ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দেবহাটায় ইছামতির বেড়িবাঁধে ভাঙন : আতঙ্কে এলাকাবাসী

এম.শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ২৪ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেবহাটায় ইছামতির বেড়িবাঁধে ভাঙন : আতঙ্কে এলাকাবাসী

দেবহাটায় ইছামতির বেড়িবাঁধে ভাঙন। ছবি : এম শাহীন গোলদার

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ভারত-বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত নদী ইছামতির কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামবাসী। বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে সামান্য কিছু অংশ বাকি আছে। সহায়-সম্পদ রক্ষার জন্য তাদের খাওয়া-ঘুম প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, নাংলা, ছুটিপুর, ঘোনাপাড়সহ কয়েকটি গ্রাম ইছামতি নদীর পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। নষ্ট হতে পারে ফসলি জমি, প্রাণহানি ঘটতে পারে মানুষসহ সম্পদের। পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আতঙ্ক আরও বেড়ে চলেছে। অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ এবং গুটিকয়েক মানুষের ঠেলা জাল নদীতে ফেলার কারণে দেবহাটা উপজেলার চরকোমরপুর, ভাতশালা, টাউনশ্রীপুর, সুশীলগাতী, শীবনগর ও নাংলাসহ কয়েকটি স্থানের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছরে যে সামান্য পরিমাণের কাজ করা হয়েছিল সেসব স্থান ছাড়াও নতুন নতুন স্থানে আবারো ভাঙন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় ঘের মালিক লাভলু বিশ্বাস ও এনামুল হক জানান, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদীর পাড় থেকে বালু তোলার কারণে নদীর বাঁধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে উপজেলার সুশীলগাতি এলাকায় মেশিনের সাহায্যে বালু তোলা হচ্ছে। বড় কোনো জোয়ার বা বৃষ্টি হলেই বেড়িবাঁধগুলো যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে।

দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলোর মধ্যে রয়েছে নাংলা ছুটিপুর, সুশীলগাতী এলাকার বিজিবি পোস্টের সামনে, টাউনশ্রীপুর ও ভাতশালা। বাঁধ ভেঙে গেলে দেশের কোটি টাকার সম্পদ যেমন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে তেমনি অসংখ্য প্রাণহানি ঘটারও আশঙ্কা আছে। তাছাড়া ভাতশালা থেকে খানজিয়া পর্যন্ত বালু ব্যবসায়ীরা ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলন করছে। কিন্তু বালু ব্যবসায়ীদের এ কাজ বন্ধ করার মতো কেউ যেন নেই। পাউবো মাঝে মাঝে সংস্কার কাজ করে। কিন্তু সেটাও নামমাত্র। তার মধ্যে এভাবে প্রকাশ্যে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও নদীর মাটি কেটে নিলেও প্রশাসন নীরব।

চিংড়ি চাষীরা খেয়াল খুশিমতো মূলবাঁধের গা-ঘেঁষে ছোট বাঁধ দিয়ে মূলবাঁধের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। বেড়িবাঁধের গা-ঘেঁষে পোনা ধরা এবং বালু তোলার কারণে বাঁধগুলো ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের শীবনগরের পাশে রাজনগর মৌজা ইছামতির গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লাভলু বিশ্বাস জানান, নাংলা এলাকার বেড়িবাঁধটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু অনেক দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। দেবহাটা উপজেলা নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান জানান, নাংলা ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক। বিষয়টি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে কিন্তু তারা এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

কালীগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (এসও) ওবায়দুল হক মল্লিক জানান, নাংলা এলাকার বাঁধ সংস্কারে এবং পাকা ব্লক দেওয়ার জন্য প্রজেক্ট দেওয়া আছে। বাজেট পাওয়া গেলেই কাজ শুরু করা হবে।

দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ-আল আসাদ জানান, ইতোমধ্যে বেড়িবাঁধ সংস্কারের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। খুব দ্রুত নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশের ভূখণ্ড রক্ষা করা হবে।



রাইজিংবিডি/সাতক্ষীরা/২৪ জুন ২০১৮/এম.শাহীন গোলদার/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়