ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁও এখন সাইকেল বালিকাদের আলয়

তানভীর হাসান তানু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৯ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঠাকুরগাঁও এখন সাইকেল বালিকাদের আলয়

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা: ঠাকুরগাঁও এখন সাইকেল বালিকাদের আলয়। রোদে কিংবা বৃষ্টিতে প্রতিদিন বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসছে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই সাইকেল বালিকারা।

শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতেই প্রতিদিন তাদের এই স্কুলযাত্রা। দূর গ্রামের হয়েও বাইসাইকেলে করে বালিকারা স্কুলে যাওয়া আসা করছে নিয়মিত। তাই এরা সবাই এখন সাইকেল বালিকা নামে পরিচিত। তাদের সাইকেল বহর যখন চলা শুরু হয়, সেই দৃশ্য মনোযোগ কেড়ে নেয় সব পথচারীর।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ের ক্লাশ শুরু কিংবা শেষ হলে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। বিশেষ করে গিলাবাড়ী, জামালপুর, ভাউলার হাট, সালন্দর, আকঁচা, খোচাবাড়ি, চিলারং, আউলিয়াপুর ইউনিয়ন থেকেও মেয়েরা স্কুল-কলেজে আসে বাইসাইকেলে।

দূরের পথ পাড়ি দিয়ে বাইসাইকেলে ছুটে আসা এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কেউই ধনী ঘরের সন্তান নয়। তারা কেউ শ্রমিক, কেউ দিনমজুরের সন্তান। দেখা যায়, ওদের বাবা কিংবা মা এলাকার সঞ্চয় সমিতি থেকে কিস্তিতে টাকা নিয়ে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে বাইসাইকেল কিনে দিয়েছেন। তবুও শিক্ষার আলো পৌঁছুক তাদের ঘরে এটাই প্রত্যাশা তাদের।

সদর উপজেলার গিলাবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইকেল বালিকা আশরাফি ফাহমিদা জানায়, তাদের এলাকা থেকে স্কুলে আসতে গাড়ি কিংবা রিকশা পাওয়া যায় না। পেলেও আসতে যেতে খরচ অনেক। তাই বাইসাইকেল কিনে দিয়েছেন তার বাবা-মা।

একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার জানায়, বিদ্যালয়ে আসতে যেতে প্রথম প্রথম বখাটে ছেলেদের উৎপাতসহ ছোট খাটো অনাকাঙ্খিত ঘটনার ভয় ছিল। আবার দীর্ঘ পথ কাঁচা রাস্তা থাকায় বর্ষা মৌসুমে পিচ্ছিল পথে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এখন সে সমস্যাকে আমরা ভয় পাইনা।

নবম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী উর্মী কুন্ডু বলেন, আগে বাইসাইকেল চালালে গ্রামে মানুষেরা বিভিন্ন কথা বলতো। এখন আর কেউ কিছু বলে না। কম সময়ে স্কুলে যাওয়া আসা করতে পারায় বাকি সময়টা পড়ার টেবিলে দিতে পারি।

এদিকে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের স্থানীয় বে-সরকারি সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ইএসডিও ঠাকুরগাঁওয়ের ৫ উপজেলায় দুই শতাধিক বাইসাইকেল দিয়েছে। এদের সকলই দরিদ্র পরিবারে সদস্য। পরিবার থেকে সাইকেল কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই, এমন পরিবারের শিক্ষার্থীদের এসব বাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে। তাই পিছিয়ে পড়া এসব শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যেন থেমে না যায় সেজন্যই এই সহযোগিতা- জানান ইএসডিও কর্তৃপক্ষ।

ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড.মুহম্মদ মহীদ উজ জামান বলেন, ‘বাইসাইকেল পেয়ে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারছে। এখন তাদের লেখাপাড়ায় মনোনিবেশও হয়েছে। উৎসাহ পাওয়ায় এরা ভাল রেজাল্টও করছে।’

সদর উপজেলার গিলাবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহানর-ই-হাবিব বলেন, গ্রামাঞ্চলের মেয়ের আর পিছিয়ে নেই। তারা অনেক দূর থেকে সাইকেলে চড়ে বিদ্যালয়ে আসছে। নানারকম সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করছে। প্রথমে রাস্তায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতো। এখন আর কোন সমস্যা হয়না, মেয়েরা যখন দলবদ্ধ হয়ে আসা যাওয়া করে।’

ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে এখন এখানের গ্রাম অঞ্চলের মেয়েরা অনেক এগিয়ে। তারা বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুল কলেজে যাওয়া আসা করছে। ’

ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাদেক কুরাইশী বলেন, ‘মেয়েরা এখন সকল বাধা অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। পড়ালেখায় ছেলেদের চেয়ে জেলার মেয়েরা এগিয়ে আছে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড.কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘এ জেলার মেয়েরা সাইকেলযোগে স্কুলে যাওয়া আসা করে- এটা প্রমাণ করে মেয়েছে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের যাত্রায় কোন বাধা-বিপত্তি এলে আমরা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আমরা সব সময় সজাগ আছি।’



রাইজিংবিডি/ ঠাকুরগাঁও/ ৯ জুন ২০১৯/তানভীর হাসান তানু/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়