ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৮, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : অংশীজনদের অধিকাংশ সুপারিশ অগ্রাহ্য করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রস্তাবিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল’  সংক্রান্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করায় হতাশা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

পাশাপাশি এ বিল পাস না করারও আহ্বান জানানো হয় টিআইবির পক্ষ থেকে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অংশীজনদের মতামত অগ্রাহ্য করে গণমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ঝুঁকিপূর্ণ ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল’ এর বিতর্কিত ধারাসমূহ অপরিবর্তিত রেখে সংসদীয় কমিটি কর্তৃক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। একদিকে প্রস্তাবিত বিলের ৮, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারাগুলোর ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্বেগ ও মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে, যা তাদের স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে বিতর্কিত ৩২ ধারার ডিজিটাল গুপ্তচর বৃত্তির ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ অনুসরণের সুপারিশ করার দৃষ্টান্ত অত্যন্ত হতাশা ও দুঃখজনক।

ড. জামান বলেন, প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারার অপপ্রয়োগের ফলে তত্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত তথ্য জানার আইনি অধিকার ব্যাপকভাবে রুদ্ধ হবে এবং এর ফলে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধের অধিকতর বিস্তার ঘটবে। তাছাড়া, ধারাটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং যেকোনো ধরনের গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ আরো বলেন, প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলটি আইনে রূপান্তরিত হলে তা সংবিধানের মূল চেতনা বিশেষ করে মুক্তচিন্তা, বাক্-স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীন বিকাশের পথ ব্যাপকভাবে রুদ্ধ হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা বোধ সৃষ্টি করবে। সরকার ও বিশেষ করে জাতীয় সংসদ এ আত্মঘাতী পথ থেকে সরে এসে বিষয়টি নিয়ে অংশীজনের সাথে আরো আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

‘তথ্য অধিকার আইন ২০০৯’ এর ধারা ৩ এর খ তে বলা আছে ‘তথ্য প্রদানে বাধা সংক্রান্ত বিধানাবলী এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সাংঘর্ষিক হইলে, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে’ এবং ‘জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১’ তে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশকারীকে আইনগত সুরক্ষা প্রদানের যে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে, সেখানে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩’ এর মতো একটি নিবর্তনমূলক আইনের বিতর্কিত ধারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সাথে সম্পৃক্তকরণ কতটুকু প্রাসঙ্গিক তা বিবেচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন ড. জামান।

তিনি বলেন, টিআইবি মনে করে সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিতের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে প্রস্তাবিত আইনটি সেক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ অর্জনে সরকারের পাশাপাশি জনগণ, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকাও সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। তাই গণমাধ্যমসহ সকল নাগরিক যাতে সমস্ত ধরনের ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন ও বাধাহীন মতামত প্রকাশ করতে পারে তার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলটি আইনে পরিণত করার ক্ষেত্রে সরকারকে আরো দূরদর্শী হতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮/নাসির/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়