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। ঘুমন্ত অবস্থায় প্রচুর পরিমাণে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ হয়, এটিও কোলাজেন উৎপাদনে প্ররোচনা যোগায়। কোলাজেন ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখে।

* আপনি সামান্য লম্বা হন
ঘুমের সময় আপনার উচ্চতা একটু বৃদ্ধি পায়, এর কারণ হলো- ঘুমের সময় আপনার মেরুদন্ডের ডিস্কগুলো শরীরের ওজনের চাপ খাওয়া ছাড়াই রিহাইড্রেট হয়। আপনি সকালে ঘুম থেকে ওঠেই শরীরের মাপ নিয়ে রেখে সন্ধ্যায়ও শরীরের উচ্চতা মেপে তুলনা করলে পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন। দেখতে পাবেন যে আপনার উচ্চতা সকালে প্রায় ১ সেন্টিমিটার বেশি।

* আপনি অপ্রয়োজনীয় তথ্য ভুলে যান
ঘুমন্ত অবস্থায় আপনার মস্তিষ্ক ক্লিন হাউজ বা নিষ্কাশন ঘর হিসেবে কাজ করে, যার মানে হলো যেকোনো অপ্রয়োজনীয় তথ্যকে বিতাড়িত করে ভবিষ্যত তথ্যের জন্য জায়গা খালি করে। সায়েন্স নামক জার্নালে প্রকাশিত দুটি গবেষণা অনুসারে, মস্তিষ্ক ঘুমের সময় সিন্যাপন্সেসের মাধ্যমে পুরোনো স্মৃতি ঝেড়ে ফেলে, এর কারণ হলো- দুটি স্নায়ুকোষের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী সিন্যাপ্সে স্মৃতি জমা হয় এবং নতুন স্মৃতি গঠিত হয়। এসব গবেষণা বলছে যে ঘুমন্ত অবস্থায় সিন্যাপ্সেস হ্রাস পায়, এর ফলে মস্তিষ্কে  ভবিষ্যত তথ্যের জন্য অধিক শূন্যস্থান তৈরি হয়।

* আপনার দাঁতে দাঁত ঘষে ও চোয়াল শক্ত হয়
ঘুমন্ত অবস্থায় দাঁতের সঙ্গে দাঁতের ঘষা খাওয়া ও চোয়ালের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়াকে ব্রুক্সিজম বলে। এই ব্রুক্সিজমের সঙ্গে স্ট্রেস বা মানসিক চাপের যোগসূত্র পাওয়া গেছে এবং আপনি যে ঘুমের সময় দাঁতে দাঁত ঘষেন এটা নাও জানতে পারেন, বেস্ট হেলথ নামক ম্যাগাজিন অনুসারে। তীব্র মুখমণ্ডলীয় ব্যথা, কানব্যথা এবং চোয়ালের নিকট ব্যথা লক্ষণ হতে পারে যে আপনার অজান্তে ব্রুক্সিজম হচ্ছে। ব্রুক্সিজম দাঁত, চোয়াল ও জয়েন্টে সমস্যা তৈরি করে। এছাড়া কিছুক্ষেত্রে এ অভ্যাস দাঁতের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং দাঁত ভেঙে যাওয়ারও কারণ হতে পারে।

* আপনার এক্সপ্লোডিং হেড সিন্ড্রোম হতে পারে
এক্সপ্লোডিং হেড সিন্ড্রোম! নাম শুনেই মনে হতে পারে মস্তিষ্কে বিস্ফোরণ জাতীয় কিছু ঘটে। আসলে তা নয় এবং এ নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা করারও কারণ নেই। এ কন্ডিশনে লোকজন ঘুমের সময় কিংবা জাগ্রত অবস্থায় উচ্চ শব্দের অবাস্তব কোলাহল শুনে, যেমন- বিস্ফোরণ, গাড়ির সঙ্গে গাড়ির সংঘর্ষ কিংবা গানশট, আমেরিকান স্লিপ অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে। এখনো পর্যন্ত এ ব্যাধির মারাত্মক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, কিন্তু বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে হালকা খিঁচুনি, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিঘ্নিত স্নায়ু কার্যক্রম এর জন্য দায়ী হতে পারে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়