ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সম্ভাবনাময় তরুণ তুর্কিরা : পর্ব-১

আমিনুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ২৯ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সম্ভাবনাময় তরুণ তুর্কিরা : পর্ব-১

মুস্তাফিজুর রহমান, কাগিসু রাবাদা, মিচেল স্যান্টনার ও বাবর আযম

আমিনুল ইসলাম : আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ক্ষণগনণা চলছে অনেকদিন ধরে। সময়ের হিসাবটা বলতে গেলে ঘণ্টায় নেমে এসেছে। দরজায় কড়া নাড়ছে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির অষ্টম আসর। ৭২ ঘণ্টারও কম সময় পর পর্দা উঠবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির।

আইসিসির এমন বড় মঞ্চে কেউ শেষবারের মতো খেলে একপ্রকার বিদায় নেন। আবার কেউ মহাসমারোহে আগমণী বার্তা দেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির অষ্টম আসর হতে পারে কিছু খেলোয়াড়ের শেষ আসর। আবার বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড়ের প্রথম আসর। তাদের নিয়েই রাইজিংবিডি ডটকমের আজকের আয়োজন।

এবারই যারা প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে সম্ভাবনাময় তরুণদের দেখে নেওয়া যাক। ক্রিকেট বিশ্বের তরুণ তুর্কিদের নিয়ে করা প্রতিবেদনের প্রথম পর্বটি আজ তুলে ধরা হল।

১. মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ) : বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে তার মতো এমন ধারালো বোলার আগে আসেনি। এমনটা অনেকেই বলে থাকেন। হয়তো ভুল কিছু বলেন না তারা। তার যে গতি, নিখুঁত লাইন-লেন্থ ও নিপুণ বোলিং সেটা মুগ্ধ করেছে সকল ক্রিকেটবোদ্ধাদের। তার কাটারে দিশেহারা হয়েছেন বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা। বোলিংটাও যে উপভোগ্য হতে পারে সেটা মুস্তাফিজের মাধ্যমেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটপ্রেমীরা। মুস্তাফিজের মতো একজন বোলার শুধু বাংলাদেশ কেন, ক্রিকেট বিশ্বের জন্যই বিশেষ কিছু। এই স্পেশাল ওয়ান এবারই প্রথম খেলতে যাচ্ছেন আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। নিঃসন্দেহে তার দিকে নজর থাকবে ক্রিকেট বিশ্বের। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশাও থাকবেই।

২০১৫ সালে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হয় মুস্তাফিজের। তার অসাধারণ বোলিংয়ে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। সেবার মুস্তাফিজ তিন ম্যাচে ১৬ উইকেট নেন। ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় কোনো বোলার হিসেবে অভিষেকে প্রথম তিন ওয়ানডের প্রত্যেকটিতে ৫টি কিংবা তার বেশি উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখান তিনি। তরুণ এই তুর্কি যদি ইনজুরি মুক্ত থাকতে পারেন তাহলে ক্রিকেট বিশ্বকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে তার। তার আগে আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও তার কাছ থেকে বাংলাদেশ বিশেষ কিছু প্রত্যাশা করবে।

২. কাগিসু রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা) : বয়স তার মাত্র ২১। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি তার অবস্থান সৃষ্টি করে ফেলেছেন। দারুণ গতি, সেই সঙ্গে সুইং, ইয়র্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে নিপুণতা এবং বুদ্ধিদীপ্ত বাউন্স দেওয়াটা তাকে আলাদাভাবে চিনিয়েছে। সম্পৃদ্ধ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিং আক্রমণকে।

রাবাদা প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। সেবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে ২৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে হৈচৈ ফেলে দেন। ওই আসরে পাঁচ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তিনি।

২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় তার। ওই সফরেই টেস্টেও অভিষেক হয় এই তরুণ তুর্কির। অভিষেক টেস্টে ১৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে দারুণ একটি কীর্তি গড়েন তিনি। ১৬ রানে ৬ উইকেট যেকোনো বোলারের অভিষেক টেস্টের সেরা ফিগার। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অভিষেক টেস্টে দ্বিতীয় কোনো বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করারও কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন তিনি। প্রথম হ্যাটট্রিকটা অবশ্য করেছিলেন বাংলাদেশের তাইজুল ইসলাম। সেই থেকে কাগিসু রাবাদা দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিংয়ে নেতৃত্বস্থানে রয়েছেন। ফ্রন্ট লাইনে থাকবেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও

৩. মিচেল স্যান্টনার (নিউজিল্যান্ড) : বাম হাতি এই অলরাউন্ডার নিউজিল্যান্ড দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন। ২০১৫ সালে অভিষেক হয় ২৫ বছর বয়সী এই তারকার। ডেনিয়েল ভেট্টরির অবসরের পর মিচেল স্যান্টনারের মধ্যে ভেট্টরির ছায়া দেখতে পান অনেকে।

অভিষেকের পর এ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের হয়ে ১৫টি টেস্ট, ৩২টি ওয়ানডে ও ১৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৬ সালে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার পারফরম্যান্স নজর কাড়ে ক্রিকেট বিশ্বের। বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড তাদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেটে মাত্র ১২৬ রানের পুঁজি পায়। সেই রান তাড়া করতে নেমে ভারত ১৮.১ ওভারে অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৭৯ রানে! ওই ম্যাচে স্যান্টনার ১১ রান দিয়ে চার-চারটি উইকেট নিয়েছিলেন। যেটা তার টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।

সেই থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবুজ গালিচায় দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছেন তিনি। ক্যারিশমা দেখিয়ে চলছেন বল ও ব্যাট হাতে সমান তালে। হয়ে উঠেছেন নিউজিল্যান্ডের সম্পদ। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তরুণ এই তুর্কি বিশেষ কিছু করে দেখাবেন তেমনটাই প্রত্যাশা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটপ্রেমীদের।

৪. বাবর আযম (পাকিস্তান) : তরুণ এই ব্যাটসম্যান ক্রিকেট পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। কামরান আকমল, উমর আকমল ও আদনান আকমল তার কাজিন হন। ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ে যখন পাকিস্তান সফর করে তখন অভিষেক হয় ২২ বছর বয়সী এই তরুণ ক্রিকেটারের। অভিষেকে ঘরের মাঠের দর্শকদের সামনে ৬০ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।

তার আগে ২০১২ সালে তিনি আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০১২ যুব বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। ৬ ম্যাচে তিনি করেছিলেন ২৮৭ রান। যার গড় ছিল ৫৭.৪০। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস, কেভিন পিটারসেন, জনাথন ট্রট ও কুইন্টন ডি ককের পাশাপাশি ওয়ানডেতে দ্রুততম ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন আযম।

২০১৬ সালে তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষের সিরিজে টানা তিন ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করে হৈচৈ ফেলে দেন ক্রিকেট বিশ্বে। তার ব্যাটে ভর করে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশ করে পাকিস্তান। তিন ম্যাচের তিনটিতেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার পাশাপাশি ম্যান অব দ্য সিরিজও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

তিন ম্যাচে ৩৬০ রান করে সেবার তিনি ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন কুইন্টন ডি কককে। তিন ম্যাচের দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে যা ছিল সর্বোচ্চ রান। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও তার ব্যাট থেকে দারুণ কিছু প্রত্যাশা করবে পাকিস্তানের ক্রিকেটপ্রেমীরা।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ মে ২০১৭/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়