ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘ছাওয়াক পেটোত থোওয়াই হইছে পাপ’

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ছাওয়াক পেটোত থোওয়াই হইছে পাপ’

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর: ‘ছাওয়াক (ছেলে) পেটোত থোওয়াই হইছে পাপ। আগত জানলে পেটোতই মারি ফিলতাম। সম্পত্তির লোভত ছাওয়া কেমন করি মাক মারি ফেলবার চায়।’

বলছিলেন মা ফরিদা বেগম (৬০)। তিনি এখন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১৬ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।  চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পেয়ে এই মাকে হত্যার চেষ্টা করেছে তারই সন্তান মাসুদ (২৮)।

শনিবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মায়ের শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন। চোখ-মুখ-গলা ফুলে গেছে। মুখের দুটি দাঁত ভেঙ্গে গেছে। ব্যাথায় কথা বলতে পারছিলেন না। এই অবস্থা করেছেন তারই পেটের সন্তান মাসুদ।

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার গভীর রাতে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের কালিগঞ্জ ওয়াপদাপাড়া এলাকায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মা ফরিদা বেগমকে ওই রাতেই রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ফরিদা বেগমমের স্বজনরা জানান, ওই এলাকার সাবেক সেনা সদস্য মকবুল হোসেন প্রায় চার বছর পূর্বে মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ফরিদা বেগম (৬০), দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে যান। ইতিমধ্যে মৃত মকবুল হোসেনের সন্তানদের বিয়ে হলে তারা আলাদা হয়ে যান। বাড়িতে একাই থাকতেন ফরিদা বেগম। তার নামে বাড়িসহ কিছু জমি-জায়গা থাকায় তা আয়ত্বে নিতে প্রায়ই মায়ের ওপর নির্যাতন চালায় ছেলে ফরিদুল ইসলাম মাসুদ। বুধবার সে তার মায়ের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেছিল। তা না পেয়ে গভীর রাতে সে মা ফরিদা বেগমকে মারপিটসহ শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে।

স্বজনরা আরো জানান, মাসুদ ছোটবেলা হতেই উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির। তার বাবা মারা যাওয়ার পর এক সময় চুরিতেও জড়িয়ে পড়ে। তারপর সে এলাকায় ধার-দেনা শুরু করে। দেনা পরিশোধ করতে না পেরে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় যায়। বর্তমানে ঋণের চাপে সে বাড়িতেও ঠিকমত আসতে পারেনা। বুধবার গোপনে এসে মাসুদ তার মায়ের কাছে টাকা দাবি করে। না পেয়ে রাতে সে তার মায়ের ওপর বর্বর নির্যাতন চালায়।

মৃত সেনা সদস্যের ভাই আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বুধবার রাত প্রায় একটার দিকে মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোনে ফরিদা ভাবীর কন্ঠে শুনি ভাই আমাকে বাঁচাও। ভাবীর এমন কথা শুনে বিপদ ভেবে পরিবারের সবাই মিলে সেখানে গিয়ে ভাবীকে বাড়ির আঙ্গিনায় প্রায় জ্ঞানহীন ও বিবস্ত্র অবস্থায় দেখি। রাতেই তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই।’

জলঢাকা থানার ওসি (তদন্ত) বিশ্বদেব রায় বলেন, ‘পুত্র কর্তৃক মাকে মারপিট করে দুটি দাত ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এমন খবর আমরা পেয়েছি। শনিবার সকালে আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি।  তারা সরেজমিন পরির্দশন করে আসার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’



রাইজিংবিডি/রংপুর/২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮/নজরুল মৃধা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়