ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জমি বিক্রি করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জমি বিক্রি করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য

আলী আকবর টুটুল, বাগেরহাট : বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের রাজমিস্ত্রী ছগির হোসেন ভিটে বিক্রি করে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

মাত্র পাঁচ কাঠা জমির মধ্যে তিন কাঠা বিক্রি করে ছগির হোসেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থেকে ভাস্কর্য তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছেন।

ছগিরের নিজ হাতে তৈরি এ ভাস্কর্য স্থানীয়দের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন এ ভাস্কর্য দেখতে ছুটে আসছেন অনেকে। এলাকাবাসী ছগির হোসেনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

ছগির বলেন, ‘আমার নিজের হাতে তৈরি ভাস্কর্যটি বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চাই। তাহলে আমার আশাটুকু পুর্ণ হবে।’

এলাকাবাসী জানান, শরণখোলা উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের রাজমিস্ত্রী ছগির হোসেন বঙ্গবন্ধুর দেশ স্বাধীনের ইতিহাস শুনতেন মনোযোগ দিয়ে। তখন ছগির হোসেন ছিলেন রাজমিস্ত্রীর সহযোগী। বয়স ১৪-১৫ বছর। এক পর্যায়ে তিনি একই এলাকার প্রতিবন্ধী সুমী বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় জামাইকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় পাঁচ কাঠা জমি। এ জমিতেই ঘর বেঁধে সংসার শুরু করেন ছগির হোসেন। তিন সন্তানের জনক ছগির সহযোগী থেকে রাজমিস্ত্রী হন।

২০১৬ সালের শুরুতে ছগির হোসেন জানান দেন- তিনি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরি করবেন। কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া ছগির মিস্ত্রীর কাছে এমন কোনো সঞ্চয় ছিল না, যা দিয়ে তিনি ভাস্কর্য তৈরি করতে পারেন। অবশেষে সিদ্ধান্ত হয়, পাঁচ  কাঠা জমির থেকে তিন কাঠা বিক্রি করে ভাস্কর্য তৈরি করবেন। সেই অনুযায়ী স্থানীয় একজনের কাছে তিন কাঠা জমি বিক্রি করে ছয় মাস ধরে সাড়ে সাত ফুট উঁচু এবং ৫০০ কেজি ওজনের ভাস্কর্য তৈরি করেছেন। 

ভাস্কর্য নির্মাতা ছগির হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে এলাকার মুরব্বিদের কাছে বঙ্গবন্ধুর দেশ স্বাধীনের ইতিহাস শুনে আমি মনেপ্রাণে ভালোবেসে ফেলি বঙ্গবন্ধুকে। ভাবছিলাম তার স্মৃতি রক্ষায় কিছু করা দরকার। আমি গরিব মানুষ, তাই শ্বশুরের কাছ থেকে পাওয়া জমি বিক্রি করে ভাস্কর্যটি তৈরি করেছি। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য এটি করিনি। শুধু বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীকে ভাস্কর্যটি উপহার দিতে পারলেই আমার মনের আশা পূরণ হবে।’

ছগির হোসেনের স্ত্রী সুমি বেগম বলেন, তিনি স্বামীকে ভাস্কর্য বানানোর কাজে সহায়তা করেছেন। এ জন্য অনেক সময় খেয়ে, না খেয়ে দিন কেটেছে। তাতেও তার দুঃখ নেই। ভাস্কর্যটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে পারলেই আশা পূরণ হবে।

স্থানীয় নলবুনিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, ‘ছগির হোসেন আমার একজন কর্মী। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার ভালোবাসা সকলকে মুগ্ধ করেছে।’ 

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ ডা. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘গরিব মানুষ ছগির মিস্ত্রী নিজের জমি বিক্রি করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন, আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি ভাস্কর্যটি দেখতে যাব। আর তিনি যে আশা করেন, তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানাব।’



রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/বাগেরহাট/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়