ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ঢাকায় আইডিবির অফিস খুলতে অর্থমন্ত্রীর আহ্বান

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১২, ৫ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঢাকায় আইডিবির অফিস খুলতে অর্থমন্ত্রীর আহ্বান

বিশেষ প্রতিবেদক : পারস্পরিক সহযোগিতা আরো গতিশীল করতে বাংলাদেশে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) একটি গেটওয়ে অফিস খোলার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বুধবার আইডিবির প্রেসিডেন্ট বন্দর এম এইচ হাজ্জাজের সভাপতিত্বে সংগঠনটির ৪৩তম বার্ষিক সম্মেলনের প্লেনারি সেশনে বক্তৃতাকালে এ আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী। এ সময় তিনি দাতা সংস্থাগুলোর অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হওয়ার কথা তুলে ধরেন।

আইডিবির সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য ইআরডি সচিব শফিকুল আজম উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বর্তমানে আইডিবির বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে অবস্থান করছেন।

অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতায় বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) অন্যান্য দাতা সংস্থার অর্থ ছাড়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অন্যান্য দাতা সংস্থার ঋণের অর্থ ছাড়ের চেয়ে আইডিবির অর্থ ছাড়ের গতি অনেকটা শ্লথ। এ কারণে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সময়মতো সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আইডিবির আঞ্চলিক অফিসগুলোকে আরো ক্ষমতা দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে এর একটি অফিস খোলা হলে পারস্পরিক সম্পর্ক আরো গতিশীল হবে এবং আইডিবির উদ্দেশ্য সফলে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আইডিবির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রায় চার দশক অতিবাহিত হচ্ছে। আইডিবি বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। এ সময় আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশেষ ভুমিকা রেখেছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করছি, আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জুনে ঢাকায় আইডিবির গেটওয়ে অফিস পুরোপুরিভাবে কাজ শুরু করতে পারবে। এটা হলে এ অঞ্চলের আইডিবির কাজের পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদস্য দেশগুলোও উপকৃত হবে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশেষ করে আইডিবির সদস্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনন্য ভূমিকার কথা আমারা বিশেষভাবে স্মরণ করতে চাই। এজন্য আইডিবির প্রেসিডেন্ট ড. বান্দার বিন হাজ্জাজের গতিশীল ভূমিকা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তার নেতৃত্বে আইডিবি সদস্য দেশগুলোর সামগ্রিক উন্নয়ন আরো বেগবান হবে।

অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় সম্প্রতি বাংলাদেশের অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার বিশদ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখন আমরা বিশ্ববাসীর কাছে  আমাদের উন্নয়ন তুলে ধরতে পারছি। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন অন্যান্য দেশের কাছে রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশেষে করে নতুন সহস্রাব্দে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অসাধারণ যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। এখন আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব। সেই সঙ্গে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে অবস্থান করে নেবে।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল। ২০১৬ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এটা ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর এটা ৭ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি উন্নীত হবে বলে আশা করছি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের অর্থনীতির এই গতিশীলতার পেছনে রেমিট্যান্স, টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট, জাহাজ নির্মাণ এবং সী ফুড, চামড়া, ওষুধ শিল্প এবং আইসিটি খাতের ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই। এসব শিল্পে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় গত ২২ মার্চ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন। এসব কর্মসূচিতে আইডিবির প্রতিনিধিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের ধন্যবাদ জানান।

তিনি আরো বলেন, উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ একদিকে যেমন বাংলাদেশের জন্য সন্মানজনক বিষয়। এর কিছু কিছু চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হতে হবে আমাদের। এর মধ্যে অনুন্নত দেশ হিসেবে যে বাণিজ্য সুবিধা পাওয়া যেত তা হারাতে হবে, রেয়াতমুক্ত ঋণ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজরে প্রবেশাধিকার পাওয়া যাবে না। এর পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সাধন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ছাড়াও নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এতগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা ভীত নই। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে যেভাবে এতটা পথ আসতে পেরেছি, একইভাবে তার নেতৃত্বে আমাদের অভীষ্ঠ লক্ষ্যে অর্থাৎ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান করে নিতে পারব। এ বিষয়ে আমরা আইডিবি এবং অন্যান্য দাতা সংস্থাকে পাশে পাব বলে আশা করছি।

রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রায় দুই কোটি বিপন্ন মানুষ বন্ধুপ্রতিম ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। আমরা জানি, রোহিঙ্গারা কোন অবস্থায় দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। সম্পূর্ণ মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ১ মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রা এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বহু দেশ এবং জাতিসংঘের পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলো সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে অর্থমন্ত্রী।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ এপ্রিল ২০১৮/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়