ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

দুই কবির মৃত্যু : সাহিত্যাঙ্গনে বেদনা দিয়ে গেল

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৯ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুই কবির মৃত্যু : সাহিত্যাঙ্গনে বেদনা দিয়ে গেল

প্রয়াত দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু ও মুনিরা চৌধুরী

সাইফ বরকতুল্লাহ : মৃত্যু নির্মোহ। মৃত্যু অনিবার্য। সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। তবে কিছু কিছু মুত্যুর ঘটনা বেশি বেদনা তৈরি করে। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। মাত্র একদিনের ব্যবধানে দুই কবির মৃত্যু সাহিত্যঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ফেসবুকের টাইমলাইন একে একে আসতে থাকে দুই কবিকে নিয়ে শোকগাঁথা।  সবার কামনা, কবিরা ভালো থাকবেন মৃত্যুর ওপারে।

গত শনিবার যুক্তরাজ্য প্রবাসী কবি ও কথাসাহিত্যিক দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু মারা যান। তার ফুফাতো ভাই সাংবাদিক চৌধুরী মুমতাজ আহমদ মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। এক সময় তিনি রাশিয়ায় পাড়ি জমান। পরে যুক্তরাজ্যে চলে যান। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে তিনি বসবাস করতেন। তার জন্ম ১৯৭০ সালের ৩০ নভেম্বর সিলেট নগরীর আম্বরখানা বড় বাজারে। দুই দশক আগে প্রবাসে পাড়ি জমান। তিনি মা ও এক বোনসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন।

মঞ্জু দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেছেন। তিনি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বানীপাতা গ্রামের মকবুল হোসেনে ছেলে। দেলোয়ার হোসেন ছিলেন কবি। পাশাপাশি তিনি কথাসাহিত্য ও গদ্য রচনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১০। তার আটটি কাব্যগ্রন্থের সংকলন এক মলাটে ‘বিদ্যুতের বাগান সমগ্র’। এছাড়া রয়েছে উপন্যাস ‘কাফের’, ‘জ্যোৎস্নার বেড়াল’। তিনি ছোট কাগজ ‘ধীস্বর’ সম্পাদনা করতেন।

দুই.
কবি মুনিরা চৌধুরী। বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কানিশাইল। থাকতেন যুক্তরাজ্যে। সেখানে কার্ডিফ বাংলা একাডেমির পরিচালক ছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তবে কার্ডিফ পুলিশও এ বিষয়ে কিছু বলতে পারে না। কেউ কেউ বলছেন আত্মহত্যা করেছেন। যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুনিরার ফুপাতো বোন রাশেদা আক্তার জানিয়েছেন, রোববার কার্ডিফে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মুনিরা।[সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন, ১৯ নভেম্বর]

রাশেদা আক্তার জানান, মুনিরার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যে হলেও বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে বড় করার উদ্দেশে মা-বাবা তাকে লেখাপড়ার জন্য বাংলাদেশে পাঠান। পরবর্তী সময়ে মুনিরা বাংলায় কবিতা ও গদ্য লেখা শুরু করেন। তার বেশ কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছে।

তিন.
একদিনের ব্যবধানে এই দুই কবির মৃত্যু সাহিত্যঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কবি ওবায়েদ আকাশ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মৃত্যু তো উৎসব নয় যে এইভাবে চারিদিকে কান্নার রোল ফেলে নিঃশব্দে চলে যেতে হয়! চাইলেই কি বিদায় বলা যায়, হে বন্ধু হে পরম স্বজন কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু। তারপর! কত যে প্রতিশ্রুতি ছিল, পরস্পর, আর কবিতার!’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ওবায়েদ আকাশের পোস্টে মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না আকাশ! এ কেমন করে হয়! বিমূঢ় আমি!’

কবি মাসুদ খান মন্তব্য করেছেন, ‘আহা, কত দ্রুত, কত অবলীলায় একজন কবি প্রকৃতি থেকে উঠে এসে আবার প্রকৃতিতেই মিলিয়ে গেলেন! এই তো সেদিন, বছর কয়েক আগে, এক আড্ডায়, এক কবিতাযাপনে ছিলাম কবির সঙ্গে। দু-একদিনেই যতটুকু দেখেছি-খুব নির্মল, আন্তরিক আর প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন মঞ্জু। তাঁর প্রতি অন্তিম শ্রদ্ধা। তাঁর আত্মাশান্তি কামনা করি।’

কথাসাহিত্যিক হামীম কামরুল হক লিখেছেন, ‘যেকোনো মানুষের অকাল প্রয়াণ বড়ই বেদনা। কবির প্রয়াণ তো বিশাল একটা জগতের মৃত্যু।’

কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক মাসুদুজ্জামান লিখেছেন, ‘আমাদের অত্যন্ত প্রতিভাবান প্রধান একজন কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু। গত রাতে ইংল্যান্ডে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি যে খুব অসুস্থ ছিলেন তীরন্দাজ তার সেই খবরা-খবর নিয়মিত রেখেছে। কিন্তু তিনি যে এভাবে অকালে চলে যাবেন, আমাদের ভাবনাতেও ছিল না। তাঁর মৃত্যুর খবরের অপেক্ষায় নয়, সাধারণ ভাবেই তাঁর লেখা প্রকাশের প্রস্তুতি আমাদের ছিল। আজই যখন এই লেখাটি প্রকাশ করবো আমরা স্থির করে রেখেছিলাম, তখনই তাঁর মৃত্যুসংবাদ এলো। আমরা এই প্রতিভাবান লেখকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি। শোক প্রকাশ করছি। তীরন্দাজে তাঁর আরো কিছু লেখা অচিরেই প্রকাশিত হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কবিতায় যে বাঁক পরিবর্তনের সূচনা ঘটেছিল, মঞ্জু ছিলেন তার পথিকৃৎ।’

তীরন্দাজে দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু গল্প পড়ে গল্পকার মোস্তফা অভি লিখেছেন, ‘অসম্ভব সুন্দর লেখা। ভাষাটা এত সুন্দর! এই মৃত্যু মেনে নেয়া কঠিন।’ গল্পকার রুমা মোদক লিখেছেন, ‘ভয়াবহ লেখনী! এই লেখকের শত বছর বেঁচে থাকা উচিত ছিলো।’ অনুপমা অপরাজিতা লিখেছেন, ‘কী অনবদ্য লেখনী! একজন প্রতিভাবান লেখক হারালাম!’

কবি ও গল্পকার আশরাফ জুয়েল মুনিরার ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘কবিতা মৃত্যুর ক্যাপসুল।’

রুহুল মাহফুজ জয় লিখেছেন, ‘আগামী বছর আমার ইংল্যান্ডে যাবার কথা। খুব ইচ্ছা ছিল, কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করব। তা আর হবে না। ক্যানসারের বিপক্ষে লড়াই করে তিনি হার মেনেছেন। ওনার কবিতা নিশ্চয় হার মানেনি। মঞ্জু ভাইয়ের কবিতা বেঁচে থাকুক।’

বিজয় অরন্য লিখেছেন, ‘ফেসবুকে আমার বন্ধু তালিকা খুবই সংক্ষিপ্ত। যাদের কোনো না কোনো দিক থেকে ভালোবাসি, চেষ্টা করি তারা আমার তালিকায় যুক্ত থাকুক। কবি দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু তাদের একজন। তাঁর সাথে আলাপ জমে ওঠার আগেই তিনি চলে গেলেন। এমন যন্ত্রণাবাহী এক সকাল নিয়ে আজ দিন শুরু করলাম।’

কবি ও গল্পকার ইশরাত তানিয়া লিখেছেন, ‘এক সমুদ্র, এবার যদি মুছে দেয় অনন্ত বেদনা ক্ষত, স্তব্ধতা আর নোনাজল ছাড়া এই মধ্যরাতে আর কিছু নেই। কবি মুনীরা চৌধুরীকে শ্রদ্ধা।’

গল্পকার ম্যারিনা নাসরীন লিখেছেন, ‘মানুষ নিজের মৃত্যু কখন লেখে?’

জিল্লুর রহমান সোহাগ লিখেছেন, ‘মৃত্যু আকস্মিক! নির্মোহ! অনিবার্য সুতরাং...।’

মনজুর আহমেদ চৌধুরী লিখেছেন, ‘পরস্পরে কবিতা প্রকাশের সুবাধে মুনিরা আপার সাথে কথা বলা শুরু। তারপর প্রায়ই কথা হতো। আর কথা বলা হবে না...অথচ মৃত আত্মার কথাও যে ভুলতে পারব না...।’

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ নভেম্বর ২০১৮/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়