ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

রফিক মুয়াজ্জিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ২৬ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

রাইজিংবিডি ডেস্ক : দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে শিশু-কিশোরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা জেলা প্রশাসন এ সমাবেশের আয়োজন করে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। আজকের শিশুদের মধ্যেই কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে, বড় বড় চাকরি করবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে ভালবেসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ে তুলবে।’

দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানকারী সকল শিশুর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে তোমাদেরকেই। তোমরাই গড়ে তুলবে আগামী দিনের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ একটি দেশ। আমরাই জাতির পিতার এই স্বপ্ন পূরণ করব।

তিনি শিশুদের দোয়া ও আশির্বাদ জানিয়ে বলেন, ‘তোমরা বাবা-মার কথা শুনবে, শিক্ষকদের কথা শুনবে, নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলবে, সুন্দরভাবে জীবন যাপন করবে- সেটাই আমরা কামনা করি।’

শেখ হাসিনা সন্ত্রাস, মাদক এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনরুল্লেখ করে বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের হাত থেকে আমরা দেশকে মুক্ত করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শিশু-কিশোর, অভিভাবক, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দসহ সকলকে আহ্বান জানাব- মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে আমাদের শিশুদের জানাতে হবে এবং এর হাত থেকে শিশু-কিশোরদের রক্ষা করতে হবে।

এ সময় তিনি কার সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, বিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সে নিয়মিত কি না এসব বিষয়ে লক্ষ রাখার জন্য অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।



প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দেশব্যাপী স্কুল পর্যায়ে অনুষ্ঠিত শুদ্ধ সুরে জাতীয় সঙ্গীত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক এই তিন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ৯০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরে বলেন, সোনামণিরা, আজকে আমাদের স্বাধীনতা দিবস। দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা।

তিনি বলেন, স্বাধীন দেশে প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং একটি উন্নত জীবন পাবে, এটাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন। আজকে আমরা একটি লাল-সবুজ পতাকা পেয়েছি, একটা দেশ পেয়েছি, একটা জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি। এই মর্যাদাকে আরো উন্নত করাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য।

শিশু বয়স থেকে জনগণের কল্যাণে জাতির পিতা ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ, এ কথা উল্লেখ করে মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার সংগ্রামী ভূমিকার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার আদায়ে সেই ১৯৪৮ সাল থেকে তিনি যে যাত্রা শুরু করেছিলেন সেটাই ’৭১ সালে তার নেতৃত্বে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করার মধ্য দিয়ে একটি সফল পরিণতি লাভ করে।

দেশ স্বাধীন হবার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেয়ার লক্ষ্যে সেই সময় থেকেই জাতির পিতার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের চুম্বক অংশ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার দেশ স্বাধীনের লক্ষ্য ছিল এদেশের প্রতিটি শিশু শিক্ষা গ্রহণ করবে, প্রতিটি নাগরিক সুশিক্ষিত হবে। দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে উঠবে এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, যখনই জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে উন্নয়নের পথে ধাবিত করা শুরু করেন, দুর্ভাগ্যক্রমে তখনই ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের কালরাতে তাকে সপরিবারে নির্মমভবে হত্যা করা হয়।

এই হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে বাংলদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়, উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র এবং অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। মানুষের বেঁচে থাকার এবং প্রতিরাতে কারফিউ দিয়ে কথা বলার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, এরপর দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ আবার যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে, ঠিক তখন থেকেই পুনরায় উন্নয়নের অভিযাত্রা শুরু হয়।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়কে দেশের জন্য স্বর্ণযুগ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিলাম, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিলাম।’

পুনরায় ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে এ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনায় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত করেছি। দারিদ্র্যের হার, শিশু মৃত্যু, মাতৃমৃত্যুহার আমরা কমাতে পেরেছি।



প্রধানমন্ত্রী এ সময় বছরের শুরুতে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনা পয়সায় পাঠ্যপুস্তক বিতরণসহ শিক্ষা সম্প্রসারণে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সরকার বৃত্তি প্রদান করছে, যেন দরিদ্র ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ লাভ করতে পারে।

শিশু-কিশোরদের মেধা ও মনন গঠনে শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, শরীরচর্চা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকে অপরিহার্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে আমাদের জন্য শিশু অধিকার আইন করে দিয়ে যান। এরই আলোকে আমরা নীতিমালা গ্রহণ করেছি এবং শিশুদের জন্য শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিচ্ছি।

সরকার দুস্থ মহিলা ও শিশুকল্যাণ তহবিল নামে একটি তহবিল গড়ে তুলে দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণসহ সারা দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া, কম্পিউটার শিক্ষা এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুমসহ দেশকে ডিজিটালাইজড করে গড়ে তোলায় তার সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের সন্তানরা যাতে আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে তার পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা ২০২০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত সময়কে মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। আমরা এই সময়টাকে এমনভাবে কাজে লাগাতে চাই যেন বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে ওঠে।

বক্তব্যের শেষদিকে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার পঙ্‌ক্তি উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, যতক্ষণ এ দেহে আছে প্রাণ/ প্রাণপণে এ পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল/ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

সমাবেশ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্যবলী দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়।

এর আগে সকাল ৮টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী কোমলমতি শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন।

কুচকাওয়াজের পর শিশু-কিশোর সমাবেশে এবারের থিম সং ‘নোঙর তোল তোল’ পরিবেশিত হয়। এ সময় একটি দৃষ্টিনন্দন নৌকা স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে চারপাশে ঘুরে বেড়ায় এবং এর সঙ্গে গাড়িবহরের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়।

প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ডিসপ্লে উপভোগ করেন।

এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যসূত্র : বাসস

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মার্চ ২০১৯/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়