ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘তৈরি পোশাক নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য ক্রেতাদের’

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২৩ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘তৈরি পোশাক নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য ক্রেতাদের’

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : বিদেশি বায়াররা (ক্রেতা) বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য করছে। তারা রানা প্লাজার মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরও শ্রমিকদের উন্নয়নে বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বাড়েনি তৈরি পোশাকের দাম।

রোববার রাজধানীর গুলশানের গার্ডেনিয়া গ্রান্ড হলে আয়োজিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনার চার বছর পূর্তি উপলক্ষে এক সামাজিক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে।

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবাহানের সভাপতিত্বে সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

রেহমান সোবাহান বলেন,  বায়াররা বাংলাদেশ থেকে যে পণ্য কিনছে ৫ মার্কিন ডলারে অথচ  বিক্রি করছে ২৫ ডলারে। আমরা ৫ ডলার নিয়ে আলোচনা করছি কিন্তু বাকি ২০ ডলার কোথায় যায় তা নিয়ে কারো কোনো বক্তব্য নেই।

তিনি বলেন, দেশের মালিক-শ্রমিক এর মধ্যে সম্পর্ক ও সমন্বয় থাকলে রানা প্লাজার মতো এমন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত না। এ দুর্ঘটনা ঘটার পর সামাজিক জবাবদিহিতার চরম অভাবের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। জনপ্রতিনিধি বা সংসদ সদস্যরা এ ঘটনার ধারাবাহিক কোনো  সংলাপ বা পর্যালোচনা করেন না। শুধু নীতিকথা বললেই হবে না, সংস্কার করতে হবে। গত চার বছরে সংস্কারে প্রচুর ঘাটতি ছিল। তিনি বলেন, ক্রেতা, উদ্যোক্তা ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের সমতা দরকার। এক্ষেত্রে সরকারের সুশাসনের (গর্ভনেন্স সিস্টেম) মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। সবকিছুতেই একটা রাজনীতিকরণের প্রবণতা লক্ষণীয়। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি।

শ্রমিক নেতা কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের একটা প্যাকেজ পেয়েছি। কিন্তু সেটা বিদেশি সংস্থা থেকে। আইনানুগ কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। এ সময় উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, স্পেকটার্ম গার্মেন্টস দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর গত চার বছরে শ্রমিকদের কোনো স্বাস্থ্য চেকাপ হয়নি।

শ্রমিক নেতা বাবুল আক্তার বলেন, যারা মরে গেছে তারা বেঁচে গেছে। কেননা, যারা বেঁচে আছে তাদের নিয়ে শুধু আলাপ-আলোচনা হয়। আর কিছু হয় না। যতটুকু হয়েছে বিদেশিদের চাপে হয়েছে। সরকার মন থেকে কিছু করেনি। উল্টো সামাজিক সংলাপের নামে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শ্রমিক নেত্রী নাজমা বেগম বলেন, সব প্রক্রিয়ায়ই দুর্নীতিতে ভরে গেছে। কিন্তু আমাদের হতাশ হলে চলবে না। সামনে জিএসপি ইস্যু কীভাবে রিকভারি করব সেটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

শ্রমিক নেতা তৌহিদুর রহমান বলেন, অনেক শ্রমিক এখনও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তারা কাজে যোগ দিতে ভয় পান, শব্দ শুনে ভয় পান ও বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করতে ভয় পান। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। আর ৪২ শতাংশ শ্রমিক এখনও বেকার রয়েছেন। তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই।

তিনি বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার বিচার এখনও শুরু হয়নি। যা দ্রুত শুরু হওয়া উচিত। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের কোনো মানদণ্ড নেই, যা খুবই দরকার।

বাংলাদেশি পোশাকের ন্যায্যমূল্য দাবি করেছেন শ্রমিক নেতা তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, জিএসপি চলে গেলে বাংলাদেশের পোশাকের কী অবস্থা দাঁড়াবে সেটা ভাবা দরকার।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। গার্মেন্টস পরিদর্শন বাড়িয়ে দিয়েছি। শ্রমিকদের ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে।

বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, গার্মেন্টসের মোট শ্রমিক সংখ্যা কত তা আমরা এখনও জানি না। তাই আমরা গত আট মাস ধরে বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ তৈরির কাজ করছি। এখন পর্যন্ত ১১ লাখ শ্রমিক এর আওতায় এসেছে।

শ্রমিক নেতাদের ট্রেড ইউনিয়নের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, গার্মেন্টস খাতে এখন পর্যন্ত ৫৯১টি ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। অথচ এসব কারখানার মধ্যে মাত্র ২৬০টি কারখানা চালু রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হলো আমরা আইন মানছি কিনা।

পোশাকের দামের বিষয়ে মাহমুদ হাসান বলেন, বায়াররা তাদের ব্যবসা দেখবে, তাদের চাপ দিলে তারা ইথিওপিয়া বা পাশের দেশ ভারত চলে যাবে। গার্মেন্টস খাত এগিয়ে নিতে ভারত ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে, বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রানা প্লাজা উত্তরকালীন সময়ে বেশকিছু উদ্যোক্তা ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন। এ ঘটনার পর ট্রেড ইউনিয়ন, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়ে যে পরিমাণ অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। দেশে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু কার্যকারিতা কম।

তিনি বলেন, শ্রমিকরা সাহায্য-সহযোগিতা বা পুনর্বাসন যে হারে পাওয়ার কথা তা পায়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে কীভাবে গার্মেন্টস খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করতে হবে।

শ্রম সচিব মিকাইল সিপার বলেন, রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর সরকার যথেষ্ট সচেতন হয়েছে। সক্ষমতা অর্জন করেছে। ভবিষ্যতে শ্রমিকদের উন্নয়নে সবধরনের উদ্যোগ নিতে সচেষ্ট রয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ এপ্রিল ২০১৭/এম এ রহমান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়