ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী প্রতিবন্ধী যুবক শ্যামল

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী প্রতিবন্ধী যুবক শ্যামল

ছাগল চরাতে যাচ্ছেন বাকপ্রতিবন্ধী শ্যামল বাগচী

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় গ্রামের প্রতিবন্ধী শ্যামল বাগচী (১৮)। তাকে মাত্র চার বছর আগেও হতাশা আর অন্যের ওপর নির্ভর করে চলতে হয়েছে। মা আর ভাইদের সংসারে যেন বোঝা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। অর্ধাহারে-অনাহারে কোনোভাবে দিন কাটত তার।

ছাগল পালন করে সেই জন্ম প্রতিবন্ধী যুবক শ্যামল বাগচী এখন স্বাবলম্বী । প্রতিবছর ছাগল বিক্রি করে আয় করছেন অন্তত ৫০ হাজার টাকা। প্রতিবন্ধী ভাতা না পেয়েও স্বাবলম্বী হওয়া যায়, শ্যামল তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

জলিরপাড় গ্রামবাসী জানান, ১২ বছর আগে বাবা মৃত লালমোহন বাগচী মারা যাওয়ার পর চরম আর্থিক অনটনে পরে তিন সদস্যের বাগচী পরিবার। অন্যদিকে জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী হওয়ায় শ্যামলকে শুনতে হতো নানান কথা।ঠিকভাবে সে চলাচল ও কথা বলতে এবং ভারী কাজ করতে না পারায় শ্যামলকে বাবা-মা ছোটবেলায় মরা বলে ডাকত। এলাকায় এখন শ্যামল সেই মরা নামেই বেশি পরিচিত। বড় ভাইয়েরা সংসার থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ায় বিধবা মা ও ছোট বোনকে নিয়ে বিপাকে পড়েন শ্যামল। কোনোভাবে দিনমজুরি করে ও নিকটবর্তী জুট মিলে শ্রম দিয়ে তার মা শ্যামল ও ছোট বোনকে নিয়ে সংসার চালিয়ে আসছিলেন।

তিন বছর আগে প্রতিবেশীদের গরু-ছাগলের খামার দেখে ধারদেনা করে শ্যামলকে দুটি ছাগল কিনে দেন তার মা। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ছয় মাস অন্তর ছাগল বাচ্চা দেওয়ায় বাড়তে থাকে ছাগলের সংখ্যা। এখন তার খামারে রয়েছে প্রায় ৩০টি ছাগল। লালনপালনের কাজ একাই করছেন শ্যামল।

তবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় প্রায় সময়ই সমস্যায় পড়তে হয় শ্যামলকে। তাই পরিবারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে শ্যামলকে সাহায্য করেন বৃদ্ধা মা ও স্কুল পড়ুয়া বোন। ছাগল বিক্রির আয়ে সংসারে অর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসায় সবাই এখন শ্যামলের ওপর খুব খুশি।

ঠিকভাবে কথা বলতে না পারলেও অাধো কণ্ঠে শ্যামল জানায়, ‘আমার পক্ষে কষ্টের কাজ করা সম্ভব নয়। তাই ছাগল পালন করছি। এই কাজ করেই ভবিষ্যৎ জীবন পার করতে চাই। সাহায্য পেলে ভবিষ্যতে আরো বড় করে ছাগল পালন খামার গড়ে তুলব।’

শ্যামলের মা ঊষা বাগচী ও বোন আঁখি বাগচী জানান, অনেক কষ্ট আর ধারদেনা করে দুই ছাগল কিনে দিয়েছিলেন তারা। ওই ছাগল থেকে এখন ৩০টি ছাগল হয়েছে। সরকারি সাহায্য পেলে খামারটি বড় করতে পারবে শ্যামল।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিবন্ধী যুবকরা এখন সমাজের বোঝা নয়। ইচ্ছে করলেই সংসারে ভালো করতে পারে। পরিশ্রম করে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যায়। শ্যামল তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

গোপালগঞ্জ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতাউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘গরু-ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। শ্যামল আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ছাগলের জন্য ওষুধ ও ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’

 

 

রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/৩ ডিসেম্বর ২০১৬/বাদল/টিপু/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়