ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চৌগাছায় জমি দখল করে ক্যাম্প করার অভিযোগ

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২০, ৫ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চৌগাছায় জমি দখল করে ক্যাম্প করার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর : জেলার চৌগাছায় একটি কৃষক পরিবারের ১৩১ শতক জমির বিভিন্ন গাছ এবং বাঁশঝাড় কেটে নিয়ে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবির) বিরুদ্ধে।

তবে জমিটি সরকারের খাস খতিয়ানের উল্লেখ করে অপরাধীরা যেন আস্তানা গাড়তে না পারে এজন্য গাছ কেটে দখল নিয়ে সেখানে অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়েছে বলে দাবি করেছে বিজিবি। একই সঙ্গে তারা জমিটি তাদের অনুকূলে বন্দোবস্ত দেওয়ার আবেদনও করেছে চৌগাছার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে।

কৃষক পরিবারের দাবি, তাদের পূর্বপুরুষের জমি। তাদের অনুকূলে ৬২ সালের রেকর্ড থেকে শুরু করে জমির সব কাগজপত্র রয়েছে। তাদের দাবি, অবৈধভাবে জমিটি দখলে নিয়ে সেখান থেকে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার বিভিন্ন প্রকারের গাছ এবং বাঁশঝাড় থেকে সব বাঁশ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে বিজিবি।

সৃষ্ট বিবাদ নিরসনে উপজেলা ভূমি অফিস আগামী ১০ এপ্রিল মঙ্গলবার উভয় পক্ষকে নিজেদের অনুকূলে থাকা কাগজপত্রসহ হাজির হতে চিঠি ইস্যু করেছে।

কৃষক ও স্বরুপদাহ ইউপির সাবেক সদস্য আতাউল হক বলেন, ‘আমার বাপ-দাদা ও তার পূর্বসূরিরা উত্তরাধিকার সূত্রে ৩৯ নম্বর গদাধরপুর মৌজার ৭২১ ও ৭২৩ দাগে বসবাস করতেন। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় আমাদের বসতভিটার অর্ধাংশ তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান এবং অর্ধাংশ ভারতের ভাগে পড়লে জায়গাটি অনেকটা করিডোরের মতো হয়ে যায়। সেখানে যাওয়া-আসা করতে অসুবিধা হওয়ায় আমরা গয়ড়া গ্রামে বসবাস শুরু করি। কিন্তু ওই দাগে আমাদের ১৩১ শতক জমি রয়েছে। যা ৬২ সালের রেকর্ডে আমার বাবার নামে রেকর্ডভুক্ত। বাবার মৃত্যুর পর জমিটি আমাদের ছয় ভাই, পাঁচ বোন ও দুই মায়ের নামে রেকর্ড হয়। তবে এসআর জরিপের সময়ে অজ্ঞতাবশত জমিটি আমাদের নামে রেকর্ড না হয়ে ১/১ খতিয়ানভুক্ত হয়ে যায়। দীর্ঘদিন খেয়াল না করলেও পরে বিষয়টি জ্ঞাত হওয়ার পর ভুল সংশোধনে ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসের দ্বারস্থ হই। ইউনিয়ন ভূমি অফিস আমাদের আগের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে মিসকেস নম্বর ১৮৯/xiii//১৭-১৮ মিউটেশন করে জমিটি ১/১ থেকে ২৬৩ খতিয়ানে আমাদের তিন ভাইয়ের নামে রেকর্ড সংশোধন করে দেয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের তিন ভাই বর্তমানে ভারতের নাগরিক এবং তিন ভাই বাংলাদেশের নাগরিক। পুরো পরিবার বসবাস না করলেও আমাদের ভাই রিজাউল ইসলাম (যিনি বর্তমানে ভারতের নাগরিক) ওই জমিতে বসবাস করতে। সেখানে আমাদের শতাধিক বিভিন্ন শ্রেণির গাছ এবং বড় বাঁশঝাড় ছিল। ঝাড়ে পাঁচ শতাধিক বাঁশ ছিল। সম্প্রতি বিজিবি জমিটি খাস খতিয়ানভুক্ত দাবি করে প্রথমে আমার ভাইকে জমি থেকে উচ্ছেদ করে। গত সোম, মঙ্গল ও বুধবার জমিটি থেকে বিজিবি আমাদের সব গাছ (যার আনুমানিক দাম পাঁচ লক্ষাধিক টাকা) সম্পূর্ণ অবৈধভাবে কেটে বিক্রি করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের সময় বিজিবির তৎকালীন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম এখানে এসে আমাদের সাথে কথা বলে যান। এখানে কীভাবে বসবাস করছি, সেসব বিষয়ে জানেন এবং কোনো সমস্যা হলে তাকে জানাতে বলেন। সে সময় একটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়ও এটি সম্প্রচার করা হয়।’

এদিকে, উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে আন্দুলিয়া কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার ফজলুল হক ১৮৯/xiii/১৭-১৮ মিসকেসটি বাতিল করে জমিটি তাদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন করেন। সেখানে বলা হয়, ওই জমিটিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে।

এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ মার্চ সে সময় এসিল্যান্ডের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইবাদত হোসেন স্বরূপদাহ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। ২১ মার্চ স্বরূপদাহ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়া নাগরিকত্ব সনদপত্র অনুযায়ী জোনাব আলী স্বরূপদাহ ইউনিয়নের গয়ড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন বলে উল্লেখ করেন।

প্রতিবেদন পেয়ে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা রনি আলম নূর বিজিবি এবং জমির রেকর্ড দাবিদার উভয় পক্ষকে আগামী ১০ এপ্রিল মঙ্গলবার নিজেদের সপক্ষে থাকা কাগজপত্র নিয়ে তার দপ্তরে হাজির হওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে মাশিলা বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গাছ কাটা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘জমিটি সরকারি সম্পত্তি এবং সেখানে একজন ভারতীয় নাগরিক বসবাস করত। তাকে উচ্ছেদ করে জমিটি দখলে নেওয়া হয়েছে।’ এভাবে গাছ কাটা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিতে অপারগতা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

এ বিষয়ে বিজিবির যশোর ব্যাটালিয়নের সিও লে. কর্নেল আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘জমিটিতে একজন ভারতীয় নাগরিক বসবাস করতেন। সরকারি জমি হওয়ায় ওই ভারতীয় নাগরিককে উচ্ছেদ করে জমিটি দখলে নেওয়া হয়েছে।’ এভাবে গাছ ও বাঁশঝাড় কাটা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওখানে অপরাধীরা যেন আস্তানা গাড়তে না পারে, সে জন্য গাছ ও বাঁশঝাড় কেটে ফেলা হয়েছে।’

এদিকে, কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর মিসকেসটি নিষ্পত্তি ও নামপত্তন অনুমোদন করেছেন তৎকালীন চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নার্গিস পারভীন। তিনি বর্তমানে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

জানতে চাইলে নার্গিস পারভীন বলেন, কাগজপত্র দেখেই বিয়ষটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। একজনের মালিকানাধীন জমি থেকে এভাবে গাছ কেটে নেওয়া আইনসম্মত নয় বলে মত দেন সরকারি কর্মকর্তা নার্গিস পারভিন।

চৌগাছা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রনি আলম নূর বলেন, বিজিবির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরূপদাহের সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেটি পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উভয় পক্ষকে তাদের কাগজপত্র নিয়ে আগামী ১০ এপ্রিল মঙ্গলবার আসার জন্য পত্র দেওয়া হয়েছে।



রাইজিংবিডি/যশোর/৫ এপ্রিল ২০১৮/বি এম ফারুক/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়