ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বৃহত্তর রংপুরে জটিল সমীকরণে আওয়ামী লীগ-জাপা

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ১৭ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বৃহত্তর রংপুরে জটিল সমীকরণে আওয়ামী লীগ-জাপা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগত ভোটের সিদ্ধান্তে বৃহত্তর রংপুরে জটিল সমীকরণে পড়েছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী।

জানা গেছে, বৃহত্তর রংপুরের ৫ জেলার ২২টি আসনের মধ্যে ২১টিই জাতীয় পার্টি চায়। অপরদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনে করছেন রংপুরে নৌকার শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। এখানে বুঝে শুনে মনোনয়ন দেওয়া না হলে বড় ধরনের বিপত্তি ঘটতে পারে। তাই আসন ভাগাভাগি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে দুই দলেরই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

ফলে রংপুরের এই ২২টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টিকে কয়টি আসন ছাড় দেওয়া হবে এ নিয়ে চলছে সর্বত্র জল্পনা-কল্পনা।

রংপুর জেলায় ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে ৪টি এবং জাতীয় পার্টির কাছে রয়েছে ২টি। এর মধ্যে রংপুর সদর আসনের এমপি জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। এই আসনটিতে এরশাদই থাকবেন এটা নিশ্চিত।

রংপুর -১ গঙ্গাচড়া আসনে এমপি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। এই আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। নেতাকর্মীদের দাবি, এখানে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে।  তবে শেষ পর্যন্ত এই আসনটিও জাতীয় পার্টিই পাবে বলে অনেকে মনে করছেন।

রংপুর-৬ পীরগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন দলের প্রধান শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে আসনটি ছেড়ে দিলে সেখানে নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী। এই আসনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছেড়ে দেওয়া হবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আগেই ঘোষণা দিয়েছেন।

এছাড়া রংপুর-৪ আসনের বর্তমান এমপি টিপু মুন্সী’র নাম আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী মোস্তাফা মহসিন বেঙ্গল ও সিরাজুল ইসলাম ভরসা বলছেন তারা এই আসনটি আওয়ামী লীগকে ছাড় দিবেন না। কারণ এখানে জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাঁটি রয়েছে।

রংপুর-৫ আসনের এমপি এইচ এন আশিকুর রহমান। তার মনোনয়নের বিষয়টি আগে ঘোষণা হলেও এখন একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।  এই আসনটি ছাড় দিতে নারাজ জাতীয় পার্টি।  জাপার জেলা সভাপতি ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মিঠাপুকুর জাতীয় পার্টির ঘাটি। এখানে জাপা প্রার্থী বিজয়ী হবে।’

নীলফামারীতে ৪টি আসনের মধ্যে ৩টিই আওয়ামী লীগের, বাকিটি জাতীয় পার্টির। এর মধ্যে নীলফামারী ২ আসনে আসাদুজ্জামান নূরের মনোনয়ন চূড়ান্ত। বাকি ৩ টি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা রয়েছেন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। এই ৩টি আসনে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী মনোনয়নের দাবিতে অনড় রয়েছে।

লালমনিরহাটের ৩টি সংসদীয় আসনের সবগুলোই আওয়ামী লীগের দখলে। লালমনিরহাট-১ আসনে জাতীয় পার্টির কো- চেয়ারম্যান জিএম কাদের নির্বাচন করবেন। এটা প্রায় নিশ্চিত।  তাই এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ রয়েছে।

গাইবান্ধায় ৫টি সংসদীয় আসন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে ৩টি একটি জাতীয় পার্টিও ও একজন স্বতন্ত্র এমপি রয়েছেন।  এই ৫টি আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে চলছে মনস্তাত্বিক যুদ্ধ।

কুড়িগ্রাম জেলার ৪টি আসনের একটিও আওয়ামী লীগের হাতে নেই। একটি জাতীয় পার্টি (জেপি)’র দখলে। অপর ৩টি জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এর দখলে। এবার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নোতাকর্মীরা কুড়িগ্রামের অসনগুলোতে ছাড় দিতে চাচ্ছেন না। কুড়িগ্রামের ৪টি আসনে ২০ জন আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমি রংপুর ২-৩ এবং ৫ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। এসব আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান অনেক ভালো। জাতীয় পার্টির পরিবর্তে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আমি বিজয়ী হবো।’

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, ‘২০০৮ সালে রংপুর জেলার ৬ টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টি ও বিএনপি’র সাথে ত্রিমুখি লড়াই করে ৩টি আসন পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এরশাদের জনপ্রিয়তা আগের মত নেই। তার প্রমাণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ইউপি নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি হয়েছে। তাই জোটগত নির্বাচন হলেই জাতীয় পার্টিকে তাদের ইচ্ছেমতো আসন ছেড়ে দিতে হবে, এমনটা আমি মনে করছি না।’ 

অপরদিকে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফখর-উজ- জামান জাহাঙ্গীর বলেন ‘নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি। কারণ, রংপুর লাঙ্গলের ঘাঁটি। এটা কেউ ভাঙ্গতে পারবে না।’ রংপুর -৪ আসন মিঠাপুকুর থেকে তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/রংপুর/১৭ নভেম্বর ২০১৮/নজরুল মৃধা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়