ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

জীবন ফিরে পাবে ক্লিনিক্যালি মৃত রোগীরা!

মোখলেছুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ৭ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জীবন ফিরে পাবে ক্লিনিক্যালি মৃত রোগীরা!

প্রতীকী ছবি

মোখলেছুর রহমান : বায়োকোয়ার্ক নামক একটি স্টার্ট-আপ (নতুন উদ্যোগ) কোম্পানি স্টিম সেল ব্যবহার করে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কারণে মৃত রোগীদের জীবন ফিরে আনার একটি পরীক্ষা শুরু করেছে। তবে তাদের এই প্রচেষ্টা অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের কাছে অনেক বৈজ্ঞানিক ও নৈতিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

বিশ্বে প্রথমবারের মতো মানব মাথার প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ থেকে শুরু করে বার্ধক্যের সঙ্গে লড়াই করা-চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রের গবেষখরা নতুন নতুন লক্ষ্যে কাজ করছেন। আর এখন মৃত্যুকেই দমিয়ে রাখতে চাইছে গবেষকরা। গবেষকরা মনে করছেন মানব দেহের চিকিৎসায় ক্রমবর্ধমান সাফল্যই তাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্থাপন করতে অনুপ্রাণিত করেছে।

বায়োকোয়ার্ক নামক এই কোম্পানিটি প্রত্যাশা করছে যে, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কারণে ক্লিনিক্যালি মৃত মানুষকে তারা আবার জীবিত করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া ভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানিটির এই প্রকল্পটি এই বছরের শেষের দিকে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই ট্রায়ালটি মূলত ২০১৬ সালে ভারতে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রকরা তখন সেটি বন্ধ করে দেয়। বর্তমান পরিকল্পনাটিও ধীরে ধীরে আগের পরিকল্পনামাফিকই হবে, যেখানে তারা ২০ জনের মতো রোগীর একটি তালিকা করবে, যাদেরকে এই প্রজেক্টের অধীনে বিভিন্ন চিকিৎসা দেয়া হবে।

প্রথমে স্টেম সেল ইনজেকশনটি দেয়া হবে যে স্টেম সেলগুলো রোগীর নিজের রক্ত বা চর্বি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। পরবর্তীতে, একটি প্রোটিন মিশ্রণ সরাসরি ইনজেকশনের মাধ্যমে স্পাইনাল কর্ডে  প্রবেশ করানো হবে যেন নতুন নিউরোনগুলো বৃদ্ধি পায়। এরপর রোগীর লেজার থেরাপি ও স্নায়ুর উদ্দীপনা ১৫ দিন ধরে  অনুসরণ করা হবে যে, নতুন নিউরোনগুলো শরীরের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে কিনা। পরবর্তীত চিকিৎসার ফলে যেকোনো লক্ষণের জন্য গবেষকরা রোগীর আচরণ এবং ইইইজি উভয়ই নিরীক্ষণ করবেন।

কিন্তু বায়োকোয়ার্ক এর এই নতুন উদ্যোগ ইতিমধ্যে অনেক বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে।

যদিও এড কুপার নামের একজন গবেষকের মতে, এই ক্ষেত্রে কয়েক ডজন কেস স্টাডিজ রয়েছে যেখানে এই কৌশলটি ব্যবহার করে কোমায় থাকা রোগীর ক্ষেত্রে কিছু সাফল্য পেয়েছেন তারা।

তবে কোমা এবং মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত মৃত্যু এক নয়। দুটি একেবারে ভিন্ন বিষয়। যার ফলে বায়োকোয়ার্ক এর এই নতুন উদ্যোগ অধিকাংশ গবেষকদের মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

কিভাবে ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারী নিজের সম্মতি দিবেন? কিভাবে গবেষকরা তাদের গবেষণার কাজ সম্পন্ন করবেন? কিভাবে অংশগ্রহণকারীকে আইনগত ভাবে মৃত ঘোষণা করবেন? এবং কিভাবে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত মৃত্যু নিশ্চিতভাবে নিশ্চিত করা হবে?-এ ধরনের বহু প্রশ্ন গবেষকদের মনে উদয় হয়েছে এই প্রজেক্ট নিয়ে।

যদি রোগীর মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ফিরে আসে তাহলে কি হবে এবং রোগীর মানসিক অবস্থা তখন কী হবে? এ ধরনের বহু প্রশ্নের উত্তর এখনো মিলেনি।

২০১৬ সালে, নিউরোলজিস্ট আরিয়েন লেউইস এবং জৈবিক তাত্ত্বিক আর্থার ক্যাপেলন ক্রিয়েটিক্যাল কেয়ারে লিখেন, ‘এই উদ্যোগ সন্দেহজনক, এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ও নেই এবং এটি নৈতিকভাবেই সন্দেহজনক, সম্পূর্ণ অনৈতিক প্রকৃতির একটি উদ্যোগ।’

কুপার নিজেও মনে করেন, এই পদ্ধতিটি মস্তিষ্কের ওপর কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।

তবে বায়োকোয়ার্ক এর এই কাজের সঙ্গে জড়িত নয়, এমন একজন পেডিয়াট্রিক সার্জন চার্লস কক্স বলেন, এই উদ্যোগটি সফল হবেই এমনটি আমিও মনে করছি না। তবে কোনো কিছু না করার চাইতে চেষ্টা করে যাওয়া ভালো। তাদেরকে সেই চেষ্টাটা করার সুযোগ দেয়া যেতে পারে।’

তথ্যসূত্র : সায়েন্স অ্যালার্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জুন ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়