ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জলোচ্ছ্বাস আতংকে রাঙ্গাবালীর মানুষ

বিলাস দাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ২১ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জলোচ্ছ্বাস আতংকে রাঙ্গাবালীর মানুষ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি : বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার জনজীবনে দেখা দিয়েছে চরম র্দূভোগ। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে জোয়ারের তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় রাঙ্গাবালী উপজেলার দুইটি দ্বীপের মানুষ এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

বর্ষার কারণে উপকূলে বেড়ে চলেছে পানির চাপ।প্রতিদিনই জোয়ার এবং বৃষ্টির পানি থেকে রেহাই পেতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে । আসন্ন ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি তো দূরের কথা  নিজেদের রক্ষা নিয়েই তটস্থ থাকতে হচ্ছে তাদের।

বর্ষায় পটুয়াখালী জেলার বিচ্ছিন্ন  দ্বীপের মানুষ এমনিতেই পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এবার ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের জীবন হয়ে উঠেছে আরো দুর্যোগপূর্ণ। প্রতিবছরের তুলনায় এবছরের চিত্র আরো ভয়াবহ।

গত ১৩ জুন আকস্মিক ঘূর্ণিঝড় এবং জোয়ারে  অস্বাভাবিক পানির তোড়ে পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ এবং চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের বেরিবাঁধ ভেঙ্গে আগুনমূখা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। অস্বাভিক হয়ে পরে মানুষের জীবন-যাপন।

বিপদগ্রস্তদের একজন দক্ষিণ চরমোন্তাজের জেলে শ্রমিক মাহবুল গাজী বলেন, “ঝড়ে মোগ ঘর উড়াইয়া নেছে। এ্যাহন মাইয়া লইয়া খোলা আকাশের নিচে দিন-রাইত পার হরি। আয়-রোজগার নাই। ঘর কি দিয়া ঠিক হরমু। তাই পলিথিন দিয়া জোড়া-তালি দেই। দ্যাওইর পানিতে কাতা-বালিশ হগোল ভিজ্জা গ্যাছে। রাইতে কি কইরা ঘুমামু? এ্যার আগেও মোগ ঘর একবার উড়াইয়া নেছেলো। কয়দিন বাদে ঈদ। মাইয়াডারে কিছু কিন্না দিমু হ্যারো কোন রাস্তা দেহিনা”।

দক্ষিণ চরমোন্তাজ গ্রামের মৃত লাল গাজীর স্ত্রী কলমজান বিবি (৭০) জানান, নাতি-পুতি পোলাপান লইয়া ৮ জন সংসারের সদস্য। এর মধ্য ৬ মাসের শিশুসহ তিন জন শিশু রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে তাদের ঘরটি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে তারা সকলে আকাশের নিচে বাস করছেন।   আশ্রয়হীন হওয়ায় রোজা রাখতে পারছেনা তিনি। ঈদ তো দূরের কথা, বর্তমানে আয়-রোজগারই বন্ধ।

মধ্য চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ এলাকার  মো. সাহাবুদ্দিন হাওলাদার (৫০), মো. করিম ঢালী (৫৫) জানান,  প্রতিদিন দুই দফা জোয়ারের পানি উঠে তাদের জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। অনিশ্চয়তার মধ্য এই দ্বীপে কয়েক হাজার মানুষ বসবাস করছে। শিগগিরই বেরিবাঁধ মেরামত না হলে  তাদের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।

চরমন্তাজ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়া জানান,  চরমোন্তাজের ১,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের বেরিবাঁধ ভেঙে গ্রামগুলোতে এখন সাগরের পানি ওঠা-নামা করছে। প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার মানুষকে ২৪ ঘন্টায় দুই দফা পানির সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। বিপদ দুইদিকেই, একদিকে জোয়ারের লবণ পানি আরেকদিকে বৃষ্টি। এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাসরতদের কিছু পরিবারকে জেলা প্রশাসন থেকে  চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাও যথেষ্ঠ নয়।

চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নে পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান জানান, অতিরিক্ত জোয়ারের পানির কারণে  অন্তত দুই শতাধিক মানুষ বেরিবাঁধের উপড়ে ঝুপড়ি বানিয়ে বাস করছে। এখানের মানুষ বর্তমানে আতংকে জীবন-যাপন করছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড়ে আঘাত হানার পরেই তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় গিয়েছেন এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে তাদের ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের একটি তালিকা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন তাদের সহযোগীতা করবে। বেরিবাঁধ মেরামত নিয়েও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও জেলা প্রশাসকের সাথে কথা হয়েছে। শীঘ্রই বেরিবাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. মাছুমুর রহমান জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সবাইকে চাল দেওয়া হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ইতিমধ্যে চাল দেওয়া হয়েছে।

 

 

রাইজিংবিডি/২১ জুন ২০১৭/বিলাস দাস/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়