ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দুর্বোধ্য টি-টোয়েন্টি ও বাংলাদেশ!

শচীন বর্মণ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৭, ৫ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুর্বোধ্য টি-টোয়েন্টি ও বাংলাদেশ!

শচীন বর্মণ : প্রভাতের লাল টুকটুকে সূর্য সব সময়ই উজ্জ্বল দিনের পূর্বাভাস দেয় না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের আবির্ভাব হয়েছিল এক রক্তিম সূর্য্যের মতো। শুরুর স্মৃতিতে হাত বোলালে এখনো স্বত্বির পরশ অনুভূত হয়।

 

১০ বছর আগে ২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেকের প্রথম চার ম্যাচের তিনটিতে জিতেছিল বাংলাদেশ। ক্রিকেট ভক্ত থেকে শুরু করে ক্রিকেট বোদ্ধারা সবাই মনে করেছিলেন, এই বুঝি বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার প্রিয় ফরম্যাট পেয়ে গেল।

 

কেউ কেউ দাবি তোলা শুরু করলেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের আরো বেশি ম্যাচ খেলা উচিত। তবে অতি উচ্ছ্বাস মিলিয়ে যেতে মোটেও সময় নেয়নি। পরের টানা ১২টি ম্যাচে হার। এই সময়টা কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকলেই হয়তো বেশি স্বস্তি পাওয়া যাবে।

 

টি-টোয়েন্টি আজও বুঝে উঠতে পারেননি টাইগাররা। সময়ের সঙ্গে আরো বেশি দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে কুড়ি/বিশের ফরম্যাট। ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে ভালো করার সবচেয়ে বড় কাজগুলোও হাতে নিয়ে সফল হওয়ার পথ মিলছে না।

 

টি-টোয়েন্টি যতটা না ক্রিকেট তার চেয়ে বেশি বিনোদন। এখানে মাস্তি ভরা ক্রিকেটের বৃষ্টিতে ভেজার উপচেপড়া আনন্দ। আমাদের দেশের মতো যারা একটু দেরিতে ক্রিকেটটা গিলতে শিখেছে তাদের কাছে এই ফরম্যাটটাই বেশি জনপ্রিয়। আম-জনতা এখানেই মেতে থাকতে চায়। একের পর এক হতাশার ভেলায় মঙ্গলবার নেপিয়ারে আরো একটি হার যাত্রী হয়েছে বাংলাদেশের। তবে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে টাইগারদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য একের পর এক পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১২ জন ক্রিকেটারের অভিষেক করিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি এক ম্যাচে তিন ক্রিকেটারেরও অভিষেক হয়েছে। বিশেষ করে হাথুরুসিংহেই এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। হঠাৎ করে কারও ব্যাটিং তার মনে ধরলে তাকে নিয়েই নাড়াচাড়া করার চেষ্টা করেন। শেষ দুই বছরে মুস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার ও নুরুল হাসান ছাড়া দল চলতে পারবে এমন কাউকে পায়নি নির্বাচকরা। আসল কথা হলো, যে জায়গাগুলোর জন্য লড়াই সেখানেই কাউকে পাচ্ছেন না কোচ!

 

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে জিততে হলে ছয় ও সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্রুত রান তুলতে পারেন এমন খেলোয়াড়ের প্রয়োজন। তিনি যদি অলরাউন্ডার হন তাহলে আরো ভালো। কিন্তু হার্ডহিটারই তো খুঁজে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এই দু’বছরে অভিষিক্তদের সঙ্গে পুরনো ক্রিকেটারদের নিয়েও ঝালানোর প্রায়াস চলেছে। হার্ডহিটার না পাওয়ার পেছনে কন্ডিশনও অনেকটাই দায়ী বলে ধারণা করেন প্রাক্তন ক্রিকেটাররা।

 

অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা প্রায় সময়ই একটি কথা বলেন, ‘সাত নম্বরে একজন হার্ডহিটার দরকার। সঙ্গে ভালো বোলিং করতে পারে এমন খেলোয়াড় পেলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দল অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে যেত।’ জিয়াউর রহমান, মুক্তার আলী ও শুভাগত হোমের মধ্যে থেকে এমনই কোনো একজনকে বেরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন নির্বাচকরা। কিন্তু কাররই ব্যাটিং উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি। জিয়াউর ও মুক্তার পরিকল্পনা থেকে বাদ গেছেন আগেই। শুভাগত এখন দলের সঙ্গে চলছেন অফ-স্পিনার হিসেবে।

 

মুশফিকুর রহিমের চোটের কারণে সুযোগ পাওয়া নুরুল হাসান সোহানকে মঙ্গলবার নেপিয়ারে ব্যাটিংয়ে নামানো হয় নয় নম্বরে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের হার ছয় উইকেটে। কিউইদের বিপক্ষে ৬ ও ৮ জানুয়ারি বাকি দুটি ওয়ানডে ম্যাচেও যে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশকে এটা বোঝার জন্য ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন হয় না। 

 

২০ ওভারের ম্যাচে জয়ের জন্য বাংলাদেশ এখনো তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি মুর্তজার ওপরই নির্ভরশীল। সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান ও মুস্তাফিজুর রহমানরা দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল নির্বাচক দলে। কিন্তু ফর্ম ধারাবাহিকতায় না থাকায় ম্যাচ জয়ের জন্য যথেষ্ট হচ্ছে না।

 

ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটের বর্তমান সাফল্য বাংলাদেশকে বড় দলের কাতারে নিয়ে গেছে। সেখানে সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেট দিচ্ছে বড় ব্যর্থতা। এমনকি এই ক্রিকেটে র‌্যাংকিংয়ে সহযোগি দেশ আফগানিস্তানের চেয়েও নিচে টাইগাররা। সাফল্য ধরার ধারাবাহিক চেষ্টা অব্যাহতই থাকবে বাংলাদেশের। ওয়ানডে সাফল্যের মতো একদিন টি-টোয়েন্টিও মিলবে সাফল্যের মন্ত্র। এমন আশাতেই ক্রিকেট পাগল দেশটির এগিয়ে চলাও চলতে থাকবে...।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জানুয়ারি ২০১৭/ শচীন বর্মণ/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়