ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

টং ঘরে ‘অনন্ত জলিল’ চা!

আমিনুর রহমান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টং ঘরে ‘অনন্ত জলিল’ চা!

ছবি- সংগৃহীত

আমিনুর রহমান হৃদয়: চা-পান করতে অনেকেই পছন্দ করেন। এক ধরনের স্নিগ্ধ, প্রশান্তির স্বাদ রয়েছে চায়ে। কেউ ঘুম থেকে উঠেই চা-পান করেন, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়, কেউ কাজের ফাঁকে। চা শরীর ও মন চাঙা করে।

প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া অনুযায়ী চা পাঁচটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- কালো চা, সবুজ চা, ইষ্টক চা, উলং বা ওলোং চা এবং প্যারাগুয়ে চা। এছাড়াও সাদা চা, হলুদ চা, পুয়ের চা-সহ আরো বিভিন্ন ধরনের চা রয়েছে। সাদা, সবুজ, উলং এবং কালো চা হলো সর্বাধিক পরিচিত ও ব্যবহৃত চা। কিন্তু এগুলোর বাইরে চা প্রেমীদের  জন্য প্রায় ৭০ পদের চা-পান করার ব্যবস্থা রেখে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গড়ে উঠেছে ‘টং ঘর’ নামে একটি চায়ের দোকান। এখানে প্রত্যেক পদের চায়ের যেমন রয়েছে আলাদা স্বাদ, তেমনি নামও চমকপ্রদ। যেমন সুলতান সুলেমান চা, আনারকলি চা, রজনীকান্ত চা, আকবরই চা, বাবুমশাই চা, রিমিক্স চা, রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট চা, অনন্ত জলিল চাসহ বাহারি নামের চা পাওয়া যায় সেখানে। মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান বেড়িবাঁধ ঢালের খানিকটা পূর্বে ‘টং ঘর’। এখানে রং চা, দুধ চা, মৌসুমী ফলের চা, স্পেশাল আইটেম এবং কফি এই পাঁচ ক্যাটাগরিতেই পাওয়া যায় প্রায় ৬৩ পদের চা।
 


এর মধ্যে রং চা রয়েছে বিশ প্রকারের। যেমন ডাবল লেমন চা, মাসালা রং চা, হারবাল চা, থেরাপি চা ও বোম্বাই মরিচ দিয়ে বানানো খবরদার চা। এগুলোর চাহিদা বেশি। দাম ৬ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে একুশ ধরনের দুধ চায়ের মধ্যে মাসালা দুধ চা, এনার্জি চা, বুস্ট চা ও খেজুর দুধ চায়ের চাহিদা বেশি। দাম ১০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। এছাড়াও চা পিপাসুদের চাহিদায় পিছিয়ে নেই স্পেশাল আইটেমের শীর্ষে থাকা ১০১ টাকা দামের ‘সুলতান সুলেমান’ চা। ‘রজনীকান্ত’ চা পান করা যাবে ৫১ টাকায়। ‘রোমিও-জুলিয়েট’ চা ২১ টাকায়, ‘দরবারই জং’ চা ৩১ টাকা, আর মাত্র ২০ টাকাতেই পান করতে পারবেন ‘অনন্ত জলিল’ চা।

উপমহাদেশে চায়ের উৎপত্তির ইতিহাসও জানতে পারবেন এই ‘টং ঘর’ চায়ের দোকানের দেয়াল থেকে। ইচ্ছে করলে এক ঝলকে চায়ের জন্মকথাও জেনে নিতে পারবেন। চায়ের ইতিহাস পড়তে পড়তে মাটির কাপে চা-পান করতে ভালোই লাগবে। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ‘টং ঘর’ চায়ের দোকানে চা পান করতে আসেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বন্ধুরা মিলে এখানে চা খেতে আসি। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে গল্প-আড্ডায় মেতে উঠি। কিছুটা সময় পার করে আবার চলে যাই। এখানকার চায়ের স্বাদ যেমন ভালো তেমনি পরিবেশটা খুব সুন্দর।’
 


রাশেদ আলম চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ‘এখানে চা খাওয়ার পরিবেশটাই অন্যরকম। নিরিবিলি পরিবেশে চা খাওয়া যায়। ধূমপানের সুযোগ না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়েও এখানে চা খাওয়ার মতো পরিবেশ আছে। চায়ের মানের দিক থেকেও ‘টং ঘর’ এগিয়ে।’

এখানকার চায়ের কারিগরদের গ্রাহকের চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হয়। চা বানানোর প্রধান কারিগর মো. আলি আজগর জানান, প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে চা বানানো শুরু করে শেষ হয় রাত ১২টায়। এর মাঝে দুপুরের ২ ঘণ্টা বিরতি। সকালে খদ্দের কম থাকলেও, মধ্যাহ্ন বিরতির পর দোকান খোলার আগেই চা খেতে ভিড় করেন অনেকে। 
 


টং ঘরের মালিক শাহনেওয়াজ রাজ জানালেন, নিজেদের আড্ডা দেয়ার জায়গার প্রয়োজনেই শখের বশে খোলা হয়েছিল এই চায়ের দোকান। শুরুর সময় সিগারেট ছিল। গ্রাহক বাড়লে দেখলাম, সিগারেটের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে সিগারেট বন্ধ করে দেই। এরপর চায়ের আইটেম বাড়ানো শুরু করি।

ব্যবসা করার জন্য এই দোকান খোলা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আয় করার জন্য দোকান দেইনি। বলতে পারেন এটা শখ। আমি দোকানটিকে একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। প্রয়োজনে এর আরো শাখা হবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়