ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

টাঙ্গাইল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন লতিফ সিদ্দিকী

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৬ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টাঙ্গাইল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন লতিফ সিদ্দিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল: আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত দলের প্রাক্তন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন।

কালিহাতী উপজেলা শহরের মুন্সিপাড়া বাসায় রোববার সাংবাদিকদের ব্রিফিং এর মাধ্যমে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় লতিফ সিদ্দিকীর বাসায় তার হাজার হাজার ভক্ত-সমর্থকদের আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা যায়।

নির্বাচনে লড়ার ঘোষণাকালে লতিফ সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভাই কাদের সিদ্দিকী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিল। এই ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের দেশবাসী চেনেন। ঐক্যফ্রন্টের বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে কি করেছে তা সবারই জানা। তাদের দ্বারা মানুষের আর কোন উপকার হবে না। আমি নির্বাচনে এসেছি ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বেনিফিসিয়ারিদের বিরুদ্ধে, অত্যাচারি-শোষকদের বিরুদ্ধে এবং স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে। আমি নির্বাচনে এসেছি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে, সংসদে জনগণের কথা বলতে এবং শেখ হাসিনাকে সাহায্য করতে।

কালিহাতীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়ার পরেও কেন স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে সেই মনোনীত ব্যক্তির উপর কালিহাতীর জনগণ ও নেতাকর্মীদের আস্থা নেই। তাই কালিহাতীর মানুষের ভালবাসা ও চাপেই আমি নির্বাচন এসেছি।’

লতিফ সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। আমি আওয়ামী লীগের বাইরের কেউ নই। কালিহাতীর আসনটি আওয়ামী লীগের। কালিহাতীর মানুষ আমার মূলশক্তি। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এই আসনটি উপহার দেওয়ার জন্যই নির্বাচনে লড়বো।’

তিনি বলেন, ‘আমি জনগনের নেতা। আমাকে জনগণ চায়। তাদের সেবার জন্যই আমি তাদের পাশে রয়েছি এবং থাকবো। আমি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনদিন কথা বলিনি। আমি যখন পদত্যাগ করি তখনও বলেছিলাম আমি একজন মুসলিম আমি একজন আওয়ামী লীগার।’

লতিফ সিদ্দিকীর পৈত্রিক নিবাস টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী ইউনিয়নের ছাতিহাটী গ্রামে। তিনি কালিহাতী থেকে ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করেন। ২০০৮ সালের বিজয়ী হওয়ার পর মন্ত্রিত্ব পান তিনি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হজ¦, মহানবী (সা.) ও তাবলিগ জামায়াত এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কটূক্তি করে ফেঁসে যান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। দেশে ও দেশের বাইরে তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ও ইসলামিক সংগঠনগুলো লতিফ সিদ্দিকীর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে মোট ২২টি মামলা হয়। এরমধ্যে ১৭ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরে তিনি দেশে এসে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তিনি কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পান। পরে দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলনের মুখে তার মন্ত্রিত্ব কেড়ে নিয়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এরপর ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি তার আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী এমপি নির্বাচিত হন। ওই উপ-নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ঋণ খেলাপির কারণে তার প্রার্থীতা অযোগ্য ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত।

এছাড়া ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকীর সহধর্মিনী লায়লা সিদ্দিকী স্বতন্ত্র নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারীকে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সোহেল হাজারীর নেতাকর্মীরা কালিহাতীতে মোটরসাইকেল র‌্যালি ও আনন্দ মিছিল বের করে।



রাইজিংবিডি/ টাঙ্গাইল/২৬ নভেম্বর ২০১৮/শাহরিয়ার সিফাত/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়