ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জিপিএ-৫ পাওয়া জুয়েলের আনন্দ বিবর্ণ

রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ১৫ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জিপিএ-৫ পাওয়া জুয়েলের আনন্দ বিবর্ণ

জিপিএ-৫ প্রাপ্ত জুয়েল মিয়া

রফিক সরকার, কালীগঞ্জ  : এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অন্যসব জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মতো আনন্দ উৎসবে মেতে উঠতে পারেনি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জুয়েল মিয়া।

পরীক্ষায় ভাল রেজাল্টে শিক্ষক, পরিবার, প্রতিবেশি সবার অভিনন্দন-উচ্ছাসে কিছুক্ষণের জন্য আনন্দে ভাসলেও ভবিষ্যৎ চিন্তায় ফিকে হয়ে গেছে সে আনন্দ। থেমে গেছে মুখের হাসি।ঘুরেফিরে একটি প্রশ্নই মনে আসছে তার, ‘উচ্চ শিক্ষা চালাতে পারবো তো?’

কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র জুয়েল মিয়া বানিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

জীবনযুদ্ধে ব্যস্ত জুয়েলের মা ছোলেমা বেগম অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজে ব্যস্ত। আর বাবা রফিকুল ইসলাম ব্যস্ত অন্যের জমিতে চাষের কাজে । রোজগার যা করেন তা মা ছোলেমাই। বাবার রোজগারও তেমন নয়। ২ ভাই ৩ বোনের সংসার। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ভাই সোহেল মিয়া এক সময় সংসারের হাল ধরে ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সেই বড় ভাইও মানসিক সমস্যায় চিকিৎসা না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাবন করছে। যেখানে পুরো পরিবারের দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোটে না । অভাবে জর্জরিত পরিবারে এই ছেলেটির জিপিএ-৫ পাওয়া নিয়ে কোন আনন্দ নেই তাদের। বরং লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে কিনা সে শঙ্কায় শঙ্কিত।

উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চুয়ারীয়াখোলা গ্রামে একচালা জরাজীর্ণ ঘরে বাস করে জুয়েলদের পরিবার। ২০১১ সালেও পিএসসি’তে জিপিএ-৫ পায় জুয়েল। জেএসসি দেওয়ার আগে পরিবারের অভাব-অনটনের কথা ভেবে লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করে সে। পরে নিজেকে স্থির করে জেএসসি পরীক্ষা দেয় ২০১৪ সালে। ফলাফল জিপিএ-৪.৩৯। আর এ ফলাফলের জন্য মাঝ পথে লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তই দায়ী।

এসএসসির জন্য পূর্ণ উদ্যোমে শুরু করে লেখাপড়া। নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে জুয়েল স্থানীয় একটি সমিতিতে কাজ শুরু করে এবং ৯ম শ্রেনি থেকেই প্রাইভেট পড়ানো শুরু করে। এভাবে এসএসসিতে দারিদ্র জয় করে সফল হলেও উচ্চ শিক্ষার জন্য কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে এখন শঙ্কিত জুয়েল।

সমাজের বিত্তবান এমন কারো সহযোগিতা পেলে হয়তোবা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন তিনি।

জুয়েল ভবিষ্যতে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কারণ নিজে প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে বুঝেছেন শিক্ষকতাই মহান পেশা। আর এই স্বপ্নপূরণে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন জুয়েল।

দক্ষিণ চুয়ারীয়াখোলা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ও খুবই মেধাবী ও ভদ্র একজন ছেলে। তবে ওরা খুব দরিদ্র। সমাজের বিত্তবানরা সহযোগিতা করলে হয়তো ছেলেটির লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। অন্যথায় একজন মেধাবী ছেলের মেধার অপমৃত্যু হবে।’

তুমলিয়া বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রাদার লিটন ফ্রান্সিস রিবেরু বলেন, ‘জুয়েল এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে ভেবেছি। কিন্তু এতো ভাল করবে ভাবিনি। দরিদ্র এই ছেলেটির উচ্চ শিক্ষায় কোন বিত্তবান মানুষ এগিয়ে আসলে হয়তো লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারবে।’

 

 

রাইজিংবিডি/কালীগঞ্জ (গাজীপুর)/১৫ মে ২০১৭/রফিক সরকার/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়