ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চলন্ত বাসে ধর্ষণ-হত্যা: ৫ জনের রিমান্ড মঞ্জুর

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৮ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চলন্ত বাসে ধর্ষণ-হত্যা: ৫ জনের রিমান্ড মঞ্জুর

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : নিহত তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিনের বিলাপে কাঁদছে গ্রামবাসী। তিনি বিলাপ করে বলেন, তার মেয়ে পরিবারের প্রতি আন্তরিক ছিল। নিজের কথা চিন্তা করত না। তার ভাবনায় ছিল কেবল বাবা আর ভাই-বোন। সে লেখাপড়া করে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে সেবিকার চাকরি নিয়েছিল। স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করার। গত শনিবার তানিয়া ফোন করে বাড়ি আসার খবর জানিয়ে বলেছিল- পাঁচদিনের ছুটি পেয়েছে। পরিবারের সকলকে নিয়ে রোজা পালন করতে বাড়ি আসছে। সবাই মেয়ের পথ চেয়েছিল। কিন্তু তানিয়ার লাশ ফিরল।

নিহত শাহীনুর আক্তার তানিয়া (২৩) কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে।

নার্স শাহীনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার স্বর্ণলতা বাসের চালক গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার নূরুজ্জামান ওরফে নূর মিয়া (৩৮), হেলপার একই এলাকার লালন মিয়া (৩২), ওই বাসের পিরিজপুর ও কটিয়াদির দুই লাইনম্যানসহ পাঁচজনকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাজিতপুর থানা পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাদের কিশোরগঞ্জ আদালতে পাঠায়।

বুধবার দুপুরে পাঁচজনকে কিশোরগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুনের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। পরে আদালত তাদের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে তানিয়ার বাবা বাদী হয়ে বাজিতপুর থানায় চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

চার ভাই ও দুই বোনের সংসারে তানিয়া ছিল সবার ছোট। তিনি ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে নার্সের চাকরি করতেন। তার বড় ভাই কফিল উদ্দিন সুমন পিজি হাসপাতালের ব্রাদার। তারা দুই জনে মিলে পরিবার দেখভাল করতেন। মাত্র তিন মাস আগে দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগে তাদের মা মারা যায়। বাবা গিয়াস উদ্দিন একা হয়ে যাওয়ায় তাকে সঙ্গ দিতে ছুটি পেলেই গ্রামে যেতেন তানিয়া। বাবাকে সান্ত্বনা দিতেন, স্বপ্ন দেখাতেন। কিন্তু সব স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে স্বর্ণলতা বাসের লোকজন। তানিয়ার দুই ভাই এসব কথাই বলছিলেন কাঁদতে কাঁদতে। আর তাদের বোনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি  চাইছিলেন।

তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘‘পরিবারের জন্য মেয়েটা সবই করতো। কিন্তু এই শয়তানের আমার মেয়েটার জীবন শেষ করে দিল। যা ক্ষতি করার তো সবই করলো। মেয়েটা বলেছিল, প্রথম রোজাটা পরিবারের সঙ্গে করবে। কিন্তু সবই কেড়ে নিল। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’’

ময়নাতদন্ত শেষে তানিয়ার লাশ মঙ্গলবার রাতেই মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে এলাকার লোকজন ভিড় করেছে তাদের বাড়িতে।

বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খলিলুর রহমান পাটোয়ারী জানান, মামলায় এজাহারভুক্ত আসামির মধ্যে চালক, হেলপার এবং সন্দেহভাজন তিন জনকে গ্রেপ্তার  করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত অন্য দুই আসামি পলাতক। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার পাঁচজনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। 

সোমবার বিকেলে ঢাকার মহাখালী থেকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে করে কটিয়াদি ফেরার পথে তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

বাসটি রাত সাড়ে ৯টার দিকে কটিয়াদি আসার পর তানিয়া ও অন্য দুই যাত্রী ছাড়া সবাই নেমে যায়। উজানচর এলাকায় ওই দুই যাত্রীও নেমে যায়। বাসটি গজারিয়া এলাকায় পৌঁছালে চালক ও সহকারী তাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেয়। সেখান থেকে এলাকাবাসী তাকে কটিয়াদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।



রাইজিংবিডি/কিশোরগঞ্জ/৮ মে ২০১৯/রুমন চক্রবর্তী/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়