ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ডিএনডি প্রকল্প উন্নয়নে ৫৫৮ কোটি টাকা

হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ১০ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ডিএনডি প্রকল্প উন্নয়নে ৫৫৮ কোটি টাকা

কেএমএ হাসনাত : ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ৫৫৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।

সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। উদ্যোগটি আবার পাঁচ বছর পরে নেওয়ায় ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি হচ্ছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এ প্রকল্পটি গত বছর ৯ আগস্ট একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপে যেসব পূর্তকাজের উল্লেখ করা হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে- ২টি পাম্প স্টেশন নির্মাণ; ফতুল্লা, পাগলা ও শ্যামপুরে ৩টি পাম্পিং প্ল্যান্ট স্থাপন; ছোট-বড় ৯৩টি ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ; ৫২টি ব্রিজ/কালভার্ট পুনঃনির্মাণ; ২টি ক্রস ড্রেন নির্মাণ; ৯৩ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন ও খালের পাড় উন্নয়ন ইত্যাদি।

সূত্র জানায়, এর আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রস্তাবটি একনেক অনুবিভাগে পাঠানো হয়। কিন্ত সে সময় প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না থাকায় প্রস্তাবটি একনেক অনুবিভাগ থেকে ফেরত পাঠানো হয়।  

সূত্র জানায়, ডিএনডি এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ডিডিসি-সেজিস-আরআরআই’-কে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ২০১০ সালের এপ্রিলে প্রতিবেদন জমা দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বর্তমান রেট শিডিউল বিবেচনায় নিয়ে প্রণীত ডিপিপি-তে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি প্রকল্পের যে সার-সংক্ষেপ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে তাতে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৬২-৬৮ সাল সময়ে তৎকালীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ‘ডিএনডি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। তখন ওই প্রকল্পের আওতায় চারটি পানির পাম্পসহ একটি পাম্প স্টেশন নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া ৩১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ৫৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার সেচ খাল, ৪৫ দশমিক ৯০ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল ও ২১৬টি পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্প এলাকাটি ঢাকার শহরের সন্নিকটে হওয়ায় স্বাধীনতার পর এখানে দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ন গড়ে ওঠে। ডিএনডি এলাকায় ভূমি ব্যবহারে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। কৃষি জমিগুলো বাসভবন, শিল্প প্লট কিংবা রাস্তায় রূপান্তরিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ খাল, ড্রেন ইত্যাদি স্থানীয় জনগণের নিক্ষিপ্ত বর্জ্যে অচল হয়ে যায়। পাশাপাশি বন্যার কারণে বিদ্যমান পাম্পগুলো বন্যার পানি ও গৃহস্থালির অতিরিক্ত বর্জ্য পানি নিষ্কাশনে অসমর্থ হয়ে  পড়ে। এ ছাড়া অবৈধ দখলের কারণে নিষ্কাশন খালগুলোর ধারণ ক্ষমতাও কমে যায়। এ অবস্থায় ২০০৫ সালে জাইকার সমীক্ষা প্রতিবেদন ‘এফএপি-৮এ’র আলোকে ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সময়ে ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ের কাজ বাস্তবায়িত হয়। তখন এতে ব্যয় হয়েছিল ১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি একনেক-এ অনুমোদনকালে ভবিষ্যতে প্রকল্প এলাকায় নদী ড্রেজিং, নিচু এলাকায় উঁচু করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা ও পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে প্রকল্প এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগকে সম্পৃক্ত করারও নির্দেশ দেন তিনি।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ‘রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে’র কথা উল্লেখ করে এটি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য গত ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অথবা সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ডিএনডি এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা, পরিবেশগত মান ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রকল্প এলাকার জনগণের স্বাভাবিক জীবনমান নিশ্চিত হবে বলে সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জানুয়ারি ২০১৭/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়