ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঘোল ওয়ালা সালাম

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২২ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঘোল ওয়ালা সালাম

মাগুরা প্রতিনিধি : দুধের সাধ ঘোলে না মিটলেও এই গরমে একটু প্রশান্তির জন্য ঘোলের চাহিদা এখনো রয়েছে ঢের।

প্রায় ৪০ বছর ধরে ঘোল বিক্রি করে আব্দুস সালামের সংসার চলে। বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের ধোয়াইল গ্রামে। ‘ঘোল সালাম’ নামেই তিনি পরিচিত। পুরো গরমকাল তিনি ঘোল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

নানা খাবারের ভিড়ে ঘোল এখন বিলুপ্তির পথে। তার পরও গ্রামগঞ্জে প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণা মেটাতে ঘোলের চাহিদা রয়েছে আদিকাল থেকে। দুধ দিয়ে তৈরি এই বিশেষ পানীয় তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা সালাম বংশানুক্রমে আজও ধরে রেখেছেন। তার বাপ-দাদারা এই ব্যবসা করতেন। পরিবারের সবাই ছেড়ে দিলেও তিনি শেষ প্রতিনিধি হিসেবে ধরে রেখেছেন। তার পর আর কেউ এ ব্যবসা করবেন না বলে জানালেন সালাম।

সবাই ঘোল তৈরি করতে পারেন না। প্রয়োজন হয় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। গাভীর দুধ জাল দিয়ে ঘন করে তারপর ঠান্ডা করতে হয়। তার ভেতর টকদই দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে নাড়তে হয়। এক সময় দুধ থেকে মাখন আলাদা হয়ে যায়। মাখন দিয়ে তৈরি করা হয় খাঁটি ঘি। দুধ মিশ্রিত ঘন পানি ঘোলে পরিণত হয়। ঘোলকে এলাকা ভেদে মাঠা বলা হয়।

আবার সব পানিতে ঘোল হয় না। আয়রনমুক্ত পানি দরকার হয়। এ জন্য দূর থেকে নদীর স্বচ্ছ পানি সংগ্রহ করতে হয়। পানি ফুটিয়ে দিয়ে বিশুদ্ধ করে ব্যবহার করা হয়। দই তৈরির পর মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করতে হয়। পরে ঘোল ভালো করে মিশিয়ে হালকা লবণ দিয়ে কাঁচের গ্লাসে পরিবেশন করা হয়।

সালাম মিয়ার ঘোল এলাকায় নাম করা। ঘোলের কারণে তাকে সবাই চেনে। তার ঘোলের কদর সর্বত্র। হাঁড়িতে ঘোল আনার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়। অনেকে আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে রাখেন। প্রতি গ্লাস ঘোল বিক্রি হয় ১০-২০ টাকায়। ভারটা কাঁধে নিয়ে পাড়ায় হাঁক ছেড়ে গোল বিক্রি করে বেড়ান তিনি। খরচ বাদে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। নিঃসন্তান সালাম মিয়ার স্ত্রী আমেনা বেগমকে নিয়ে চলে সংসার।

আব্দুস সালাম বলেন, ‘তার পূর্ব পুরুষ দই, মিষ্টি ও ঘোল তৈরির কাজ করতেন। তার বাবা আজগর আালীর কাছ থেকে তিনি ঘোল তৈরির কাজ শিখেছেন। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এই পেশায় আছেন। অন্য চাচা ও ভাইয়েরা এই পেশায় আসেননি। গরমের তিন মাস চলে এই কাজ। বাকি সময় অন্য কাজ করেন তিনি।

ঘোল শরীর ঠান্ডা রাখে। রোগমুক্তির পর ঘোল পান উপকারি। এ ছাড়া গরম লাগা, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানা অসুখে ঘোল উপকারি বলেও জানান তিনি।



রাইজিংবিডি/মাগুরা/২২ মে ২০১৭/মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়