ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

তাঁরা সবাই ছিলেন চিন্তা ও মানবতার দিশারি

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তাঁরা সবাই ছিলেন চিন্তা ও মানবতার দিশারি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। একাত্তরের এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে সংযোজিত হয়েছিল এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।  মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের প্রাক্কালে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তার দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে মেতে ওঠে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা রাতের অন্ধকারে লেখক-বুদ্ধিজীবী-শিক্ষাবিদ-চিকিৎসক-সাংবাদিক-প্রকৌশলীদের ধরে নিয়ে হত্যা করে। বাঙালি জাতির জাগরণে অগ্রণী ভূমিকার কারণে বুদ্ধিজীবীদের  সুপরিকল্পিতভাবে নিধন করা হয়। এর বড় উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা লাভ করতে যাওয়া একটি জাতিকে মেধাশূন্য করা।

অবশ্য শুধু ১৪ ডিসেম্বরে নয়, স্বাধীনতাসংগ্রামের সূচনা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয়ের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা এরকম অনেককে হারিয়েছি। ২৫ মার্চের কালরাত থেকেই অন্যদের সঙ্গে বুদ্ধিজীবীরাও হত্যার শিকার হয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বুদ্ধিজীবী দেশ ও জাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জি সি দেব, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, শহীদুল্লাহ কায়সার, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, নিজামুদ্দিন আহমেদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. আলিম চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বী, সাহিত্যিক সাংবাদিক সেলিনা পারভীনসহ নাম জানা-অজানা অনেকে।

এসব বুদ্ধিজীবীসহ ৩০ লাখ শহীদ ও অসংখ্য নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাঙালির বিজয় অর্জনের ফলে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশ নামে এক স্বাধীন রাষ্ট্রের। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সেই মহান সন্তানদের আমরা গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। যাঁরা ছিলেন দেশপ্রেম ও মননশীলতায় অগ্রণী এক প্রজন্ম। তাঁরা সবাই ছিলেন চিন্তা ও মানবতার দিশারি। জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে সেই শূন্যতা আমরা আজও অনুভব করে চলেছি। তাঁদের হারিয়ে বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এসব ঘাতক দালাল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর থেকে ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবশ্য তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। বিলম্বে হলেও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মাধ্যমে এই বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত কয়েকজন শীর্ষ ঘাতকের বিচার ও শাস্তি কার্যকর হয়েছে।  কিন্তু আদালতের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আলবদর কমান্ডার চৌধুরী মঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে ও আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

কিন্তু একাত্তরের ঘাঁপটি মেরে থাকা ঘাতক এবং তাদের এজেন্টরা এ বিচার প্রক্রিয়া বানচালের জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ একাত্তরের সব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে এসব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সম্মান দেখানোর উত্তম পন্থা হল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ তখনই সার্থক হবে এবং তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে, যখন আমরা তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে পারব।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ডিসেম্বর ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়