ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জোছনা উৎসব: চাঁদের আলোয় গল্প করার দিন

খায়রুল বাশার আশিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ১৯ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জোছনা উৎসব: চাঁদের আলোয় গল্প করার দিন

ফাইল ফটো

খায়রুল বাশার আশিক: প্রকৃতিতে কুয়াশাভেজা শীতের আমেজ। শান্ত নদীর বুকে আপনাকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে একটি জলযান। গন্তব্য বরগুনার প্রধান তিননদী- পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর। যেখানে সাগরে মিশেছে ঠিক সেই জলমোহনা। সেই মোহনাতে রুপালি চাঁদের আলোয় সাজানো হয়েছে একটি আয়োজন- রুপালি চাঁদের উৎসব। এই উৎসবটির নাম জোছনা উৎসব। সেখানে আকাশ থেকে মাটি অবধি চাঁদের আলো রুপালি রঙের গালিচা বিছিয়েছে আপনার আগমনের প্রত্যাশায়। ভরা পূর্ণিমার জোছনা দেখছেন আপনি। শুনছেন গান, কবিতা, পুঁথি। রুপালি চাঁদ তখন উঁকি দেবে আপনার মনের কল্পনার জানালায়। আপনাকে নিয়ে যাবে ফেলা আসা হাজারো সেই স্মৃতির দুয়ারে। মনে করিয়ে দেবে আরতি মুখোপাধ্যায়ের সেই গান-‘এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে এসো না গল্প করি।’

এটি জোছনা রাতকে কেন্দ্র করে একটি উৎসব। দেশের উপকূলীয় প্রত্যন্ত জেলা বরগুনায় জোছনা রাতে চাঁদের আলো সঙ্গী করে আয়োজিত এই উৎসব বেশ সাড়া ফেলেছে। বরগুনার সাংবাদিক সোহেল হাফিজের উদ্যোগে এই উৎসব যেন বরগুনাবাসীর মননে প্রাণের স্পন্দন হয়ে আছে বিগত চার বছর ধরে। উপকূলীয় এই জেলার মানুষের ভালোবাসা ও আবেগের সারথী হতেই এ বছর উৎসবটি প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। আগামী ২৩ নভেম্বর জেলার শুভসন্ধ্যা বিচে অনুষ্ঠিত হবে এ বছরের জোছনা উৎসব। সম্মুখে সীমাহীন সাগরের দৃশ্যপট, পেছনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন টেংরাগিড়ি, ঝাউবন, তিনটি নদীর বিশাল জলমোহনা- সব মিলিয়ে নদ-নদী আর বন-বনানীর এক অপরুপ প্রাকৃতিক সমাহার শুভসন্ধ্যা সৈকত। আসছে পূর্ণিমায় এখানেই জল জোছনায় একাকার হবে অগণিত জোছনাবিলাসী।

উৎসবের প্রথম সূত্রপাত হয় ২০১৫ সালে। ছোট্ট একটি উদ্যোগ এখন পরিণত হয়েছে মহা উৎসবে। বাঙালি সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে অপসংস্কৃতি রুখতে এই উদ্যোগ ছিল বরগুনার গণমানুষের জন্য। জোছনার আলোকে সঙ্গী করে উৎসবের অনুষ্ঠান সূচিতে থাকে নানা আয়োজন। জারি-সারি-বাউল গান, কবিতা, মোহনীয় বাঁশির সুর, গল্প, পুঁথী পাঠ, কৌতুক, বিনোদনসহ নানা সাংস্কৃতিক উপস্থাপনায় প্রতিবছরই মুখরিত হয় এই আয়োজন। অনুষ্ঠান উদযাপনকে কেন্দ্র করে গত ৮ নভেম্বর বরগুনা জেলা প্রশাসনের সভা কক্ষে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।সভায় গঠিত হয়েছে অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটি।
 


এবারের জোছনা উৎসবে বরগুনা থেকে দুটি দোতলা লঞ্চ যাবে উৎসব স্থলে। ডাবল কেবিন ২০০০, সিঙ্গেল কেবিন ১০০০ এবং ডেকের জন্য ২০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। দুপুর দেড়টায় বরগুনা লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়বে। গভীর রাত পর্যন্ত জোছনাস্নাত হয়ে রাত ৩ টায় পুনরায় বরগুনার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ফিরে আসবে। উৎসবে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ দেশ বিদেশের প্রায় ২০ হাজার পর্যটক ভিড় জমাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাখা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চাঁদনী রাতে তিন নদীর জলমোহনায় ছোট ট্রলারে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর সুবিধাও থাকছে। কেবিন বুকিং দেয়ার জন্য (০১৩১৮৬৫৫৬৩৬/০১৩১৮৬৫৫৬৩৭) দু’টি নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।  https://web.facebook.com/Jochnautsob/ লিঙ্কের ফেসবুক পেজ থেকে জানা যাবে বিভিন্ন তথ্য।

এ প্রসঙ্গে বরগুনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ‘বরগুনায় যোগদান করেই এখানকার প্রতিটি পর্যটন স্পট আমি ঘুরে দেখেছি। বরগুনা হলো এমন একটি জেলা যেখান থেকে নৌপথে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এবং বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের দূরত্ব মাত্র ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার। এছাড়া বরগুনায় রয়েছে নয়নাভিরাম স্নিগ্ধ বনভূমী আশারচর, লালদিয়ারচর, হরিণঘাটার বন, টেংড়াগিরির বনভূমি এবং শুভসন্ধ্যা বীচ পয়েন্টসহ অনেক আকর্ষণীয় বনবনানী ও নদনদীর মোহনা। এসব বনাঞ্চলে রয়েছে শত প্রজাতীর প্রাণীবৈচিত্র। বরগুনার এসব আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকাগুলো পরিকল্পিতভাবে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা গেলে পর্যটন শিল্প বিকাশের সাথে এখানকার অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’

সোহেল হাফিজ বলেন, ‘জোছনা উৎসব হবে এবার বাংলাদেশের জোছনা উৎসব। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় এই জেলার  নয়নাভিরাম সৌন্দর্যকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে এ উৎসব ঘিরে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কৃতজ্ঞতা জানাই বরগুনার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি।’ 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ নভেম্বর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়