ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন, নয় হত্যার অনুমতি দিন’

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ২০ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন, নয় হত্যার অনুমতি দিন’

অসুস্থ দুই ছেলে ও নাতিসহ ফল ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল হোসেন

মেহেরপুর প্রতিনিধি : ‘হয় চিকিৎসার সুব্যবস্থা করুন, নয়তো বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ করে মেরে ফেলার অনুমতি দিন। আমি আর পেরে উঠছি না। বাবা হয়ে দুই ছেলে আর নানা হয়ে নাতির অসহায়ত্ব দেখে আত্মহত্যা করতেও পারছি না।’

এমন আকুতি জানিয়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন জানিয়েছেন শহরের ফল ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল হোসেন। তার বাড়ি শহরের বেড়পাড়া এলাকায়।

জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতিতে মানবিক আবেদনটি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খায়রুল হাসান।

তোফাজ্জেল হোসেন আবেদনপত্রে জানিয়েছেন, তার স্ত্রী একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। তার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে আব্দুস সবুরের বয়স ২৪ বছর। আর ছোট ছেলে রায়হানুল ইসলামের বয়স ১৩ বছর। দুটি ছেলেই দুরারোগ্য ব্যাধি ‘ডুফিনি মাসকুলার ডেসট্রোফি’ রোগে আক্রান্ত। আবার একমাত্র নাতি সৌরভ (৮) ওই একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

আবেদনপত্রে তিনি আরো বলেন, ‘বড় ছেলের বয়স যখন আট বছর তখন সে এ রোগে আক্রান্ত হয়। ছোট ছেলেটিও একই বয়সে একই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। দেশে এবং ভারতে বড় ছেলের চিকিৎসা করতে গিয়ে জমানো টাকা, জমিজমা, দোকানপাট, অস্থায়ী সম্পদ সবই বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। এখন দুই ছেলে আর নাতনির ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। নিকটাত্মীয়রা সাহায্যের হাত বাড়ালেও এখন তাও বন্ধ করে দিয়েছে। এখন সবার মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতেই হিমশিম খাচ্ছি।’

তিনি জানান, ভারতে চিকিৎসার সময় ডাক্তার বলেছিল, দুরারোগ্য ব্যাধিটির নাম ‘ডুফিনি মাসকুলার ডেসট্রোফি’। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাবে এবং চলাচলের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে। এরই মধ্যে বড় ছেলেটি চলাচলের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। নিজে নিজে কোনো রকমের নড়াচড়া করতে পারছে না। ছোট ছেলে এবং নাতনিটিও একই পথে এগিয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে তাদের কষ্ট আর মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া দেখে সহ্য করতে পারছি না। বর্তমানে তাদের চিকিৎসা করার কোনো সক্ষমতা তার নেই। তাই হয় তাদের সরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক, আর না হয় মেরে ফেলার অনুমতি দেওয়া হোক।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খায়রুল হাসান বলেন, ‘আবেদনের বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। আবেদনটি হাতে নিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। চাকরি কিংবা প্রাত্যহিক জীবনে এমন ঘটনা এর আগে দেখিনি। তাদের চিকিৎসার কাগজপত্র এবং আবেদনপত্র দিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।’

একই সঙ্গে তিনি তাদের সুচিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান। অসহায় বাবা তোফাজ্জেলের ফোন নম্বর : ০১৭১০-০৩৩৬৪৩।



রাইজিংবিডি/মেহেরপুর/২০ জানুয়ারি ২০১৭/মহাসিন আলী/রিশিত/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়