ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দুটি মাছের ঘেরে ৫ গ্রামের মানুষের ঘুম হারাম!

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১০, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুটি মাছের ঘেরে ৫ গ্রামের মানুষের ঘুম হারাম!

যশোর প্রতিনিধি: যশোরে অপরিকল্পিত মাছের ঘেরে বিলের পানি নেমে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়ায় আগামী বর্ষায় পাঁচটি গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যশোর সদরের শহরতলী হরিণার বিলে কেবল ব্যাক্তিগত খামখেয়ালিতে দুটি মাছের ঘের দিয়ে ওই পাঁচটি গ্রামের মানুষের ঘুম হারাম করে দিয়েছে প্রভাবশালী মহল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কারো সুবিধা-অসুবিধার তোয়াক্কা না করে যশোর শহরতলী চাঁচড়া নারায়ণপুর দক্ষিণ পাশে হরিণার বিলে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে বিশাল দুটি মাছের ঘের গড়ে তুলছেন স্থানীয় দুই প্রভাবশালী।

যা হয়ে উঠতে পারে আগামী বর্ষা মৌসুমে সংশ্লিষ্ট বিলপাড়া, সাড়াপোল, রূপদিয়া, ভাতুড়িয়া ও মাহিদিয়া এলাকা তলিয়ে যাবার কারণ। এতে করে অন্তত ৫ হাজার পরিবারকে এলাকা ত্যাগ করতে হতে পারে।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে যশোর শহরের পানি এই হরিণার বিলে জমা হয়। পরবর্তীতে ওই পানি মুক্তেশ্বরী নদীতে গিয়ে পড়ে। পানি নেমে যাওয়ার পর মানুষ এখানে চাষাবাদ করে। আর যে পানি থেকে যায় সেটুকু দিয়েও তারা কৃষি কাজ করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে নির্মিত হওয়া মাছের ঘেরের কারণে যে অবস্থা বিরাজ করছে; এতে করে আগামী বর্ষা মৌসুমে বিলের পানি নদীতে যাবার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

তাদের আশঙ্কা, নতুন করে এ দুটি মৎস্য ঘের তৈরি হলে এলাকার অন্তত ৫টি গ্রাম তলিয়ে যাবে। বাড়ি-ঘর ছাড়া হবে হাজার হাজার মানুষ।  কৃষি জমি কমে যাবে। এছাড়া কমপক্ষে এক হাজার একর কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। মানুষ বেকার হয়ে যাবে।

স্থানীয়রা জানান, ওই দুই প্রভাবশালী এখানে কিছু জমি লিজে নিয়ে ও কিছু জমি ক্রয় করে মৎস্য ঘের তৈরি করছেন। এছাড়া ঘেরের পাশে যাদের জমি আছে তাদের জমি ঘের নির্মাণে দেওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগেরও অভিযোগ উঠেছে।
 

 

তারা জানান, কৃষি জমিতে মৎস্য ঘের তৈরি করতে হলে সরকারের অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এই প্রভাবশালী মহলটি এতই ক্ষমতাশালী যে তারা আইনের তোয়াক্কা না করেই মৎস্য ঘের করে চলেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ রেজায়ে রাব্বি বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানিনা। তবে এলাকাবাসির সমস্যা সৃষ্টি করে কোন কাজ করা যাবে না। কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মাছের ঘের নির্মাতা সাহাঙ্গীর বাঙালকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘যে জমিতে ঘের হচ্ছে সে জমিতে একবার ফসল হয়। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে পানি বের হওয়ার পথ আছে।’

ঘের করতে অনুমতি নিতে হয় এবিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান।

ঘেরের অপর নির্মাতা মফিজুর গোলদার জানান, তিনি প্রায় ৪৫ বিঘা জমির উপর ঘের তৈরি করছেন। কিছু জমি তার নিজের আর কিছু জমি লিজ নিয়েছেন। এ জমিতে বছরে একবার ফসল হয়।

তিনি জানান, এখানে ঘের করলে পানি বের হবার কোন সমস্যা নেই। বর্ষ মৌসুমে পানি বের হবার ব্যবস্থা তিনি করেছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি ছাড়া এখানে অপরিকল্পিতভাবে ফসলি জমিতে আরো ঘের করা হচ্ছে। চাচড়া এলাকার নিরিবিলি হ্যাচারির মালিকসহ বেশ কয়েকজন অপরিকল্পিত ভাবে ঘের করছে।’




রাইজিংবিডি/ যশোর/৩১ জানুয়ারি ২০১৯/বিএম ফারুক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়