ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি

জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫০, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন

রাজধানীসহ দেশের আট জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালানোর পর ৪০ শতাংশ চিকিৎসকের অনুপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে। এরমধ্যে ঢাকার তিনটি হাসপাতালে ১১ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরের সাতটি হাসপাতালে ৬২ শতাংশ চিকিৎসকের অনুপস্থিত থাকার কথা জানিয়েছে দুদক। এছাড়া রোগীর স্বজনের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মো. আবু মুছা মিঞা নামের এক কর্মচারীকে দুদকের সুপারিশে বরখাস্ত করা হয়।

দুদক সম্প্রতি যেসব হাসপাতালে অভিযান চালায় সেগুলো হচ্ছে- ঢাকার কর্মচারী কল্যাণ হাসপাতাল, মা ও শিশু সদন এবং মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, রংপুরের পীরগাছা, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাবনা সদর জেনারেল হাসপাতাল, দিনাজপুর সদর, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার ও কুষ্টিয়ার কুমারখালি হাসপাতাল। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর বদলি করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে কোনো কোনো চিকিৎসক একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন।

দুদকের অভিযানে যে চিত্র পাওয়া গেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তবে অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য থেকে স্পষ্ট দেশের উল্লেখযোগ্যসংখক চিকিৎসক তাদের দায়িত্বের প্রতি কতটা উদাসীন কিংবা দায়িত্বে অবহেলা প্রদর্শন করছেন। অনেক দিন থেকেই অভিযোগ রয়েছে অনেক চিকিৎসক রাজধানী ও বড় শহরের বাইরে চাকরি কিংবা কাজ করতে চান না। অনেক চিকিৎসক আছেন যারা প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর রাজধানীতে কাজ করছেন এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। দুদকের এ অভিযানের পর সে বিষয়টিই পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ১১টি সরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনার সময় চিকিৎসকদের কাজের সময়ের রোস্টার পর্যালোচনা করে দেখা হয়। এতে ২৩০ চিকিৎসকের মধ্যে ৯২ জনই অনুপস্থিত, যা মোট চিকিৎসকের ৪০ শতাংশ। ঢাকার বাইরের সাত জেলার হাসপাতালগুলোতে ১৩১ চিকিৎসকের মধ্যে ৮১ জনই অনুপস্থিত ছিলেন, যা মোট চিকিৎসকের প্রায় ৬২ শতাংশ।

এই অভিযানের বিষয়ে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকের অনুপস্থিতির কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা হয়রানির শিকার ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, দুদকের কাছে আসা এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। আগে মফস্বলে চিকিৎসকদের উপস্থিতির ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যেত। কিন্তু এবারের দুদদকের অভিযানের পর দেখা যাচ্ছে, খোদ রাজধানীর হাসপাতালেও অনেকে অনুপস্থিত থাকছেন।

যেসব হাসপাতালে দুদক অভিযান চালায়নি কিংবা চিকিৎসাপ্রার্থীরা দুদকের কাছে অভিযোগ করেননি, সেসব হাসপাতালের অবস্থা ভালো- এমনটি মনে করার কারণ নেই। অভিযান চালালে কম-বেশি এ ধরনের চিত্র পাওয়া যাবে বলে মনে হয়। অভিযোগ রয়েছে, তদবির ও প্রভাব খাটিয়ে অনেক চিকিৎসক বড় শহর বা এর আশপাশে পোস্টিং নিয়ে থাকেন। স্বাস্থ্যসেবার মতো একটি মহৎ পেশার ক্ষেত্রে এ ধরনের অনিয়ম ও অবক্ষয় অত্যন্ত দুঃখজনক। মানবসেবার চেতনা না থাকলে সে চিকিৎসকের চিকিৎসা সেবা পরিত্যাগ করা উচিৎ।

কর্মস্থলে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির বিষয়ে এর আগে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথাও বলেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। এ বিষয়ে দুদক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা ও দায়িত্বে অবহেলাকারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

চিকিৎসকদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকা নিশ্চিত করতে তাঁদের পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কঠোরভাবে বিধিমালা মেনে চলা প্রয়োজন। পাশাপাশি চিকিৎসকেরা যেখানে দায়িত্ব পাবেন, সেখানে তাঁদের নিরাপত্তা এবং কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও চিকিৎসক ও নার্সদের আবাসনের ব্যবস্থা নেই। কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এ বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জানুয়ারি ২০১৯/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়