ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ছোটবেলায় অত্যাচারী ছিলাম : বাঁধন

কবি স্বরলিপি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪২, ২৮ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছোটবেলায় অত্যাচারী ছিলাম : বাঁধন

আজমেরী হক বাঁধন

আমার আব্বু সরকারি চাকরিজীবী। আব্বুর চাকরির সুবাদে আমাদের বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হতো। আমি যখন এসএসসি পরীক্ষা দিব, তখন আব্বুর ঢাকায় পোস্টিং হয়। আমরা ঢাকায় চলে আসি।

আমার নানুর বাড়ি রায়ের বাজার। আমরা তিন ভাই-বোন। আমি বড়। আর আমার ছোট দুই ভাই আছে। ঈদুল ফিতরে আমরা সাধারণত নানুর বাসায় ঈদ উদযাপন করতে যেতাম। ঈদের দিন আমার প্রধান উদ্দেশ্যই থাকত ‘সালামি নেব’। সমবয়সি ভাই-বোনদের সঙ্গে ঘুরার জন্য বের হবো। বিভিন্ন বাসায় যাবো। আর আমি ছিলাম গ্যাংলিডার। সবার কাছ থেকে সালামি নেওয়া শেষ হলে আমরা একসঙ্গে বসে হিসাব করতে শুরু করে দিতাম। কার কত টাকা হলো এই হিসাব করতাম। এটা একটা আলাদা মজা ছিল।

আমার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর। কোনো কোনো ঈদে বিক্রমপুরে যেতাম। ওখানে অন্যরকম মজা হতো। আমাদের গ্রামের মসজিদ থেকে আমিত্তি দেওয়া হতো। আমার সবচেয়ে পছন্দের মিষ্টি হচ্ছে আমিত্তি। আমার জন্য আমিত্তি আনতে আব্বু ভুল করতেন না।

ঈদের সেমাই মানেই তো নস্টালজিক। প্রতিদিনের থেকে আলাদা। একটু যেন অন্যরকম। মিষ্টি জাতীয় খাবার এমনিতেই আমার অনেক প্রিয়। বিশেষ করে আমার চাচীর হাতের লাচ্ছি সেমাই। যে ঈদে বিক্রমপুর যাওয়া হতো না সে ঈতে চাচীর হাতের সেমাই খুব মিস করতাম।

আমার মনে হয় কি.. ছোটবেলায় আসলে আর কোনো চিন্তা থাকে না। কেবল নিজেই নিজের। নিজের চিন্তা-নিজের জগৎ; নিজের ফান। অনেক সাজগোজ করতাম। খাওয়ার সময় কিছু মনে থাকত না, খাচ্ছি আর খাচ্ছি। পেট ভরে গেলে মনে হতো কখন ক্ষুধা লাগবে। সেই আবেগ-সেই উচ্ছ্বাস-সেই আমি আর কোনো কিছুই আগের মতো নেই। যা আছে তা শুধু স্মৃতি।

সেই আমি এখন অন্যকে লালন করি। তার আবদার পূরণ করার মাধ্যমে সুখ কুড়িয়ে নেই। নিজের ছোটবেলাটা খুব মিস করি।

আমি ছোটবেলায় খুব অত্যাচারী ছিলাম! যে পোশাকটা লেটেস্ট ছিল, সেইটা পাওয়ার জন্য বায়না করতাম। আব্বু সাধ্যমতো চেষ্টা করতেন। কিন্তু দেখতাম যে ঈদে আব্বু নতুন পোশাক খুব একটা নিতেন না। তখন আমার মনে হতো-ইস্ আব্বু কেমন? নিজে টাকা রোজগার করে অথচ নতুন জামা নেন না। আরো মনে হতো- আমি যখন টাকা রোজগার করবো তখন আমি নিজের জন্য শুধু…জামা-কাপড় কিনবো। এখন এসে মনে হয়-আমি আসলে ধীরে ধীরে আব্বুর জায়গায় চলে আসছি। এখন আমি আব্বুর জন্য পোশাক কিনতে ভুলি না- তারপর আমার সন্তানের যা যা দরকার তাই কিনি।

এখন শুটিংয়ের জন্য এত পোশাক বানাতে হয় যে, কাপড়ের প্রতি ফ্যাসিনেশনটা চলে গেছে। ঈদ আসলে নতুন কাপড় কিনবো-পরবো ওই ইচ্ছেটা খুব একটা থাকে না। এমন একটা সেক্টরে কাজ করি যেন প্রতিদিনই উৎসব। তাছাড়া বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভালো লাগাগুলোও পরিবর্তন হয়।

আমার একটা চিন্তা থাকে, উৎসবে আমি আর আমার মেয়ে ম্যাচিং পোশাক পরবো। এবারো তাই হয়েছে। এখনতো মেয়ের কথা আগে মনে পড়ে। এখনতো ওর সময়। ওর জগৎ ওর মনের মতো করে রাঙিয়ে দিতে পারলেই আমার স্বার্থকতা। নিজের কথাটা সবার পরে মাথায় আসে।

আর আব্বুর প্রতি ছোটবেলায় যে অত্যাচার করেছি তার জন্য যেমন আনন্দ পাই, তেমন আব্বুকে স্যরিও বলতে চাই। কোনো কোনো আবদার মেটাতে না পারলে আব্বু কষ্ট পেতেন। এখন বুঝি।

অনুলিখন : স্বরলিপি



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুন ২০১৭/শান্ত/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়