ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

চাকরিতে কমিউনিকেশন ও আইটি স্কিল জরুরি

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১১, ১০ মার্চ ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চাকরিতে কমিউনিকেশন ও আইটি স্কিল জরুরি

আলাপচারিতার এক পর্যায়ে এম আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আরিফ সাওন

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। ‘বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের (বিএসএইচআরএম) এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলর এবং ট্রেনিং অ্যান্ড  এডুকেশনের আহ্বায়ক। এছাড়া ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন বাংলাদেশ এবং সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট ক্লাবের মডারেটর। তিনি পঞ্চম আন্তর্জাতিক মানবসম্পদ সম্মেলনের যুগ্ম-সম্পাদক। সম্মেলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন রাইজিংবিডির নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফ সাওন। ছবি তুলেছেন রাইজিংবিডির সিনিয়র ফটো সাংবাদিক শাহীন ভূইয়া



রাইজিংবিডি: কেমন আছেন?
এম আব্দুল্লাহ আল মামুন: হ্যাঁ, ভাল আছি।

রাইজিংবিডি: আপনাদের সংগঠন অর্থাৎ বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের সদস্য কারা হতে পারবেন?
এম আব্দুল্লাহ আল মামুন: যারা এইচআর এবং এডমিনে জব করেন, যারা এইচআর বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচ আর বিষয়ে শিক্ষকতা করেন এবং বিবিএ-এমবিএতে এইচআর মেজর ঘোষণা করার পর তারা স্টুডেন্ট মেম্বার হতে পারেন। এখন পর্যন্ত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই বিষয়টি জানে না। সদস্যদের দক্ষতার বৃদ্ধির জন্য মাসে দুইটা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়।  

রাইজিংবিডি: চাকরির বাজারে টিকতে হলে আমাদের কী ধরনের দক্ষতা দরকার বলে আপনি মনে করেন?
এম আব্দুল্লাহ আল মামুন:  দুইটা স্কিলের ওপর শিক্ষার্থীকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। একটি কমিউনিকেশন অন্যটা কম্পিউটার বা আইটি স্কিল। কমিউনিকেশন স্কিল বলতে আমি বুঝাই ভাষাগত বিষয়ে বিশেষ করে ইংরেজি এবং বাংলায় ভাল দক্ষতা। আর কম্পিউটার স্কিল হচ্ছে কম্পিউটারের ওপর ভাল দক্ষতা। ভালভাবে কথা বলতে না পারলে আর কম্পিউটারে দক্ষতা না থাকলে চাকরিতে টেকা কঠিন। আর এই দুইটা স্কিল থাকলে চাকরির বাজারে তাদের মোকাবেলা করা সহজ হয়।

রাইজিংবিডি: এই দুই দক্ষতা কীভাবে অর্জন করা সম্ভব?
এম আব্দুল্লাহ আল মামুন: ছাত্র জীবনে ছাত্রদের প্রথম কাজ হচ্ছে পড়াশুনা। তবে শুধু পড়াশুনা করে বই মুখস্ত করে এই স্কিল অর্জন করা সম্ভব নয়। এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিসে তাদের অংশ নেওয়া উচিত। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাব যেমন ডিবেট ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব, কালচারাল ক্লাব, স্যোসাল ওয়েলফেয়ার ক্লাব, সায়েন্স ক্লাব, বিজনেস ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, ফটোগ্রাফী ক্লাবে ভর্তি হতে পারে। বিভিন্ন ক্লাবে বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কমিউনিকেশন স্কিল উন্নতি করতে পারবে। এতে তার অর্গানাইজিং পাওয়ার বাড়বে। তাদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ক্যাম্পাসের ভেতরে তারা বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। ক্যাম্পাসের বাইরে তারা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। কম্পিউটার শিক্ষার ব্যাপারে বর্তমান সরকার খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রামের স্কুলের ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া আছে, বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এখন স্মার্ট ফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত।


রাইজিংবিডি: শিক্ষাক্ষেত্রে স্মার্ট ফোনের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য আপনার পরামর্শ...।
এম আব্দুল্লাহ আল মামুন: শিক্ষার্থীরা যদি বাড়তি জ্ঞান অর্জন করতে চায় তাহলে আমি বলবো শুধু ফেসবুকে চ্যাটিং করে সময় না কাটিয়ে তারা যেন মামার কাছে যায়, আমি যাকে বলি গুগল মামা। গুগলে গিয়ে এখন আমরা এক ক্লিকে অনেক কিছুই পাই। আমি শিক্ষার্থীদের বলব অবশ্যই তারা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করবে। ফেসবুকে তারা চ্যাটিং করবে, তাতে আমার আপত্তি নেই। আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন দিনে অন্তত যেন ৩০ মিনিট হলেও যে কোনো বিষয়ের ওপর গুগল থেকে বের করে পড়ে। যে সুযোগটা আমদের সময় ছিল না।

রাইজিংবিডি: যেহেতু আপনি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সে ক্ষেত্রে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান আপনার কাছে কেমন মনে হয়?
এম আব্দুল্লাহ আল মামুন: প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হয়, তারা তুলনামুলকভাবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর চেয়ে কম মেধাসম্পন্ন হয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এই শিক্ষার্থীদের চার বছরে বিভিন্ন অ্যাসাইন্টমেন্ট, প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। প্রথমসারির কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করছে। পক্ষান্তরে অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ।

রাইজিংবিডি : কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট বিক্রি করে এমন অভিযোগ শোনা যায়। এতে মানসম্মত শিক্ষা বা মানবসম্পদ উন্নয়ন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, এই বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
এম আব্দুল্লাহ আল মামুন:  আপনি যে কথাটি বলেছেন আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না, আমি নিজেও জানি। দুই একটা ইউনিভার্সিটি এই কাজটা করছে। এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা প্রকৃতপক্ষে মানবসম্পদ উন্নয়ন করতে পারছি না। এই বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আর যারা করছে তারা নিচু মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে। তাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আমি মনে করি এমনিতেই পরিবর্তন হবে না। সরকারের চাপের মুখে কঠিন আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এটা বন্ধ করা সম্ভব।


রাইজিংবিডি: কারিগরি শিক্ষাকে আমরা ইগনোর করি, আসলে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব কেমন?
এম আব্দুল্লাহ আল মামুন: আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ বিবিএ, এমবিএ বিষয়ে পড়াশুনা করা। কারণ এই বিষয়ে পড়াশুনা করলে উচ্চ বেতনে চাকরি পাওয়া যায়। গার্মেন্টস সেক্টরে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আমরা এগিয়েছি ফার্মাসিটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে। যেহেতু কারিগরি থেকে পাস করে চাকরির ক্ষেত্র খুবই সীমিত, তাই অনেকেই কারিগরি শিক্ষার দিকে আসতে চায় না। তবে জাতীয়ভাবে উন্নতি করতে হলে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। কারিগরি শিক্ষাকে ছোট করে না দেখে এদিকে আমাদের বেশি নজর দেওয়া দরকার। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। শহরে গ্রামে গঞ্জে সবাইকে কারিগরি শিক্ষার প্রতি সচেতন করা প্রয়োজন। সেই সাথে কারিগরি শিক্ষার্থীদের চাকরির নিশ্চয়তা প্রদান করা দরকার।

রাইজিংবিডি: ইন্ডাস্ট্রি একাডেমি কোলাবোরেশন এর বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?
এম আব্দুল্লাহ আল মামুন:  বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য দুটি। জ্ঞান আহরণ (গবেষণা) এবং বিতরণ। উন্নত বিশ্বে একাডেমিশিয়ানরা বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির কনসাল্টেন্ট হিসেবে যুক্ত থাকেন। এদিক থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। আমরা একাডেমিশিয়ানদের কারণে পিছিয়ে আছি না কি ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টরা আমাদের একসেস দিচ্ছেন না। এটি একটি বিতর্কের বিষয়। আমি এক্ষেত্রে দুই পক্ষকেই দায়ী করবো। আমি একাডেমিশিয়ানদের আগে দায়ী করবো। কারণ শিক্ষকের গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমরা অন্যান্য কাজে সময় বেশি ব্যয় করছি। পক্ষান্তরে করপোরেট হাউসগুলো একাডেমিশিয়ানদের অনেক তথ্য শেয়ার করতে চান না। যার ফলশ্রুতিতে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হচ্ছে না। বিবিএ-এমবিএ শিক্ষার্থীদের তিন মাসের ইণ্টার্নশিপ রিপোর্ট লেখার জন্য যে তথ্য প্রয়োজন তাও অনেক সময় অনেক করপোরেট হাউস শেয়ার করেন না। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য ইন্ডাস্ট্রি একাডেমি কোলাবোরেশনের বিকল্প নেই। 

রাইজিংবিডি: রাইজিংবিডিকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এম আব্দুল্লাহ আল মামুন: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

 

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ মার্চ ২০১৬/আরিফ সাওন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়